সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর চিন্তন দক্ষতার চারটি স্তর মূল্যায়ন করা । চারটি স্তর হলো- জ্ঞান , অনুধাবন , প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা । শিক্ষার্থীর এ চারটি স্তরকে মূল্যায়নের জন্যে দুই ধরনের প্রশ্ন হয়ে থাকে , যথা- সৃজনশীল ( রচনামূলক ) প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি প্রশ্ন । এখন আমরা সৃজনশীল ( রচনামূলক ) ও বহুনির্বাচনি প্রশ্ন বিষয়ে কিছু তথ্য জেনে নেব ।
সৃজনশীল ( রচনামূলক ) প্রশ্ন
সৃজনশীল ( রচনামূলক ) প্রশ্ন কাঠামোতে প্রথমে একটি উদ্দীপক / দৃশ্যকল্প থাকে । উদ্দীপকের ওপর ভিত্তি করে চিন্তন দক্ষতার চারটি স্তরের প্রশ্ন করা হয় । এখন আমরা পর্যায়ক্রমে উদ্দীপক , প্রশ্ন কাঠামো ও চিন্তন দক্ষতার স্তরগুলো সম্পর্কে জানব-
উদ্দীপক / দৃশ্যকল্প হচ্ছে পাঠ্য বিষয়ের আলোকে তৈরি একটি বাস্তব পরিস্থিতি । এটি কখনও কখনও অনুচ্ছেদ , মানচিত্র , সারণি , ডায়াগ্রাম , চিত্র , ছবি , উদ্ধৃতি , মন্তব্য ইত্যাদিও হতে পারে । সাধারণত উদ্দীপকটি হয় মৌলিক , সম্পূর্ণ নতুন এবং বাস্তব জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত । সৃজনশীল প্রশ্নটি কতটুকু মানসম্পন্ন হলো তা মূলত উদ্দীপকের মানের ওপরই নির্ভর করে । প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা স্তরের প্রশ্নের উত্তর করার ক্ষেত্রে যাতে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই উদ্দীপকের সাহায্য নিতে হয়, প্রশ্ন দুটি সেভাবেই করা হয় । সহজভাবে বলা যায় উদ্দীপকটি ঢেকে রেখে যদি প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা অংশের উত্তর করা যায় তবে বুঝতে হবে উদ্দীপকটি সঠিকভাবে প্রণীত হয় নি ।
‘ ক ’ নম্বর প্রশ্নটি জ্ঞানমূলক । পাঠ্য বইয়ে স্পষ্ট উল্লেখ আছে ও মুখস্থ রাখা যায় এ রকম তথ্য থেকে এ প্রশ্নটি তৈরি করা হয় । এই প্রশ্নের উত্তরের মান ১।
‘ খ ’ নম্বর প্রশ্নটি অনুধাবনমূলক । পাঠ্য বইয়ের বিষয়গুলো শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো বুঝেছে কি না তা এ প্রশ্নের মাধ্যমে যাচাই করা হয় । এই প্রশ্নের উত্তরের মান ২ ।
‘ গ ’ নম্বর প্রশ্নটি প্রয়োগমূলক । পাঠ্য বইয়ে পড়া বিষয়গুলোর ইংগিত উদ্দীপকে থাকে । সে ইঙ্গিতের আলোকে শিক্ষার্থীদের বুঝে নিতে হয় পাঠ্যবইয়ের কোন বিষয় থেকে প্রশ্নটি করা হয়েছে । উদ্দীপকের পরিস্থিতি ও পাঠ্য বিষয়ের জ্ঞানের আলোকে এ স্তরের উত্তর করতে হয় । এই প্রশ্নের উত্তরের মান ৩ ।
‘ ঘ ’ নম্বর প্রশ্নটি উচ্চতর দক্ষতামূলক । এ প্রশ্নটিও উদ্দীপক ও পাঠ্য বিষয়ের সমন্বয়ে করা হয় । এ স্তরে পাঠ্য বিষয়ের তথ্য ও নিজস্ব চিন্তা - চেতনা যাচাই করা হয় । বিশ্লেষণ করো , যাচাই করো , মূল্যায়ন করো , বিচার করো , যথার্থতা নিরূপণ করো , সার্থকতা নিরূপণ করো , বিচার - বিশ্লেষণ করো , তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো , যুক্তিসহ উত্তর দাও , মতামত দাও ইত্যাদি শব্দগুচ্ছের মাধ্যমে এ ধরনের প্রশ্নগুলো করা হয় । উদ্দীপকের পরিস্থিতি , পাঠ্য বিষয়ের জ্ঞান ও নিজস্ব চিন্তা - চেতনার আলোকে এ স্তরের উত্তর করতে হয় । উত্তরের মান ৪ ।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
কাঠামোগত দিক থেকে বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ৩ ধরনের হয়ে থাকে । এগুলো হলো- ১. সাধারণ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ( Simple Multiple Choice Question ) ; ২. বহুপদী সমাপ্তিসূচক প্রশ্ন ( Multiple Completion Question ) ; ৩. অভিন্ন তথ্যভিত্তিক প্রশ্ন ( Situation Set Question ); প্রতিটি বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তরের মান ১ ।
সৃজনশীল প্রশ্নের মতো জ্ঞান , অনুধাবন , প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা- এ চারটি বহুনির্বাচনি প্রশ্নের মধ্যে জ্ঞান স্তরের ৪০ % ; অনুধাবন স্তরের ৩০ % ; প্রয়োগ সাধারণত স্তরের ২০ % এবং উচ্চতর দক্ষতা স্তরের ১০ % প্রশ্ন করা হয় ।
সাধারণ বহুনির্বাচনি প্রশ্নগুলো প্রশ্নবোধক বাক্যের আকারে হয়ে থাকে । অসমাপ্ত বাক্য দিয়েও করা যাবে । অসমাপ্ত বাক্য দিয়ে প্রশ্ন করা হলে নিম্নোক্ত বিকল্প উত্তর যোগ করলে বাক্য সম্পূর্ণ হতে হবে । প্রতিটি প্রশ্নের চারটি বিকল্প উত্তর থাকে , যার মধ্যে একটিই সঠিক উত্তর থাকে ।
বহুপদী সমাপ্তিসূচক প্রশ্নগুলো সবসময় অসম্পূর্ণ বাক্যের আকারে থাকে , অর্থাৎ এ প্রশ্নের শেষে কখনও প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয় না । এ ধরনের প্রশ্নে শুধু অনুধাবন , প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা স্তরের প্রশ্ন করা হয় । রোমান সংখ্যা দিয়ে সজ্জিত বিকল্প উত্তরগুলোর মধ্যে এক বা একাধিক সঠিক উত্তর থাকে ।
অভিন্ন তথ্যভিত্তিক প্রশ্নের ক্ষেত্রে একটি উদ্দীপকের ওপর ভিত্তি করে একাধিক প্রশ্ন তৈরি করা হয় । এ জাতীয় প্রশ্নে সাধারণ বহুনির্বাচনি বা বহুপদী সমাপ্তিসূচক যেকোনো রকমের প্রশ্নই হতে পারে । অভিন্ন তথ্যভিত্তিক প্রশ্নে জ্ঞান স্তরের প্রশ্ন থাকে না এবং উদ্দীপকের সাহায্য ছাড়া প্রশ্নগুলোর উত্তর করা যায় না ।