-->

গরমে ত্বকের যত্ন | গরমে ত্বকের যত্ন সতর্কতা | গরমে ত্বকের যত্ন করণীয়

ত্বকের যত্নে আজকাল আমরা অনেক সচেতন। নিজের ত্বক কিভাবে ভাল থাকবে তা নিয়ে চিন্তার যেন শেষ নাই। গরম বা শীত সব সময় ত্বকের যত্ন নিতে হবে।

অনেকেরই ধারণা, বুড়ো হলেই কেবল ত্বকে ভাঁজ পড়ে। কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়। অনেক সময় অল্প বয়সীদেরও ত্বকে ভাঁজ পড়তে পারে। এর কারণ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি। এ রশ্মির জন্য ত্বক বিবর্ণ হওয়া থেকে শুরু করে ত্বকের ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। এর প্রভাবে ত্বকের কোষগুলো মরে যায়, এবং ত্বক স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য হারায়। তাই এই তীব্র গরমে ও প্রখর রোদে ত্বকের যত্নে একটু সতর্কতার প্রয়োজন।

গরমে ত্বকের যত্ন  | গরমে ত্বকের যত্ন সতর্কতা | গরমে ত্বকের যত্ন করণীয়

আজ আপনাদের গরমে ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।

গরমে ত্বকের যত্ন করণীয়

ত্বক তরতাজা ও উজ্জ্বল রাখতে অতিরিক্ত সূর্যরশ্মি এড়িয়ে চলতে হবে। এ জন্য বাইরে বের হলে ছাতা বা বড় কিনারাযুক্ত টুপি ব্যবহার করতে হবে। এছাড় ছাতা টুপির পরিবর্তে উৎকৃষ্ট মানের সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।

সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম কেবল সূর্যের ‘বি’ অতিবেগুনি রশ্মিই প্রতিহত করতে সক্ষম। মনে রাখবেন, সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর ১৫ থেকে ৩০-এর মধ্যে থাকা লোশন ব্যবহার করা ভালো।

বর্ষা ও গরমকালে দিনে দুবার গোসল করুন। ক্ষারমুক্ত সাবান ব্যবহার করুন। এ ক্ষেত্রে ভালো কোনো বেবি সোপ বা গ্লিসারিন সাবান ব্যবহার করা ভালো।

ত্বক বেশি শুষ্ক হলেও খারাপ। তাই ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষায় প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা দরকার। পাশাপাশি লেবুপানি পান করুন।

ভেজা কাপড় পরে থাকলে ত্বকে দাদ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই ঘামে ভেজা কাপড় পাল্টে শুষ্ক ও পাতলা কাপড় পরে নিতে হবে।

ত্বক ভালো রাখতে ভিটামিন ‘এ’-যুক্ত খাবার শীত কিংবা গ্রীষ্ম সব সময়ই খাওয়া উচিত।

গরমে ত্বকের যত্ন সতর্কতা

গোসলের পর শরীরের ভাঁজগুলোয় যেন পানি জমে না থাকে, সে ব্যাপারে সচেষ্ট হোন। এসব স্থান ভেজা থাকলে সহজে ছত্রাক জন্মায়। ভাঁজযুক্ত স্থানে পাউডার ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ পাউডারের সঙ্গে ঘাম মিশে ভেজা স্যাঁতসেঁতে অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে, যা ছত্রাক জন্মানোর পক্ষে আরও সহায়ক হতে পারে।গরমকালে তেল ব্যবহার না করাই ভালো।

গরমে ত্বকের সুরক্ষায় যা যা করতে পারেন?

ত্বক, চুল- সব যদি ঠিক থাকে তবেই কিন্তু শরীর ভাল থাকবে। আজকাল মানসিক চাপ, কর্মক্ষেত্রে চাপ সকলেরই রয়েছে। ঠিক সময়ে খাওয়া, ঘুম, শরীরচর্চা কোনওটাই হয় না। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদেরই সচেতন হতে হবে।

ত্বক আমাদের শরীরচর্চার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই ত্বককে যতটা সম্ভব সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করুন। ত্বকের উপর বিভিন্ন হরমোনের প্রভাব পড়ে। এমনকী রোজকার জীবনের সমস্যা, দূষণ-সব কিছুই প্রভাব ফেলে আমাদের শরীরে।

গরমে বাড়ে যে কোনও ত্বকের সমস্যা। রোদে পোড়া কালো দাগ, ছোপ, ব্ল্যাক হেডস,পিম্পল এসব নানা সমস্যা বাড়ে গরমে। আর তাই গরমে ত্বকের সুরক্ষায় যা যা করতে পারি আমরা –

 ১। ক্লিনজিং মিল্কের ব্যবহার- গরমে ঘাম বেশি হয়। মুখে ধুলো-বালি জমে। তাই বাইরে থেকে ফিরলে তো ভাল করে মুখ ধোবেনই। সেই সঙ্গে বাড়িতে লথাকলেও অন্তত তিবনার মুখ ধুয়ে নিন। স্নানের সময় জলে সামান্য দুধ মিশিয়ে নিন। এতে বাড়বে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য। সেই সঙ্গে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ক্লিনজিং মিল্ক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন। এছাড়াও কাঁচা দুধ, লেবুর রস আর মধু একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। তাই দিয়েও মুখ ধুয়ে নিতে পারেন। দুধ ত্বকের Ph ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। দুধ আর হলুদ একসঙ্গে মিশিয়ে মাখলে যে কোনও ব্যাকটেরিয়ার প্রকোপ থেকে ত্বক রক্ষা পায়।

২। ময়েশ্চারাইজের ব্যবহার- শুধু যে শীতের দিনেই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন তা কিন্তু নয়। গরমের দিনেও ব্যবহার করুন ময়েশ্চারাইজার। তবে তা যেন মুখে বসে না থাকে। তবে গরমে যে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন না কেন তার গন্ধ যেন ভাল হয়। এই সময় কিন্তু ফ্রেশনেস খুবই জরুরি। তাই ফুলের সুগন্ধ বা যে গন্ধে মন ভাল থাকবে তেমনই কোনও সুগন্ধী বেছে নিন। এতে স্নায়ু শিথিল হবে। চাপও কমবে।

৩। রোল অন ডিও- বগলে ঘাম হয় সবচেয়ে বেশি আর সেখান থেকে কিন্তু দুর্গন্ধও হয়। যে কারণে গরমে অনেক জামায় ওই জায়গায় কালো পানিছোপ দাগ পড়ে যায়। তাই রোল অন ডিও বেছে নিন যাতে অ্যালকোহল একেবারেই নেই। এতে আন্ডারআর্ম আরাম পায়, সেই সঙ্গে গন্ধ দূর হয় এবং ব্যাকটেরিয়াও থাকে নিয়ন্ত্রণে।

৪। সানস্ক্রিনের ব্যবহার- গরমে সানস্ক্রিন তো অবশ্যই ব্যবহার করবেন। সেই সঙ্গে চেষ্টা করুন অ্যালোভেরা রয়েছে এমন কিছু ব্যবহার করতে। সানস্ক্রিন লোশনের সঙ্গে অ্যালোভেরা মিশিয়ে নিতে পারেন,সেই সঙ্গে SPF-15 যুক্ত অ্যালোভেরা জেলও ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরা আমাদের ত্বককে আর্দ্র রাখে। সেই সঙ্গে ত্বকের গভীরে গিয়ে ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও ত্বককে রক্ষা করে।

৫। শাওয়ার জেল ব্যবহার করুন- সাবান আমাদের ত্বককে বেশি রুক্ষ্ম করে দেয়। তাই এর পরিবর্তে সুন্দর গন্ধযুক্ত শাওয়ার জেল ব্যবহার করুন। এতে ত্বক সতেজ ও নরম থাকবে। অতিরিক্ত ময়লা, মৃত কোশ, ঘাম, তেল সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। লেবু, ওয়াটারলিলি বা ল্যাভেন্ডারের গন্ধযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারলে কিন্তু সবচাইতে ভাল।

গরমে ত্বকের যত্নে কিছু উপায়

১। গরমে চোখের নিচের কালচে দাগ দূর করতে রোজ রাতে ঘুমানোর আগে আলুর রস তুলায় লাগিয়ে চোখের কালচে অংশে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে নিন।

২। গরমে সবসময় ত্বক পরিষ্কার রাখতে চেষ্টা করতে হবে। বাইরে থেকে এসে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ভালোমানের কোনো টোনার ব্যবহার করুন। টোনারটিতে অ্যালকোহলের মাত্রা দেখে নিন। টোনার ত্বকের তৈলাক্ততা কমায়।

৩। ব্যবহার করুন ফেস সিরাম। দিনে ব্যবহার করতে হবে ‘ডে ক্রিম’ আর রাতে ব্যবহার করুন ‘নাইট ক্রিম’।

৪। ত্বকে এ গরমে লালচে ভাব দূর করতে আইস থেরাপি বা বরফ দিয়ে মাসাজ করা যায়, এতে ক্লান্তি দূর হয়ে ত্বক সতেজ হয়ে উঠবে।

৫। রোদে ত্বক পুড়ে কালচে বা তামাটে হয়ে যেতে পারে। তাই এখন রোদে বের হওয়ার আগে মুখ-হাত-পা এবং শরীরের অন্য খোলা অংশে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। দীর্ঘসময় বাইরে থাকতে হলে ২-৩ ঘণ্টা পর মুখ ধুয়ে নতুন করে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন। ওয়াটার প্রুফ সানস্ক্রিনও ব্যবহার করতে পারেন। লক্ষ রাখুন সানস্ক্রিনে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর এসপিএফ যেন ১৫ কিংবা তার ঊর্ধ্বে হয়।

৬। গরমে ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়। এ তৈলাক্ত ভাব দূর করতে টমেটো এবং শসা ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করলেই দারুণ ফল পাওয়া যাবে। টমেটো এবং শসা আলাদা আলাদা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে ছেঁকে বরফ জমানো পাত্রে বরফের মতো জমিয়ে নিন। এরপর সপ্তাহে ৪-৫ দিন শসার কিউব এবং টমেটোর কিউব মুখে আলতো করে ঘষে নিন। টমেটো হলো ন্যাচারাল ব্লিচ যা ত্বক উজ্জ্বল করে এবং ত্বকের বাড়তি তেল শুষে নিয়ে ব্লাক হেডস এবং ব্রণ দূরে রাখে। আর শসা ত্বক পরিষ্কার ও কোমল রাখবে।’

সাধারণত ত্বকের সতেজতা, উজ্জ্বলতা এবং ময়লা পরিষ্কারের জন্য নিয়মিত ফেসিয়াল করা উচিত। তবে গরমে ত্বকের যত্নে ফেসিয়াল যেন বাধ্যতামূলক। তাই বলে যেনতেন ফেসিয়াল নয়। গরমে ত্বক সতেজ ও সুস্থ রাখতে উপযোগী ফেসিয়াল হচ্ছে নিম, অ্যালোভেরা, গোল্ড, স্পার সঙ্গে করতে পারেন ফ্রুটস ফেসিয়ালও।

See Also :