শৈবাল দীঘিরে বলে উচ্চ করি শির ,
লিখে রেখ এক ফোঁটা দিলেম শিশির ।
মূলভাব: সংকীর্ণ হৃদয়ের অধিকারীরাই তুচ্ছ উপকারের জন্য আত্মগৌরব অনুভব করতে চায় এবং সামান্য উপকারের দৃষ্টান্তকে বড় বলে তলে ধরতে চায় ।
সম্প্রসারিত ভাব: দীঘির জলরাশি থেকেই শৈবালের জন্ম । সেই শৈবালে রাতের বেলায় শিশির পড়ে এবং শিশিরের ফোঁটা গড়িয়ে পড়ে দীঘির জলে । এই শিশিরের পরিমাণ এত সামান্য ও নগণ্য যে , তা দিয়ে দীঘির জল বৃদ্ধি হয় না । কিন্তু শৈবাল তার সেই সামান্য দানের কথা অত্যন্ত সোচ্চার কন্ঠে প্রকাশ করে এবং যে দীঘির জলে তার জন্ম ও বৃদ্ধি সেই দীঘিকেই এক ফোঁটা শিশির দানের জন্য তাকে তার কাছে ঋণী বলে মনে করে এবং সে স্ফীত হয়ে উঠে অসীম অহঙ্কারে । এই পৃথিবীতে যাঁরা মহানুভব , সদাশয় ব্যক্তি , তাঁদের নীরব দানে পৃথিবীর নিঃষ , অভাবগ্রস্তরা নিত্য উপকৃত হয় । সেসব মহানুভব সদাশয় ব্যক্তি সমাজের প্রকৃত বন্ধু , পৃথিবীর স্মরণীয় ও বরণীয় মানুষ , মানবতার আশা - ভরসার স্থল । জীবনসংকটে বিপন্ন অসহায় মানুষ তাঁদের কাছে এসে দাঁড়ায় সাহায্যের প্রার্থনায় । আর সেসব সর্বত্যাগী মহামানবেরা তাঁদের জীবন তিলে তিলে দান করে বিপন্নকে করেন উদ্ধার এবং মানবতার সেবায় রাখেন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । কিন্তু তাঁদের সেই দান নীরব দান । সেই দানে থাকে না কোনো অহঙ্কার , থাকে না আত্মপ্রচারের বড়াই , থাকে না বিনিময়ে উপকার লাভের কোনো প্রত্যাশা । কিন্তু মানব - চরিত্র বড়ই বিচিত্র । সেই মহান উদার - হৃদয় ব্যক্তিদের নীরব দানের বিনিময়ে সামান্য উপকার করে কোনো কোনো ক্ষুদ্রচেতা ব্যক্তি অসামান্য অহঙ্কারে হয়ে উঠে স্ফীত । তাদের ঢাকের চোটে গগন ফাটে । কিন্তু এই আত্মপ্রচার ও আত্মঘোষণার হাস্যকর নিস্ফলতা প্রমাণ হতে অধিক সময়ের প্রয়োজন হয় না।
মন্তব্য: মহৎ ও উদার প্রাণের ব্যক্তিগণ পরোপকারে কখনো গর্ববোধ করেন না । পরোপকারের মাঝেই তাঁরা আত্মতৃপ্তি লাভ করেন ।