যত বড় হোক ইন্দ্ৰধনু , সে সুদূর আকাশে আঁকা ,
আমি ভালবাসি মোর ধরণীর প্রজাপতিটির পাখা ।
মূলভাব : অধরার প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরন্তন । কিন্তু সুদূরের অতুলনীয় সৌন্দর্যের চেয়ে জীবনের খুব কাছাকাছি সহজ উপভোগ্য সাধারণ সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই । কাছের জিনিসকে যতো বেশি আপন করে পাওয়া যায় , সুদূরের সৌন্দর্যের মূল্য যে বেশি , তাতে বতু সেভাবে কাছে টানা যায় না । দূরের স্বপ্নিল সৌন্দর্যের চেয়ে কাছের তুচ্ছ বাস্তব অনেক বেশি আকর্ষণীয় ।
সম্প্রসারিত ভাব : বাস্তব আর কল্পনার মধ্যে রয়েছে বিশাল ব্যবধান । দূরের আকাশে অপূর্ব বর্ণের বিচিত্র ছটায় রংধনু দেখা দেয় । তার সৌন্দর্য মানুষের দৃষ্টিকে আকর্ষণ করে । স্বাভাবিকভাবে এ সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের মন আকৃষ্ট হয় ; কিন্তু এ আকর্ষণ উপভোগ্য বলে বিবেচিত হয় না । কেননা বর্ণসুষমায় ইন্দ্রধনু যতই মনোমুগ্ধকর ও দৃষ্টিনন্দন হোক না কেন বাস্তবের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই । জীবনের বাস্তব ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন । বাস্তবের কঠিন মাটিতে পা ফেলে মানুষকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হয় । বাস্তবকে উপেক্ষা করার কোনো অবকাশ নেই । অপরদিকে , ছোট প্রজাপতি তার বিচিত্র রঙের পাখা নিয়ে মানুষের খুব কাছে উড়ে বেড়ায় । মানুষ কাছ থেকে তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে । প্রজাপতি আকারে ছোট হলেও তার আছে রূপবৈচিত্র্য । কাছে থেকে দেখলে তাকে অপরূপ বলে মনে হয় । আর কাছে থাকার জন্য তা মানুষের কাছে সহজে উপভোগ্য হয়ে ওঠে । তেমনি আমাদের সমাজে অনেক লোক আছে যারা অপরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে নিজের আত্মসম্মানবোধ ভুলে যায় । কিন্তু নিজের মধ্যে যে মূল্যবান কিছু একটি আছে তার দিকে তারা নজর দেয় না যা মোটেই উচিত নয় । প্রকৃত সৌন্দর্য প্রেমিক কখনো সুদূরের অলিক সৌন্দর্যের মিথ্যামায়ার মোহাবিষ্ট হয় না । তারা বিশ্ব - প্রকৃতির সৌন্দর্যের অপরূপ - রূপ নিকেতনের মধ্যে আবিষ্কার করেন স্বর্গীয় সৌন্দর্য ।
মন্তব্য : আকাশ - কুসুম কল্পনা পরিহার করে বাস্তব জীবনের স্বপ্ন কল্পনায় বিভোর হওয়া সুখী জীবনের পূর্বশর্ত । দূরের রংধনুর সৌন্দর্যের চেয়ে প্রজাপতির মতো ছোট প্রাণীর সৌন্দর্য বেশি আকর্ষণীয় বিবেচিত হয় । তাই মানুষ দূরের রংধনুর চেয়ে কাছের প্রজাপতিকে বেশি ভালোবাসে । তাই বলা যায় যে , অপরের জিনিসের প্রতি মোহ দেখিয়ে নিজের জিনিসকে তচ্ছজ্ঞান করা মোটেই উচিত নয় ।