সমস্ত পাথর হলে মহামূল্য মণি
মণির কদর কিছু হতনা কখনি ।
মূলভাব : মূল্যবান বস্তু সংখ্যা ও পরিমাণে স্বল্প হয়ে থাকে । মূল্যবান হবার বৈশিষ্ট্যই হলো কোনোকিছুর দুর্লভতা ।
সম্প্রসারিত ভাব : মণি - মাণিক্য মহামূল্যবান বস্তু । এগুলোর ব্যবহারিক মূল্য যাই হোক বস্তুগত মূল্য অপরিসীম । মণি - মাণিক্যের জন্যে মানুষ লালায়িত । মণি - মাণিক্যের জন্যে মানুষের এই সীমাহীন লিপ্সার কারণ এগুলো দুর্লভ । যা কিছু সুলভ তার ব্যবহারিক উপযোগিতা যাই থাক মানুষকে তা আকর্ষণ করে না । প্রকৃতপক্ষে কোনো বস্তু কতখানি দুষ্প্রাপ্য তার ওপরই নির্ভর করে তার মূল্য । বস্তুত মূল্যবান সত্ত্ব আকৃতিতে ছোট ও পরিমাণে নিতান্তই কম হয় । লোহা সভ্যতার ভিত রচনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে কিন্তু তা দুর্লভ নয় । লৌহখনিতে বিপুল আকরিক পাওয়া যায় বলেই আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে সভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে তাকে আশ্রয় করেই । অপরদিকে পাথর প্রকৃতির কোলে অঢেল পরিমাণে পাওয়া যায় এবং এটাও সভ্যতা নির্মাণের হাতিয়ার । লোহার মতো হীরাও খনিতে পাওয়া যায় । লোহার মতো হীরার ব্যবহারিক উপযোগ নেই । তবুও হীরার ছোট্ট একটি দানার মূল্য কাড়ি কাড়ি লোহা বা বিশাল স্তূপ পাথরের মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি । এই মূল্যের অস্বাভাবিকতার মূলে রয়েছে হীরা সহজলভ্য নয় । বহু চেষ্টায় ও বহুশ্রমে কদাচিৎ ছোট্ট হীরকখণ্ড সংগ্রহ করা যায় । হীরা দিয়ে মানুষ অলংকার গড়তে পারে মাত্র । তবুও ছোট্ট হীরকখণ্ডের মূল্য লাখ টাকা । কোনো কারণে যদি পৃথিবীর সব পাথর মণি - মাণিকো পরিণত হতো তাহলে মণির মূল্যও যেমন থাকত না , তেমনি তার থাকত না কদর । সুলভ ও সস্তা বস্তুর প্রতি মানুষের আকর্ষণ থাকে না অনুরূপভাবে সমাজের গুণী ও মহান ব্যক্তিদের কদর এত বেশি হবার কারণ তাঁরা সংখ্যায় খুবই নগণ্য । সমাজের সকল মানুষ যদি মহত্বের ছোঁয়ায় উন্নত হয়ে উঠত তাহলে মহৎ মানুষের এত কদর আর থাকত না । মহামান্য বলে কেউ আর জনে জনে পূজিত হতো না ।
মন্তব্য : আলোর রূপ ফুটিয়ে তোলার জন্য যেমন অন্ধকার একান্ত প্রয়োজন , তেমনি দুঃখবেদনার তীব্র জ্বালা আছে বলেই আমাদের জীবনে সুখ , আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্য এত কাম্য ।