ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়
পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি ।
মূলভাব : ক্ষুধা - দারিদ্র্য মানুষের সুন্দর অনুভূতি আর সুকুমার চেতনাকে কেড়ে নেয় । অভুক্ত মানুষের কাছে খাদ্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বস্তু আর কিছুই নেই ।
সম্প্রসারিত ভাব : সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট । অনেক মানুষের জীবনে যখন দুবেলা খাবার জোটে না , তখন কেউ কেউ আবার সম্পদের পাহাড় জমিয়ে তুলেছে । আসলে পৃথিবীতে মানুষ সর্বহারা ও সর্বভোগী এ দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে । পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় ধনী আরও ধনী হয় , আর গরিবের অবস্থা প্রতিনিয়ত হতে থাকে শোচনীয় । ধনী - দরিদ্রের ব্যবধান এবং নানামুখি শোষণ প্রক্রিয়া বিশ্বকে কলুষিত করেছে । মানবতার অবমাননা ঘটছে প্রতিকারবিহীনভাবে । কিন্তু প্রচলিত সমাজব্যবস্থা এক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে নির্বিকার । এ সমাজ কায়েমী স্বার্থান্ধ গোষ্ঠীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । তাই এ সমাজে গরিবের আর্তনাদ কেবলই নিষ্প্রাণ দেওয়ালে মাথা কুটে মরে । অনাহারী বুভুক্ষু মানুষের কান্নাধ্বনি যেন কেবলই নিষ্ফল রোদন হয়ে কান্নার রোলকেই বাড়িয়ে দেয় এখানে । অনেকে প্রাচুর্যের বেসাতি ছড়িয়ে শিল্প - সাহিত্য ও সুরুচির স্তাবক হয়ে বসে আছে । তারা সুন্দরের সাধনা আর কোমল - পেলব অনুভূতির পরিচর্যায় বিভোর । কিন্তু এই সুন্দরের সাধনা কিংবা শিল্পের চর্চা দারিদ্র্যজর্জর মানুষের কাছে কোন মূল্যই পায় না । কবিতার ছন্দ , অলংকারের মোহনীয় কারুকাজ তাদের হতাশাগ্নিকেই বাড়িয়ে দেয় । আকাশের যে রূপালি চাঁদ তাকে নিয়ে কত জনেই না উপমা আর চিত্রকল্পের মায়াজাল বিস্তার করেছে । কিন্তু ক্ষুধার্ত মানুষের চোখে চাঁদের মোহনীয় সৌন্দর্য এতটুকু ধরা পড়ে না । বরং পূর্ণিমার চাঁদ তাদের চোখে ধরা দেয় ঝলসানো রুটি হয়ে । চাঁদ তাই তাদের মনের সুকুমার চেতনাকে আলোড়িত করে না , বরং ক্ষুৎপিপাসার যন্ত্রণাদহনকেই করে তোলে তীব্রতর । আসলে ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবীটা বড়ই নির্দয় - নিষ্ঠুর , বড়ই বেসুরো ও গদ্যময় । তাই এ সমাজ পরিবর্তন করে ক্ষুধার্ত ও নিরন্ন মানুষের অন্নবস্ত্রের নিশ্চয়তা দিতে হবে ।
মন্তব্য : প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য মানুষকে স্বর্গীয় তৃপ্তি দান করে । কিন্তু সীমাহীন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কাছে এই সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায় । মানুষের খাদ্যের অভাব দূর করতে পারে না ।