নিঃসঙ্গ জীবন
তিন বেডের বাসায় একা থাকেন ডা . রুমানা । চাকরি শেষে অবসর নিয়েছেন পাঁচ বছর আগে । তখন থেকে প্রায় বাসায়ই কাটছে তার জীবন । সপ্তাহে তিন দিন বাসার কাছেই একটা ক্লিনিকে বসেন । আর মাঝে মাঝে মন চাইলে পরিচিত কারও বাসায় গিয়ে কাটিয়ে আসেন সারাদিন । এটুকুই তার বাইরে কাটানো । অন্য সময় বই , পত্র - পত্রিকা পড়েন , টেলিভিশন দেখেন । বাকি সময় ঘুম । কাজের মেয়েটা সকালে - সন্ধ্যায় আসে । ঘর ঝাড় - মোছ করে , কাপড় কাচে , মাছ - তরকারি কেটেকুটে দিয়ে যায় । রান্না করেন ডা . রুমানা নিজেই । যখন ইচ্ছে করে পছন্দমতো রান্না করে ফ্রিজে তুলে রাখেন । তার বাসায় আত্মীয়স্বজন কেউ আসে না । পছন্দের কেউ এলে তার পছন্দমতো খাওয়াতে খুব ভালোবাসেন । বছরে একবার ভাইয়েরা আসে স্ত্রী - ছেলে - মেয়ে নিয়ে । কয়েকদিন থেকে হৈচৈ করে কাটিয়ে যায় । এ সময়টা নিজেকে খুব ঝরঝরে লাগে ডা . রুমুনার । ছাত্রী অবস্থায় বিয়ে হয়েছিল । এক বছর না পেরুতেই অ্যাক্সিডেন্টে স্বামী মারা যান । অল্প সময়ের ব্যবধানে বাবা - মাও মারা যান । ছোট ভাই দুটোকে নিজের কাছে এনে লেখাপড়া শিখিয়েছেন , বিয়ে দিয়েছেন । বড়টা ইঞ্জিনিয়ার , ছোটটা ডাক্তার । যার যার কর্মস্থলে ওরা থাকে । বউ দুটোও চাকরি করে । খুব চমৎকার স্বাচ্ছন্দ্যময় সংসার ওদের । ভাবতে গেলেই খুব তৃপ্তি পান । কেবল নিজেরই সংসার হলো না । ভালো ঘর বর এসেছিল , ডা . রুমানাই রাজি হন নি । স্বাধীনতা থাকবে না বলে ঝামেলা মনে হয়েছে তখন । এখন অবশ্য মাঝে মাঝে খুব একা মনে হয় , নিঃসঙ্গ মনে হয় । হঠাৎ কখনো অসুস্থ হলে তখন খুব অসহায় মনে হয় । কখনো কখনো নিজের সম্পর্কে মন্তব্য করেন- “ এমন নিঃসঙ্গ জীবন যেন কারও না হয় । ”