প্রতিবন্ধী শিশুদের আত্মকথা
ইলু , বিলু , নিলু– এরা তিন বোন । গরিবের এই তিন কন্যার দিকে বিশেষ দৃষ্টি না দেওয়ায় এদের কারো হাত অচল , কারো পা , কারো আবার চোখ দুটো অন্ধ । এই তিন কন্যার এরূপ কষ্টকর জীবন দেখে মা রহিমা বেগম আর বাবা জলিলের মনে খুব কষ্ট হয় । ইলুর দুই হাতই অচল । সে কোনো কিছু করতে পারে না । বিলুর দুই পা পাটকাঠির মতো সরু , হাঁটবে তো দূরের কথা , দাঁড়াতেই পারে না । আর নিলু সমস্ত পৃথিবীর সৌন্দর্য তার কাছে সমান , অন্ধকারাচ্ছন্ন । সে দুই চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পায় না । এরা তিনজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী । কিন্তু বুদ্ধি প্রখর । নিলু অন্ধ হলে কী হবে ভালো গান গাইতে পারে । বিলু সুন্দর ছবি আঁকতে পারে । এর অনেক দৃষ্টান্ত সে রেখেছে ঘরের বেড়ার সাথে । সাদা চক দিয়ে অনেক সুন্দর ছবি সে এঁকেছে । কিন্তু এদের বাবা - মা গরিব হওয়ায় এরা প্রতিবন্ধী হওয়ায় এদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ নেই ।
তাই ঘরের আঙিনায় বসেই স্কুলে যাওয়া ছেলে - মেয়েদের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে । মনে মনে নানা কল্পনার ছবি আঁকে । স্কুলে তারা পড়ে , ছবি আঁকে , গান গায় , রোজ সকালে তারা উঠানে বসে থাকে । পথের দিকে চেয়ে থাকে । কেউ তাকায় কেউ আবার মুখ ফিরিয়ে চলে যায় । একদিন সকালবেলা তিনজনেই উঠানে বসে যে যার মতো ভাবছিল । বিলু আঁকছিল , নিলু গান গাইছিল আর ইলু চুপচাপ বসেছিল । এ দৃশ্য দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে রোকেয়া । সে স্কুলশিক্ষক । আজকে আর সে এড়িয়ে যেতে পারল না । রোকেয়া ওদের বাড়িতে প্রবেশ করতেই ইলু , বিলু তো অবাক । রোকেয়া ওদের বাবা - মাকে ডেকে বলল , চাচা - চাচি আমি ওদের স্কুলে নিয়ে যাব । এই কথা শুনেই খুশিতে তিন বোনের অশ্রু চলে এলো । অনেক দিন পর গ্রামের ছড়িয়ে পড়ল- বিলু ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা প্রথম হয়েছে , আর নিলু গান গেয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছে ।