গুগল নিউজ এ আমাদের অনুসরণ করুন। Google News!

সময়ের মূল্য | প্রবন্ধ রচনা

সময়ের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে বয়ে চলা। সময় একবার অতিক্রান্ত হলে তাকে আর ফিরে পাওয়া যায় না এজন্যই সময়ের মূল্য যে কোনো কিছুর থেকেই অধিক।

সময়ের মূল্য


এছাড়াও আরো যে বিষয় সম্পর্কে লিখতে পারবে:

👉সময়ানুবর্তিতা
👉সময়ের সদ্ব্যবহার
👉ছাত্রজীবনে সময়ের মূল্য

উপরোক্ত বিষয় সংক্রান্ত ২টি রচনা নিম্নে দেওয়া হলো-


রচনা নম্বার →১

[সংকেত : সূচনা – সময়ের মূল্য – সময়ের সদ্ব্যবহার – সময়ানুবর্তিতার গুরুত – মহৎ ব্যক্তিদের জীবনে সময়ের মূল্য – ছাত্রজীবনে সময়ের মূল্য – সময়ানুবর্তিতার অন্তরায় – সময়ের মূল্য না দেওয়ার কুফল – সময়জ্ঞান দেশ - বিদেশে – উপসংহার।]


সূচনা :

সময়ের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে বয়ে চলা । কোনো ঐশ্বর্যের মমতা তাকে বেঁধে রাখতে পারে না । মানুষের শত চেষ্টা ও আবেদন - নিবেদন তাকে বিন্দুমাত্রও ঠেকাতে পারবে না । মহাকালের অনন্ত কালযাত্রায় সময় নিরন্তর প্রবহমান । সেজন্যেই বলা হয় , Time and tide wait for none . অর্থাৎ সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না । যে মুহূর্তটি অতীতের গহ্বরে একবার চলে যায় তা আর কোনোদিন ফিরে আসে না । কিন্তু সময়ের মূল্যকে অবহেলা করার কোনো অবকাশ নেই । মানবজীবনে এর মূল্য অপরিসীম । কবি যথার্থই বলেছেন—

“ রাশি রাশি ধন দাও অমূল্য সময়

একবার গেলে আর আসিবার নয় । ”


সময়ের মূল্য :

সময় খুবই চঞ্চল । অতিক্রান্ত সময় আর কোনোদিনই ফিরে আসে না । টাকা - পয়সা , ধন - দৌলত নষ্ট হলে আবার অর্জন করা যায় । কিন্তু সময় একবার চলে গেলে শত চেষ্টা করলেও একে আর ফিরে পাওয়া যায় না । টাকা - পয়সার চেয়ে সময় বেশি মূল্যবান । তাই বলা হয়— Time is more valuable than wealth . আমাদের জীবনের এই অমূল্য সম্পদ সময়কে অবহেলা করে নষ্ট করা উচিত নয় । তাই কবি বলেছেন–

“ খেলায় মজিয়া শিশু কাটাইও না বেলা ,

সময়ের প্রতি কড় করিও না হেলা । "


সময়ের সদ্ব্যবহার :

সময় অনন্ত , মানুষের আয়ুষ্কাল সীমাবদ্ধ । কাজেই প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথ কাজে লাগিয়ে ছোট্ট জীবনকে সুন্দর করে তোলা সচেতন মানুষের কাজ । জীবনে উন্নতি সাধনের জন্যে প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানো অপরিহার্য । সময়ের সদ্ব্যবহার বলতে সর্বক্ষণ কেবল কাজে নিমগ্ন থাকাই বুঝায় না । কাজের সময় কাজ , বিশ্রামের সময় বিশ্রাম এবং খেলার সময় খেলা এটিই হলো সময়ানুবর্তিতা । ইংরেজিতে বলা হয়— Work while you work and play while you play পরে করা হবে বলে অযথা সময়ের অপচয় করা উচিত নয় । সময়কে সর্বদা সৃষ্টিশীল কাজে লাগানো উচিত । কথায় বলে— “ সময়ের এক ফোঁড় , অসময়ের দশ ফোঁড় । ” সময়ের সদ্ব্যবহার একটি জীবনকে পূর্ণতা দিতে পারে । বেকন বলেছেন , “ সময়ের সদ্ব্যবহারকারী একজন তরুণ সময়ের অপব্যবহারকারী একজন বৃদ্ধের চাইতেও বয়স্ক । ”


সময়ানুবর্তিতার গুরুত্ব :

মানবজীবন ক্ষণস্থায়ী , কিন্তু তার গৌরব চিরস্থায়ী । জীবনের শিক্ষা অফুরস্ত , কর্তব্য অপরিমেয় , কর্মজগতের পরিধি ক্রমবর্ধমান । তাই সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে কর্মের সঙ্গতি বিধান করা উচিত । সময়মতো বীজ না বুনলে যেমন ফসল হয় না , ওষুধ না খেলে যেমন রোগ সারে না , তেমনি সময়মতো পড়ালেখা না করলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যায় না , জ্ঞানার্জন সম্ভব হয় না । সময় ও সুযোগকে কাজে লাগালেই উন্নতির পথ প্রশস্ত হয় । মহৎপ্রাণ ব্যক্তিমাত্রই সময়ের সদ্ব্যবহার করেছেন । কেননা , তাঁরা উপলব্ধি করেছেন সময়ানুবর্তিতার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে । সৈনিকরা সর্বদা সময়ানুবর্তী জীবন পরিচালনা করে থাকেন । সেজন্যই তাদের জীবন শৃঙ্খলায় পূর্ণ এবং কর্মক্ষেত্রে তারা সফল । কাজেই সময়ের মূল্য বুঝে জীবনের সকল কর্ম সম্পাদন করার মধ্যেই সাফল্য নিহিত ।


মহৎ ব্যক্তিদের জীবনে সময়ের মূল্য :

পৃথিবীর যেকোনো মনীষীর জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় , তাঁদের সাফল্যের পেছনে রয়েছে সময়ানুবর্তিতার অনুসরণ । মহানবি ( স ) সময়কে জীবনের চাইতেও মূল্য দিতেন । ম্যাক্সিম গোর্কি ও কাজী নজরুল ইসলাম কুলিগিরি বা রুটির দোকানে কাজের ফাঁকে ফাঁকে সাহিত্যচর্চা করে যশস্ত্রী হয়েছেন । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কেরোসিনের অভাবে লাইটপোস্টের আলোতে পড়ালেখা করতেন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বখ্যাতির পেছনে সময়ের সযত্ন ব্যবহার তাকে খ্যাতির স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দিয়েছে ।


ছাত্রজীবনে সময়ের মূল্য :

ছাত্রজীবনে সময়ানুবর্তিতার মূল্য সর্বাধিক । কর্মজীবনের সাফল্য নির্ভর করে ছাত্রজীবনের সময়ের সঠিক মূল্যায়নের ওপর । নিয়মিত পাঠাভ্যাস ও শরীরচর্চার মাধ্যমে শৃঙ্খলা আর সংযম গড়ে ওঠে । শৈশব থেকেই কাজের প্রকৃতি অনুসারে সময়ানুবর্তিতার একান্ত প্রয়োজন । ছাত্রজীবনের দৈনন্দিন কর্মসূচিকে যারা অবহেলা করে , তারাই জীবনে সাফল্যের সোনার কাঠির পরশ থেকে বঞ্চিত হয় ।


সময়ানুবর্তিতার অন্তরায় :

অধৈর্য আর অলসতাই সময়ের যথার্থ ব্যবহারের প্রধানতম অন্তরায় । কথায় আছে – ' অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা । কর্মক্ষমতা হরণ করে মনে কুচিন্তার সৃষ্টি করা হলো অলসতার কাজ । এ প্রসঙ্গে মহামতি এডিসন যথার্থই বলেছেন — ' জীবনকে যদি উপভোগ করতে চাও , তবে অলসতাকে দূরে রাখ । এ আলস্যকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্যে প্রয়োজন অফুরন্ত মানসিক শক্তি । মনের জোর দিয়েই সময় অপচয়ের অভ্যাস পরিত্যাগ করা যায় ।


সময়ের মূল্য না দেওয়ার কুফল :

যারা সময়ের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে না তাদের জীবনে সাফল্য আশা করা যায় না । অবহেলায় সময় বিনষ্টকারী ব্যক্তিরা ছাত্রজীবন , কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থতা আর হতাশা বয়ে বেড়ায় । আসলে যারা সময়ের মূল্য দিতে জানে না তারা নিতান্তই নির্বোধ—

“ নিতান্ত নির্বোধ যেই শুধু সেই জন ,

অমূল্য সময় করে বৃথায় যাপন । '


সময়জ্ঞান দেশ - বিদেশে :

পৃথিবীর যে সমস্ত দেশ দ্রুত উন্নতি সাধন করেছে তারা জাতীয়ভাবে সময়ের মূল্য সম্পর্কে খুবই সচেতন । অর্থাৎ তারা প্রতিটি মুহূর্তকে সচেতনভাবে কাজে লাগিয়েছে । জাপান , কোরিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো এশীয় দেশগুলোও সময়ের মূল্য সম্পর্কে খুবই সচেতন । গবেষণায় দেখা গেছে একজন জাপানি বাস স্টপেজে তিন মিনিটের বেশি বিলম্ব করতে রাজি নয় । ঐসব দেশে কর্মফাকি , কাজে বিলম্বে উপস্থিতি , অকারণ আড্ডা বা গল্পে মশগুল থাকার কোনো প্রবণতা নেই । তার বিপরীতে আমাদের দেশে ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে অফিস - আদালত বা কল - কারখানায় সময়ের প্রতি যত্নশীলতার খুবই অভাব লক্ষণীয় । এদেশে অফিস - আদালতে সময় মেনে চলা হয় না । ছয়টার গাড়ি নয়টায়ও আসে না । মূলত জাতি হিসেবে সময়জ্ঞানের অভাবই আমাদের আজ সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ।


উপসংহার :

ইংরেজিতে বলা হয় , Time is money . অর্থাৎ সময়ই অর্থ সীমাবদ্ধ জীবনে উন্নতির সোপান হলো সময়ের মূল্য অনুধাবন করা । মানুষের চরম ও পরম পাওয়ার মূলে রয়েছে সময়ের প্রতি সচেতনতা আর সময়ের সঠিক মূল্যায়ন । সুতরাং , জীবনকে অর্থবহ করতে এবং দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করতে আমাদের প্রত্যেকেরই সময়ের মূল্য দেওয়া উচিত । বিশেষ করে ছাত্রজীবনে সময়ের মূল্য সম্পর্কে সচেতন থাকার ওপরই সামগ্রিক সাফল্য নির্ভরশীল । তাই প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর সময়ের সদ্ব্যবহারে সচেতন হতে হয় ।


ভালো কিছু ভালো ফলাফল প্রাপ্তির সহায়ক তাই গুণ ও মানের প্রশ্নে আমরা সর্বদা সচেতন

রচনা নম্বার →২

[সংকেত : ভূমিকা; সময়ের মূল্য; সময়ের সদ্ব্যবহার; সময়ের অপব্যবহারের কুফল; উপসংহার।]


ভূমিকা :

মানব জীবন কয়েকটি মুহূর্তের সমষ্টিমাত্র । ক্ষণে ক্ষণে আমাদের আয়ু কমে যায় । সুতরাং আয়ু সীমিত , কিন্তু পৃথিবীতে আমাদের অনেক কাজ - কর্মের সুযোগ রয়েছে । তাই আলস্যভরে নষ্ট করা প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের আয়ু নষ্ট করে বা কমিয়ে দেয় । অযথা সময় নষ্ট না করে ফলদায়ক কাজ করার মধ্যেই সময়ের প্রকৃত মূল্য নিহিত ।


সময়ের মূল্য :

সময় অমূল্য সম্পদ , কবির ভাষায় বলা যায়-

দিন যায়,ক্ষণ যায়

সময় কাহারও নয় ,

বেগে ধায় নাহি রহে স্থির

সহায় , সম্পদ , বল

সকলি ঘুচায় কাল ,

আয়ু যেন পদ্মপত্রে নীর ।

অবিরাম গতিতে প্রবহমান নদীর স্রোতের সঙ্গে সময়ের তুলনা করা যেতে পারে । নদীর স্রোতকে যেমন কোনক্রমেই ধরে রাখা যায় না এবং স্রোতের যে অংশ একবার চলে যায় , তাকে শত চেষ্টাতেও আর যেমন ফিরে পাওয়া যায় না , সেরূপ হারানো সময় কখনো ফিরে আসে না । পরিশ্রম করে হারানো অর্থ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে , কিন্তু যে সময় কাজে না লাগিয়ে অযথা ব্যয় করা হয়েছে , হাজার চেষ্টা করেও তা আর ফিরে পাওয়া যাবে না ।


সময়ের সদ্ব্যবহার :

কর্মঠ লোকেরা সময়ের সদ্ব্যবহার করে থাকেন । দিন - রাত কাজ করে তাঁরা জীবনে সফলতা অর্জন করে থাকেন । মহামানবদের জীবনী পাঠ করলে দেখা যায় যে , তাঁরা প্রত্যেকেই সময়ের গুরুত্ব বুঝে নিজ নিজ কর্ম যথাসময়ে সম্পন্ন করে গিয়েছেন । যে কাজের জন্য যে সময় উপযুক্ত , সেই কাজ সেই সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা উচিত । তা না হলে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য সময়ের অভাব ঘটবে ।


সময়ের অপব্যবহারের কুফল :

অলসতাই সকল দোষের মূল । অলস লোক কাজ করে না , অন্যের উপর নির্ভর করে জীবন ধারণ করে । অতএব , সময়ের অপব্যবহার করা নীতিগত অপরাধ ও ভবিষ্যৎ বিপদের কারণ । যথেষ্ট গুণসম্পন্ন ও ক্ষমতার অধিকারী হয়েও অলস লোক জীবনে উন্নতি করতে পারে না । সময়ের সদ্ব্যবহার করে অনেক অল্প ধীসম্পন্ন যুবক জগতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে , অথচ বৃথা সময় নষ্ট করে অনেক প্রতিভাসম্পন্ন যুবকও অধঃপতিত হয়েছে । যারা বৃথা সময় নষ্ট করে , তারাই সময় অল্প বলে অভিযোগ করে । সময় যেন একটি শস্যক্ষেত্র , মানুষ কৃষক । সে ইচ্ছা করলে ক্ষেতে সোনা ফলাতে পারে , আবার অবহেলা করে এ মূল্যবান ক্ষেত আগাছায় ভরে তুলে শস্য উৎপাদনের সকল সম্ভাবনা দূর করে দিতে পারে । জগতের ইতিহাসে যে জাতি সময়ের মূল্য বুঝেছে , সে জাতি উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করেছে । অনুন্নত জাপান সময়ের মূল্য বুঝে আজ জগতের শ্রেষ্ঠ সম্পদশালী জাতিসমূহের অন্যতম হয়েছে , ইংরেজ পৃথিবী শাসন করেছে । আর আমরা সময়ের মূল্য না বুঝে দিন দিন অধঃপতনের অতল তলে তলিয়ে যাচ্ছি । সময়ের ন্যায় ঐশ্বর্য আর নেই । এ ঐশ্বর্য হাতে পেয়ে যে হারিয়েছে , তার ন্যায় নিঃস্ব আর কে আছে?


উপসংহার :

সাফল্য অর্জন দ্বারা জীবনকে সার্থক করে তুলতে হলে সময়ের মূল্য সম্বন্ধে সচেতন থাকতে হবে । অলসতাপূর্ণ দীর্ঘ জীবন অর্থহীন , কিন্তু কর্মময় সফল জীবন সংক্ষিপ্ত হলেও সার্থক ও বাঞ্ছনীয় ।


আরো পড়ুনঃ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কুকি সম্মতি
আমরা ট্রাফিক বিশ্লেষণ করতে, আপনার পছন্দগুলি মনে রাখতে এবং আপনার অভিজ্ঞতাকে অপ্টিমাইজ করতে এই সাইটে কুকিজ পরিবেশন করি৷
ওহফ্!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে ইন্টারনেটের সাথে সংযোগ করুন এবং আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
বিজ্ঞাপন ব্লক সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা সনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷
বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হয়, আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইনে আমাদের ওয়েবসাইটকে সাদা তালিকাভুক্ত করার অনুরোধ করছি।