সময়ের মূল্য
এছাড়াও আরো যে বিষয় সম্পর্কে লিখতে পারবে:
উপরোক্ত বিষয় সংক্রান্ত ২টি রচনা নিম্নে দেওয়া হলো-
রচনা নম্বার →১
[সংকেত : সূচনা – সময়ের মূল্য – সময়ের সদ্ব্যবহার – সময়ানুবর্তিতার গুরুত – মহৎ ব্যক্তিদের জীবনে সময়ের মূল্য – ছাত্রজীবনে সময়ের মূল্য – সময়ানুবর্তিতার অন্তরায় – সময়ের মূল্য না দেওয়ার কুফল – সময়জ্ঞান দেশ - বিদেশে – উপসংহার।]
সূচনা :
সময়ের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে বয়ে চলা । কোনো ঐশ্বর্যের মমতা তাকে বেঁধে রাখতে পারে না । মানুষের শত চেষ্টা ও আবেদন - নিবেদন তাকে বিন্দুমাত্রও ঠেকাতে পারবে না । মহাকালের অনন্ত কালযাত্রায় সময় নিরন্তর প্রবহমান । সেজন্যেই বলা হয় , Time and tide wait for none . অর্থাৎ সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না । যে মুহূর্তটি অতীতের গহ্বরে একবার চলে যায় তা আর কোনোদিন ফিরে আসে না । কিন্তু সময়ের মূল্যকে অবহেলা করার কোনো অবকাশ নেই । মানবজীবনে এর মূল্য অপরিসীম । কবি যথার্থই বলেছেন—
“ রাশি রাশি ধন দাও অমূল্য সময়
একবার গেলে আর আসিবার নয় । ”
সময়ের মূল্য :
সময় খুবই চঞ্চল । অতিক্রান্ত সময় আর কোনোদিনই ফিরে আসে না । টাকা - পয়সা , ধন - দৌলত নষ্ট হলে আবার অর্জন করা যায় । কিন্তু সময় একবার চলে গেলে শত চেষ্টা করলেও একে আর ফিরে পাওয়া যায় না । টাকা - পয়সার চেয়ে সময় বেশি মূল্যবান । তাই বলা হয়— Time is more valuable than wealth . আমাদের জীবনের এই অমূল্য সম্পদ সময়কে অবহেলা করে নষ্ট করা উচিত নয় । তাই কবি বলেছেন–
“ খেলায় মজিয়া শিশু কাটাইও না বেলা ,
সময়ের প্রতি কড় করিও না হেলা । "
সময়ের সদ্ব্যবহার :
সময় অনন্ত , মানুষের আয়ুষ্কাল সীমাবদ্ধ । কাজেই প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথ কাজে লাগিয়ে ছোট্ট জীবনকে সুন্দর করে তোলা সচেতন মানুষের কাজ । জীবনে উন্নতি সাধনের জন্যে প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানো অপরিহার্য । সময়ের সদ্ব্যবহার বলতে সর্বক্ষণ কেবল কাজে নিমগ্ন থাকাই বুঝায় না । কাজের সময় কাজ , বিশ্রামের সময় বিশ্রাম এবং খেলার সময় খেলা এটিই হলো সময়ানুবর্তিতা । ইংরেজিতে বলা হয়— Work while you work and play while you play পরে করা হবে বলে অযথা সময়ের অপচয় করা উচিত নয় । সময়কে সর্বদা সৃষ্টিশীল কাজে লাগানো উচিত । কথায় বলে— “ সময়ের এক ফোঁড় , অসময়ের দশ ফোঁড় । ” সময়ের সদ্ব্যবহার একটি জীবনকে পূর্ণতা দিতে পারে । বেকন বলেছেন , “ সময়ের সদ্ব্যবহারকারী একজন তরুণ সময়ের অপব্যবহারকারী একজন বৃদ্ধের চাইতেও বয়স্ক । ”
সময়ানুবর্তিতার গুরুত্ব :
মানবজীবন ক্ষণস্থায়ী , কিন্তু তার গৌরব চিরস্থায়ী । জীবনের শিক্ষা অফুরস্ত , কর্তব্য অপরিমেয় , কর্মজগতের পরিধি ক্রমবর্ধমান । তাই সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে কর্মের সঙ্গতি বিধান করা উচিত । সময়মতো বীজ না বুনলে যেমন ফসল হয় না , ওষুধ না খেলে যেমন রোগ সারে না , তেমনি সময়মতো পড়ালেখা না করলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যায় না , জ্ঞানার্জন সম্ভব হয় না । সময় ও সুযোগকে কাজে লাগালেই উন্নতির পথ প্রশস্ত হয় । মহৎপ্রাণ ব্যক্তিমাত্রই সময়ের সদ্ব্যবহার করেছেন । কেননা , তাঁরা উপলব্ধি করেছেন সময়ানুবর্তিতার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে । সৈনিকরা সর্বদা সময়ানুবর্তী জীবন পরিচালনা করে থাকেন । সেজন্যই তাদের জীবন শৃঙ্খলায় পূর্ণ এবং কর্মক্ষেত্রে তারা সফল । কাজেই সময়ের মূল্য বুঝে জীবনের সকল কর্ম সম্পাদন করার মধ্যেই সাফল্য নিহিত ।
মহৎ ব্যক্তিদের জীবনে সময়ের মূল্য :
পৃথিবীর যেকোনো মনীষীর জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় , তাঁদের সাফল্যের পেছনে রয়েছে সময়ানুবর্তিতার অনুসরণ । মহানবি ( স ) সময়কে জীবনের চাইতেও মূল্য দিতেন । ম্যাক্সিম গোর্কি ও কাজী নজরুল ইসলাম কুলিগিরি বা রুটির দোকানে কাজের ফাঁকে ফাঁকে সাহিত্যচর্চা করে যশস্ত্রী হয়েছেন । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কেরোসিনের অভাবে লাইটপোস্টের আলোতে পড়ালেখা করতেন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বখ্যাতির পেছনে সময়ের সযত্ন ব্যবহার তাকে খ্যাতির স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দিয়েছে ।
ছাত্রজীবনে সময়ের মূল্য :
ছাত্রজীবনে সময়ানুবর্তিতার মূল্য সর্বাধিক । কর্মজীবনের সাফল্য নির্ভর করে ছাত্রজীবনের সময়ের সঠিক মূল্যায়নের ওপর । নিয়মিত পাঠাভ্যাস ও শরীরচর্চার মাধ্যমে শৃঙ্খলা আর সংযম গড়ে ওঠে । শৈশব থেকেই কাজের প্রকৃতি অনুসারে সময়ানুবর্তিতার একান্ত প্রয়োজন । ছাত্রজীবনের দৈনন্দিন কর্মসূচিকে যারা অবহেলা করে , তারাই জীবনে সাফল্যের সোনার কাঠির পরশ থেকে বঞ্চিত হয় ।
সময়ানুবর্তিতার অন্তরায় :
অধৈর্য আর অলসতাই সময়ের যথার্থ ব্যবহারের প্রধানতম অন্তরায় । কথায় আছে – ' অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা । কর্মক্ষমতা হরণ করে মনে কুচিন্তার সৃষ্টি করা হলো অলসতার কাজ । এ প্রসঙ্গে মহামতি এডিসন যথার্থই বলেছেন — ' জীবনকে যদি উপভোগ করতে চাও , তবে অলসতাকে দূরে রাখ । এ আলস্যকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্যে প্রয়োজন অফুরন্ত মানসিক শক্তি । মনের জোর দিয়েই সময় অপচয়ের অভ্যাস পরিত্যাগ করা যায় ।
সময়ের মূল্য না দেওয়ার কুফল :
যারা সময়ের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে না তাদের জীবনে সাফল্য আশা করা যায় না । অবহেলায় সময় বিনষ্টকারী ব্যক্তিরা ছাত্রজীবন , কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থতা আর হতাশা বয়ে বেড়ায় । আসলে যারা সময়ের মূল্য দিতে জানে না তারা নিতান্তই নির্বোধ—
“ নিতান্ত নির্বোধ যেই শুধু সেই জন ,
অমূল্য সময় করে বৃথায় যাপন । '
সময়জ্ঞান দেশ - বিদেশে :
পৃথিবীর যে সমস্ত দেশ দ্রুত উন্নতি সাধন করেছে তারা জাতীয়ভাবে সময়ের মূল্য সম্পর্কে খুবই সচেতন । অর্থাৎ তারা প্রতিটি মুহূর্তকে সচেতনভাবে কাজে লাগিয়েছে । জাপান , কোরিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো এশীয় দেশগুলোও সময়ের মূল্য সম্পর্কে খুবই সচেতন । গবেষণায় দেখা গেছে একজন জাপানি বাস স্টপেজে তিন মিনিটের বেশি বিলম্ব করতে রাজি নয় । ঐসব দেশে কর্মফাকি , কাজে বিলম্বে উপস্থিতি , অকারণ আড্ডা বা গল্পে মশগুল থাকার কোনো প্রবণতা নেই । তার বিপরীতে আমাদের দেশে ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে অফিস - আদালত বা কল - কারখানায় সময়ের প্রতি যত্নশীলতার খুবই অভাব লক্ষণীয় । এদেশে অফিস - আদালতে সময় মেনে চলা হয় না । ছয়টার গাড়ি নয়টায়ও আসে না । মূলত জাতি হিসেবে সময়জ্ঞানের অভাবই আমাদের আজ সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ।
উপসংহার :
ইংরেজিতে বলা হয় , Time is money . অর্থাৎ সময়ই অর্থ সীমাবদ্ধ জীবনে উন্নতির সোপান হলো সময়ের মূল্য অনুধাবন করা । মানুষের চরম ও পরম পাওয়ার মূলে রয়েছে সময়ের প্রতি সচেতনতা আর সময়ের সঠিক মূল্যায়ন । সুতরাং , জীবনকে অর্থবহ করতে এবং দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করতে আমাদের প্রত্যেকেরই সময়ের মূল্য দেওয়া উচিত । বিশেষ করে ছাত্রজীবনে সময়ের মূল্য সম্পর্কে সচেতন থাকার ওপরই সামগ্রিক সাফল্য নির্ভরশীল । তাই প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর সময়ের সদ্ব্যবহারে সচেতন হতে হয় ।
রচনা নম্বার →২
[সংকেত : ভূমিকা; সময়ের মূল্য; সময়ের সদ্ব্যবহার; সময়ের অপব্যবহারের কুফল; উপসংহার।]
ভূমিকা :
মানব জীবন কয়েকটি মুহূর্তের সমষ্টিমাত্র । ক্ষণে ক্ষণে আমাদের আয়ু কমে যায় । সুতরাং আয়ু সীমিত , কিন্তু পৃথিবীতে আমাদের অনেক কাজ - কর্মের সুযোগ রয়েছে । তাই আলস্যভরে নষ্ট করা প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের আয়ু নষ্ট করে বা কমিয়ে দেয় । অযথা সময় নষ্ট না করে ফলদায়ক কাজ করার মধ্যেই সময়ের প্রকৃত মূল্য নিহিত ।
সময়ের মূল্য :
সময় অমূল্য সম্পদ , কবির ভাষায় বলা যায়-
দিন যায়,ক্ষণ যায়
সময় কাহারও নয় ,
বেগে ধায় নাহি রহে স্থির
সহায় , সম্পদ , বল
সকলি ঘুচায় কাল ,
আয়ু যেন পদ্মপত্রে নীর ।
অবিরাম গতিতে প্রবহমান নদীর স্রোতের সঙ্গে সময়ের তুলনা করা যেতে পারে । নদীর স্রোতকে যেমন কোনক্রমেই ধরে রাখা যায় না এবং স্রোতের যে অংশ একবার চলে যায় , তাকে শত চেষ্টাতেও আর যেমন ফিরে পাওয়া যায় না , সেরূপ হারানো সময় কখনো ফিরে আসে না । পরিশ্রম করে হারানো অর্থ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে , কিন্তু যে সময় কাজে না লাগিয়ে অযথা ব্যয় করা হয়েছে , হাজার চেষ্টা করেও তা আর ফিরে পাওয়া যাবে না ।
সময়ের সদ্ব্যবহার :
কর্মঠ লোকেরা সময়ের সদ্ব্যবহার করে থাকেন । দিন - রাত কাজ করে তাঁরা জীবনে সফলতা অর্জন করে থাকেন । মহামানবদের জীবনী পাঠ করলে দেখা যায় যে , তাঁরা প্রত্যেকেই সময়ের গুরুত্ব বুঝে নিজ নিজ কর্ম যথাসময়ে সম্পন্ন করে গিয়েছেন । যে কাজের জন্য যে সময় উপযুক্ত , সেই কাজ সেই সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা উচিত । তা না হলে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য সময়ের অভাব ঘটবে ।
সময়ের অপব্যবহারের কুফল :
অলসতাই সকল দোষের মূল । অলস লোক কাজ করে না , অন্যের উপর নির্ভর করে জীবন ধারণ করে । অতএব , সময়ের অপব্যবহার করা নীতিগত অপরাধ ও ভবিষ্যৎ বিপদের কারণ । যথেষ্ট গুণসম্পন্ন ও ক্ষমতার অধিকারী হয়েও অলস লোক জীবনে উন্নতি করতে পারে না । সময়ের সদ্ব্যবহার করে অনেক অল্প ধীসম্পন্ন যুবক জগতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে , অথচ বৃথা সময় নষ্ট করে অনেক প্রতিভাসম্পন্ন যুবকও অধঃপতিত হয়েছে । যারা বৃথা সময় নষ্ট করে , তারাই সময় অল্প বলে অভিযোগ করে । সময় যেন একটি শস্যক্ষেত্র , মানুষ কৃষক । সে ইচ্ছা করলে ক্ষেতে সোনা ফলাতে পারে , আবার অবহেলা করে এ মূল্যবান ক্ষেত আগাছায় ভরে তুলে শস্য উৎপাদনের সকল সম্ভাবনা দূর করে দিতে পারে । জগতের ইতিহাসে যে জাতি সময়ের মূল্য বুঝেছে , সে জাতি উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করেছে । অনুন্নত জাপান সময়ের মূল্য বুঝে আজ জগতের শ্রেষ্ঠ সম্পদশালী জাতিসমূহের অন্যতম হয়েছে , ইংরেজ পৃথিবী শাসন করেছে । আর আমরা সময়ের মূল্য না বুঝে দিন দিন অধঃপতনের অতল তলে তলিয়ে যাচ্ছি । সময়ের ন্যায় ঐশ্বর্য আর নেই । এ ঐশ্বর্য হাতে পেয়ে যে হারিয়েছে , তার ন্যায় নিঃস্ব আর কে আছে?
উপসংহার :
সাফল্য অর্জন দ্বারা জীবনকে সার্থক করে তুলতে হলে সময়ের মূল্য সম্বন্ধে সচেতন থাকতে হবে । অলসতাপূর্ণ দীর্ঘ জীবন অর্থহীন , কিন্তু কর্মময় সফল জীবন সংক্ষিপ্ত হলেও সার্থক ও বাঞ্ছনীয় ।
আরো পড়ুনঃ