নৌকাভ্রমণের অভিজ্ঞতা
প্রিয় পাঠক নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা উপরোক্ত বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নিম্নে দুইটি অভিজ্ঞতা বর্ণন দাওয়া হল:-
অভিজ্ঞতা বর্ণন →১
ভ্রমণ মানেই অভিজ্ঞতার ডালপালা ছড়ানাে বিশাল এক বৃক্ষ মগজে ঢুকে যাওয়া । আরও সেটা যদি হয় ওই নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রথম অভিজ্ঞতা , তবে তাে কথাই নেই । নতুন কিছু করার রােমাঞ্চ যেমন শিহরণ জাগায় , তেমন ওই নতুন ভ্রমণ মনে আনে লালিত বাসনা পূরণের প্রশান্তি ।
ছােটবেলা থেকেই আমার মনে বাসনা ছিল নৌকাভ্রমণ করা । আর আমাদের দেশ নদীমাতৃক বলে এটা অসম্ভব বা ব্যয়বহুল কোনাে ব্যাপার নয় । আমার মামার বাড়ি রাজশাহী শহরে । রাজশাহীর পাশ দিয়ে পদ্মা নদী বইছে । গত বসন্তে কলেজে কিছুদিনের ছুটি পেয়ে মামার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম । মনে মনে খুব আকাঙ্ক্ষা ছিল পদ্মা নদীতে নৌকাভ্রমণ করার । মামাতাে ভাইকে আমার ইচ্ছার কথা জানালে সে আমাকে পরের দিনই নিয়ে যাবে বলল । আমাদের এই কথাটা কেমন করে জানি গােটা বাড়িতেই চাউর হয়ে গেল । সঙ্গে সঙ্গে সবাই মিলে একসাথে যাব বলে সিদ্ধান্ত হলাে । পরদিন বিকেলে সবাই মিলে পদ্মার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । বাবা - মা , মামা - মামি , মামাতাে ভাই আর অপুর সাথে আমি চললাম নতুন কিছুর অভিজ্ঞতা নিতে ।
আমরা ওখানে পৌছতে সন্ধ্যা লেগে গেল । একটা নৌকা ভাড়া করে আমরা তাতে সবাই উঠে পড়লাম । তখন শুক্লপক্ষ চলছিল , তাই সন্ধ্যার পরপরই ফুটফুটে চাঁদের আলাে সন্ধ্যার ঝাপসা আলাে দূর করে দিল । ভেসে চললাম আমরা নদীর বুকে । নদীতে খুব বেশি পানি ছিল না তখন । তবুও মাঝি ভাইকে সাবধানে চলতে বলল মামা । এক সময় আমরা প্রায় মাঝনদীতে চলে এলাম । সেখান থেকে আমি পাড়ের দিকে ফিরে চাইলাম । দেখলাম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাড়ি দেখা যাচ্ছে আবছাভাবে । আর এসব বাড়িতে আলাে জ্বলছে মিটিমিটি । মা কিছু শুকনাে খাবার বের করল । সবাই গােল হয়ে বসে আমরা সেগুলাে খেলাম । কিছু খাবার মাঝি দুজনকে দিয়ে এলাম আমি । তারা খুব খুশি হলাে আমাদের এ রকম আন্তরিকতা দেখে । খাওয়াদাওয়া শেষে আমরা গল্পগুজবে মেতে উঠলাম । মামার শখ হলাে , মাঝনদীতে বসে গান শুনবে । তাই ভাইয়া মাঝিকে গান গাওয়ার জন্য অনুরােধ করল । প্রথমে না - না করলেও মহিলাদের অনুরােধে গান ধরল মাঝি ... ‘ ওই পাড়েতে তুমি বন্ধু , এই পাড়েতে আমি ... ' আশ্চর্য ! মাঝি ভাইয়ের গানের গলা ছিল অসাধারণ । সবাই প্রশংসা না করে পারল না । প্রত্যুত্তরে ছােট একটা হাসি দিয়ে মাঝি চুপ করে গেল । মনে হয় গান এখনাে তার আবেগে কাজ করছে । আমি আকাশের দিকে তাকালাম । পরিষ্কার আকাশে চাঁদের বিপরীত দিকে তারা দেখলাম কয়েকটা । এদিকে রাত ৮ টা বেজে যাচ্ছে । বাসায় ফিরে রান্না করতে হবে দেখে মামি ফেরার তাগাদা দিতে লাগল । মামাও মাঝিকে নৌকা পাড়ে ভেড়াতে বলল । ঝাপসা হয়ে থাকা বাড়ির আলােগুলাে এখন ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল । একসময় পাড়ে ফিরে এলাম । অর্জন করলাম চাঁদের আলােয় নৌকাভ্রমণের সংক্ষিপ্ত অভিজ্ঞতা । পরিপূর্ণতা পেল আমার চাওয়া ।
অভিজ্ঞতা বর্ণন →২
তখন ছিল শরৎকাল হঠাৎ ইচ্ছে হলাে নেত্রকোণা জেলার মির্জাপুরে আমার দাদা বাড়ি যেতে । আমার বন্ধুদের কয়েকজন আমার সাথে একমত হলাে । আমরা সংখ্যায় ছিলাম চারজন । আমরা একটি গ্রাম্য নৌকা ভাড়া করলাম । আমাদের মাঝিদের মধ্যে দুইজন ছিল প্রকৃতই খুব কর্মঠ , তরুণ ও বলবান । সকাল দশটায় আমাদের ঘাট থেকে নৌকা যাত্রা শুরু করল । মৃদুমন্দ বাতাস বইছিল আর আমরা গন্তব্যের দিকে এগুচ্ছিলাম । আকাশে ছিল সাদা মেঘ । মাঝিরা কিছুক্ষণ দাঁড় বাইলাে । তারপর তারা রঙিন পাল তুললাে । বাতাস ছিল আমাদের অনুকূলে । কাজেই , নৌকাটি সহজেই এগুচ্ছিল । আমরা আমাদের মাতৃভূমির অকৃত্রিম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভােগ করছিলাম ।
প্রকৃতপক্ষেই এ ছিল বর্ণনাতীত । নদীর উভয় তীরের ফসলি ক্ষেতগুলাে ছিল সবুজ শ্যামল । কিছু ডানপিটে নগ্ন ছেলেরা নদীতে সাঁতার কাটছিল । কলসি কাঁখে গায়ের বউ - ঝিরা পানি নিয়ে যাচ্ছিল । কিছু জেলে , মাছ ধরছিল । নৌকা থামিয়ে আমরা মাছ কিনলাম এবং মাঝিরা নৌকার উপরে স্টভম্বেলে রান্নার আয়ােজন করল । কৃষকেরা ফসল কাটছিল আর গান গাইছিল । এরপর একটা ঘাটে আমরা দেখলাম ছােট বড় অনেক নৌকা । অনেক লােক তাদের নিত্যপ্রয়ােজনীয় সামগ্রী কেনাবেচা করতে সেখানে ভিড় জমিয়েছিল । আনন্দ ও কৌতূহলবশত কিছু শখের জিনিস কেনাকাটা করে আমরা আনন্দে আত্মহারা হলাম । অতঃপর একটি ক্লান্ত দুপুর ও একটি চমৎকার বিকেল উপভােগ করার পর আমরা গভেব্যে এসে পৌছলাম । আমরা মাঝিদের পাওনা পরিশােধ করলাম । পূর্বেই মা আমাদের ভ্রমণ সম্পর্কে জানিয়েছিলেন । কাজেই আমার চাচাতাে ভাই ও চাচি আমাদের প্রতীক্ষায় ছিল । তারা আমাদের সাদরে গ্রহণ করল । এ ছিল আমাদের এক সুখময় অভিজ্ঞতা । আমরা যে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছেছিলাম তাই আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম । এ ভ্রমণটি আমার হৃদয়ে চিরকাল সজীব থাকবে ।