আব্বাস উদ্দীন আহমদ ( ১৯৫৮-৫৯ সালে লেখা )
১ জানুয়ারি
নববর্ষের প্রথম দিন । খােন্দকার মহ , ইলিয়াস তাঁর লেখা বইখানা ভাসানী যখন ইউরােপে আজ আমাকে এক কপি উপহার দিয়ে গেলেন । এই তাে বহুদিন হলাে । আত্মপ্রকাশ করেছে- এত দিন তাে বই দেওয়ার কথা মনে পড়েনি ।..... যাক , ধন্যবাদ সহকারে গ্রহণ করলাম । গায়করা দুপুরে এসেছিল , ভেটকাও দুপুরে এসেছিল । খায়রুল কবির সাহেবের চিঠি পেলাম ।
২ জানুয়ারি
গায়করা এসেছিল । জানতে পারলাম , জসীমউদ্দীনের এক বছরের জন্য চাকরিতে এক্সটেনশন হয়েছে । রােজী আর ভেটকা এসেছে । কবি আজিজুর রহমান এসেছিলেন । বরকতউল্লাহ সাহেব এসেছিলেন । জাস্টিস ইব্রাহীম সাহেবের স্ত্রী এসেছিলেন সন্ধ্যায় । এশতেহাক সুফিয়ার ছেলে হয়েছে- এই খবর নিয়ে এসেছেন । কী স্ফুর্তি ভদ্রমহিলার । খুবই আনন্দ হলাে শুনে ! ঠিক সেই সময় মেজর ইফতেখার তার স্ত্রীকে নিয়ে এল । ... বাসা বেশ গুলজার । তবু তলু - মীর্না বাসায় নেই । তারা ইউএসআইএস - এ গান শুনতে গেছে ।
৬ মার্চ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ শুরু হয়েছে সাড়ে দশটায় । সারা দিনে পাকিস্তান ১৪৫ রান করে সবাই আউট হয়ে গেল । আজ খেলার জন্য অফিস বন্ধ । সন্ধ্যায় ছােট বিয়াই বিয়াইন এসেছিল । রাত দশটায় ইয়াকব মিঞা এবং গােপীবাবু এলেন । রাত দুইটা পর্যন্ত জমাজমি এক্সচেঞ্জের ব্যাপারে আলাপ করি । ...... দুলুবাবাকে আজ একখানা চিঠি লিখেছি । খালেক এসেছে রংপুর থেকে । পীর সাহেব ও খালেক ড্রয়িংরুমে , আমার ঘরে ইয়াকুব মিঞা ও গােপীবাবু ।
১০ এপ্রিল
আজ ঈদের দিন । সকাল সােয়া সাতটায় মীর্না মার ঈদের গান বাজল । তার আগে তুলুর রেকর্ড করা গান করাল রেডিওতে । ভাের থেকে তুলু আমার রেকর্ড সমানে বাজিয়ে চলেছে । দোস্তুরা নামাজ পড়তে গেল । দোস্তাইন , আলেয়া , মীর্না নামাজ পড়ে এল । ভেটকা , বাবলা এসে দোতাইনকে নিয়ে গেল ওদের বাসায় । নামাজ শেষে কাজী দীন মুহাম্মদ , পুতুলের বাবা আনিস , ওজাজের বাবা মকবুল , তার বউ , মােনা , ওর বউ , পুতুল , রফিক , রােজী , লাজু , লিপি এল । এল ঝরনা ও ওর খালাতাে দুভাইবােন । তরীকুলের বড় ভাই , ছােট ভাই , ওদের ভাগ্নি বীরু - এর এল । ভেটকা , বউমা , বাবলা , পিপি - এরা বিকেলে এল । আমিনুল ইসলাম আর বউমা এল চারটায় । আনিস - বউমা আর ওর দাদি এল ছটায় । মীর্না মার কালামে ইকবাল গজলটি রেডিওতে বাজল । সন্ধ্যার পর বাগানে এসেছে সবাই । নাজির আহমেদ , ফতেহ লােহানী , আহাদ এল । সাবে রেজা করিম , গােলাম মােস্তফা ( মফিজ মন্ত্রীর ছেলে ) , হাশেম , দিলারা হাশেম , জয়নুল আবেদীন সাহেব ( ডিজি ) , তার সত্ৰী হােসনে আরা , ওঁর মেয়ে , মােদাকেরের ছেলেমেয়ে , কবি গােলাম মােস্তফা , মকু , ওর বউ , মামাতাে বােন , বাবলার বােনেরা , পুতুল , তার এক বন্ধ , তুলুর বন্ধুরাও এসেছিল ।
১৫ এপ্রিল
পয়লা বৈশাখ । বাঙালির নববর্ষ । .... সারা বছরে আশা - আকাঙ্ক্ষার প্রতীক । এই দিনটিতে বাঙালিমাত্রই ভালােভাবে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করে । সন্ধ্যায় আরমভ হয় মহাজনদের শুভ হালখাতা । গঞ্জে - গঞ্জে , বন্দরে - বন্দরে হালখাতার মহােৎসবে গ্রামবাসীও নগরবাসী মেতে ওঠে । কোথাও শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান - গান , নাচ , বাজনা , থিয়েটার , যাত্রা । ..... এই দিনটি অর্থাৎ পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যাটি আমি আমার গৃহপ্রাণকে গানবাজনায় মুখর করে তুলে আসছি বহুদিন থেকে । এবার তলু , মীর্নাই শিল্পী - সাহিত্যিকদের আমন্ত্রণ করেছে । সন্ধ্যা সাতটায় আমার বাইরের ছােট্ট বাগানটি ভরে উঠল সুধীজনের আগমনে । কবি সুফিয়া কামালকে সভানেত্রী করা হলাে । গায়ক গােলাম মােস্তফা উদ্বোধনী সংগীত গাইল । এরপর সামসুদ্দোহার গান , কবি আজিজুর রহমানের কবিতা আবৃত্তি , সােহরাব - বেদারের নজরুলগীতি , আনােয়ারের মেয়ে বাবলির নৃত্য , তুলুর ভাওয়াইয়া , মীর্নার আধুনিক বাংলা গান , জাহানারার খেয়াল গান , সমর দাশের গিটার , সবশেষে তুলু - মীর্নার দ্বৈত খেয়াল সংগীতানুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তােলে । গুণী - জ্ঞানীর সমাবেশ হয়েছিল । আজিজুল হক সাহেব , কবি গােলাম মােস্তফা , শিল্পী জয়নুল আবেদিন , সাবের রেজা করিম , আবদুল .... প্রায় দুই শ মজিদ মােল্লা ,. হাফিজুর রহমান , কবি জসীমউদ্দীন ও তদীয় পত্নী , কবি গােলাম মােস্তফাপত্নী ও তার মেয়ে জ্যোৎস্না ...... তার মেয়েরা , আনােয়ারের বউ , ডা . শামসুন্নাহর , মাহফুজ মােদাব্বের , তাঁর স্ত্রী ড . কাজী মােতাহার হােসেন , ডা . মিসেস ইব্রাহীম , তরীকুল আলম , তার মা , বড় জামান , ছােট জামান , তাদের বউ - সবাই এসেছিল । রাত এগারােটা পর্যন্ত ছিল ।