Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Test link

বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার | প্রবন্ধ রচনা

বাংলাদেশের দুর্নীতি জাতীয় একটি সমস্যা। দুর্নীতির কারণে সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র ও ক্ষমতাবলয়ের বাইরের জনগােষ্ঠী ।

বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার


এছাড়াও আরো যে বিষয়গুলো সম্পর্কে লিখতে পারবে:

👉দুর্নীতি ও প্রতিকার
👉দুর্নীতি ও বাংলাদেশ
👉দুর্নীতিমুক্ত স্বদেশ
👉দুর্নীতি : উন্নয়নের অন্তরায়

ভূমিকা :

সর্বগ্রাসী দুর্নীতির ভয়াল কালো থাবায় বিপন্ন আজ বাংলাদেশ । এ সর্বনাশা সামাজিক ব্যাধির মরণ ছোবলে বর্তমান সমাজ জর্জরিত । রাষ্ট্রীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে দেশের রাজনীতি , অর্থনীতি , সমাজনীতি , শিক্ষানীতি , সংস্কৃতি , শিল্প , ব্যবসা - বাণিজ্যসহ সর্বত্রই চলছে দুর্নীতি । দুর্নীতির করালগ্রাসে সাম্ভাবনাময় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হয়ে উঠেছে অনিশ্চিত ও অনুজ্জ্বল । তাই বিশেষজ্ঞরা দুর্নীতিকে জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন । তাই দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণের জন্য আমাদের সবাইকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করতে হবে ।

দুর্নীতি কী :

নীতি শব্দের সামনে ' দু ' উপসর্গ যুক্ত হয়ে দুর্নীতি শব্দটি গঠিত হয়েছে যার অর্থ নীতিপরিপন্থি কাজ । দুর্নীতি মূলত সমাজের প্রচলিত নীতি , আদর্শ , মূল্যবোধ ও আইনের পরিপন্থি অপরাধমূলক কাজ । আভিধানিক অর্থে দুর্নীতি হলো ঘুষ বা অনুগ্রহ দ্বারা জনকর্তব্য সম্পাদনে একাগ্রতার বিকৃতি ধ্বংস । Social work dictionary- র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে “ Corruption is in political and in public service administration , the abuse of office for the personal gaia , usually through bribery , extortion , influence pedding and special treatment given to some citizens and not to others . ” সহজ কথায় ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক অন্যায় কাজকর্ম করাই দুর্নীতি ।

দুর্নীতি ও বাংলাদেশ :

বাংলাদেশে দুর্নীতির বিষবৃক্ষ মহীরূহ আবার ধারণ করেছে । দুর্নীতি দখল করে নিয়েছে নীতির জায়গা । দুর্নীতির রাহুগ্রাস বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎকে করেছে ধূসর , জাতীয় সম্মানকে করেছে ভূলুণ্ঠিত । কোথায় নেই দুর্নীতি । অফিসের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ের কর্মচারী পর্যন্ত দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত । বিচারালয় , সরকারের সেবামূলক বিভাগ বা প্রতিষ্ঠান , শিক্ষা , আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কোথাও মানুষ স্বাভাবিক উপায়ে কাজ ও সেবা পায় না । দুর্নীতি দেশের প্রশাসন ও সমাজজীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করার কারণেই সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে পর পর চারবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবার কুখ্যাতি অর্জন করেছে । কিছুদিন থেকে দুর্নীতিবিরোধী সর্বাত্মক অভিযান পরিচালনার ফলে দুর্নীতির তীব্রতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে । তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিপ্রবণ ৫ টি দেশের মধ্যেই রয়েছে ( ২০০৭ - এর টিআইবি প্রতিবেদন ) ।

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রভাব :

বাংলাদেশে দুর্নীতি এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে । খাদ্য উৎপাদন , পরিবার পরিকল্পনা , ক্ষুদ্র ঋণ , কলেরা নির্মূল , ওরস্যালাইন আবিষ্কার , শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস , নারীশিক্ষা বিস্তার , স্যানিটেশন , গার্মেন্টস শিল্পের প্রসার প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে সাফল্য দেখিয়েছে তাতে উন্নয়নশীল বিশ্বে বাংলাদেশ মডেল হবার কথা । কিন্তু দুর্নীতির সর্বগ্রাসী প্রভাবে আমাদের দেশটি বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না । বিশ্বের দরবারে দারিদ্র্য ও দুর্নীতিবাজ দেশ হিসেবে আমাদের সম্মান ভূলুণ্ঠিত হয়েছে । দুর্নীতি আমাদের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে মারাত্মক কুফল বয়ে এনেছে । দুর্নীতি সামাজিক ক্ষেত্রে শ্রেণিবৈষম্য তীব্রতর করেছে , ধনী - দরিদ্রের আর্থিক সঙ্গতির ব্যবধান প্রকট করেছে এবং সামাজিক সংহতিকে বিনষ্ট করেছে । দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ তসরূপ ও পাচার হবার ফলে উন্নয়নে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে । টেকসই উন্নয়ন আমাদের দেশে হয়ে পড়েছে সুদূরপরাহত । অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়েছে । সমাজে সৃষ্টি হয়েছে নব্য ধনিক শ্রেণির । এদের দাপটে মানুষ শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারছে না । দিনে দিনে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পাহাড় হয়ে উঠেছে । একদিকে মানুষ যেখানে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে বাঁধা পড়ছে , অন্যদিকে তেমনি বিলাস ও জৌলুসপূর্ণ জীবনযাপন করছে অনেকে । সন্ত্রাস , রাহাজানি , মাদক , অনৈতিকতা , অপসংস্কৃতি — এসব অব্যাহত দুর্নীতির কারণেই আমাদের গ্রাস করে ফেলছে । দুর্নীতির কারণে এদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না , বাড়ছে বেকারত্ব । প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে না দুর্নীতির কারণেই ।

বাংলাদেশে দুর্নীতির আর্থিক খতিয়ান :

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দুর্নীতির আর্থিক খতিয়ান দেখলে অনেকের মাথা ঘুরে যাওয়ার অবস্থা হতে বাধ্য । জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতে , বাংলাদেশে অবৈধ সম্পদের পরিমাণ মোট জাতীয় আয়ের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ । বিআইডিএস - এর সাবেক মহাপরিচালক ড . সদরুল রেজার অনুসন্ধানে দেখা যায় ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে ২৩,৫৮৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে । অর্থমন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে চুরি ও অপপ্রয়োগের মাধ্যমে সরকারি তহবিলের ১৮ হাজার কোটি টাকা তসরূপ করা হয়েছে । এডিবি রিপোর্টে বিগত ৩৫ বছরে এদেশে দুর্নীতি ৬০-৭০ হাজার কোটি টাকার চুরি ও অনিয়ম হয়েছে । বিশ্বব্যাংকের ‘ সাহায্য স্মারক ’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলোদেশে আমদানি - রপ্তানি ক্ষেত্রে শতকরা সাত ভাগ অর্থ ঘুষ দিতে হয় । গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায় , স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বাংলাদেশ যে পরিমাণ বৈদেশিক সাহায্য পেয়েছে তার মাত্র ২৫ ভাগ প্রকৃতপক্ষে সংশ্লিষ্ট খাতে কাজে লাগানো হয়েছে , বাকি ৭৫ ভাগই লুটপাট হয়েছে । ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ( টিআই ) -এর পরিসংখ্যান মতে ১৯৯৫-৯৯ - এর মধ্যে দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রীয় ক্ষতির পরিমাণ ১,৩৬,৪০০ কোটি টাকা । সাম্প্রতিককালে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে তিতাস গ্যাস , পেট্রোবাংলা , বিদ্যুৎ , ওয়াসা , বিআরটিএ , টিএন্ডটি প্রভৃতি বিভাগের শতকরা ৪০ ভাগ আয়ই চলে যায় সংশ্লিষ্ট লোকজনের পকেটে । সম্প্রতি কাস্টমস , তিতাস গ্যাস , বিআরটিএ , বন বিভাগ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের অনেক কোটিপতি পিয়ন দারোয়ানের সন্ধান পাওয়া গেছে ।

বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ :

সর্বগ্রাসী দুর্নীতির পেছনে অনেকগুলো কারণ চিহ্নিত করা যায়।বাংলাদেশে দুর্নীতির কিছু কারণ হচ্ছে-

১. ঐতিহাসিক পটভূমি :

বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ঐতিহাসিক ঐতিহ্য। বাংলাদেশে দুর্নীতির কিছু কারণ হচ্ছে ঔপনিবেশিক শাসনামলে শাসকগোষ্ঠী নিজেরা এদেশের সম্পদ তসরূপ ও পাচার করেছে । বিদেশি শাসকরা নিজেদের স্বার্থেই এদেশে এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগী সৃষ্টি করেছিল , যারা নির্লজ্জভাবে জনগণকে শোষণ ও বঞ্ছনার শিকারে পরিণত করেছিল । ইংরেজ আমলের পর পাকিস্তানিরাও একই পথ অনুসরণ করায় স্বাধীন বাংলাদেশও দুর্নীতির অপচ্ছায়া থেকে মুক্ত হতে পারে নি ।

২. তীব্র দারিদ্র্য :

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের জীবন তীব্র দারিদ্র্যের শিকার । আর্থিক অসচ্ছলতা ও জীবনযাত্রার নিম্নমান মানুষকে দুর্নীতির দিকে ধাবিত করে থাকে । এদেশের অনেক চাকুরে ও শ্রমজীবী মানুষ তার প্রকৃত আয় দিয়ে কায়ক্লেশেও জীবনযাপন করতে পারে না । ফলে তারা অসাধু পন্থা অবলম্বন করতে বাধ্য হয় । বিশেষ করে সাধারণ সরকারি - বেসরকারি কর্মচারীদের নিম্ন বেতন এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে ।

৩. মানুষের মোহান্ধ জীবনদর্শন :

আমাদের দেশে যেকোনো পন্থায় সমাজে প্রতিষ্ঠা পাওয়া কিংবা জৌলুসপূর্ণ জীবনের অধিকারী হবার উচ্চাভিলাষ অনেকের মধ্যে দেখা যায় । এদেশে সম্পদ যেহেতু সামাজিক প্রতিপত্তির মানদণ্ডরূপে গণ্য হয় সেহেতু অনেকে নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে সম্পদ কুক্ষিগত করতে মরিয়া হয়ে ওঠে । উচ্চাভিলাষের মোহে পড়ে অনেকে পদ ও পদবি ব্যবহার করে সম্পদ অর্জনে সচেষ্ট হয় ।

৪. কর্মসুযোগের অভাব :

বাংলাদেশে বেকারত্ব তীব্র । কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪০ ভাগই কাঙ্ক্ষিত কাজ খুঁজে পায় না । বেকারত্বের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সমাজে দুর্নীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে । অনেকে বেকারত্ব ঘোচানোর জন্য ঘুষ বা তদবিরের মাধ্যমে কাজ জোগাড় করে । যেহেতু তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়াটিই হয় অনৈতিকভাবে সেহেতু কর্মজীবনে তারা নীতি - আদর্শ রক্ষা করে না । ঘুষের টাকা উসুল করতে তারা ঘুষকেই উপায় হিসেবে ব্যবহার করে ।

৫ . অসম অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা :

আমাদের দেশে সম্পদকে অসম বণ্টনের ফলে মানুষের শ্রেণিগত ব্যবধান তীব্র । ধনীর সাথে দরিদ্রকে অসম প্রতিযোগিতা করে সমাজে টিকে থাকতে হয় । ফলে হতাশ দরিদ্র শ্রেণি যেকোনো উপায়ে অর্থোপার্জনের মাধ্যমে আত্মপ্রতিষ্ঠা করতে চায় । এর ফলে সে আশ্রয় নেয় দুর্নীতির । তাছাড়া ভোগবাদী প্রবণতাও দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে ।

৬. দেশপ্রেম ও মূল্যবোধের অভাব :

কোনো দেশপ্রেমী মানুষ ব্যক্তিস্বার্থের জন্য দেশের ক্ষতি করতে পারে না । তাছাড়া নৈতিক ও ধর্মীয় চেতনাও দুর্নীতিকে সমর্থন করে না । কিন্তু অধিকাংশ মানুষই দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং নৈতিকতার ধার ধারে না । তারা দুর্নীতি করতে সামান্যও দ্বিধান্বিত হয় না ।

৭ . আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা :

দুর্নীতিবিরোধী আইন থাকলেও তা যুগোপযোগী নয় , আইন প্রয়োগেও রয়েছে শিথিলতা । সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অকার্যকর কাঠামো ও ব্যবস্থাপনা দুর্নীতি ছড়াতে ভূমিকা রাখছে । বিচার বিভাগের দুর্বলতা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সীমাবদ্ধতা দুর্নীতি রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না । তাছাড়া প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই । আমাদের সংসদ ও সংসদীয় কমিটিগুলোও কার্যকর নয় । এর ফলে দুর্নীতি বাড়ছে ।

৮. রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব :

আমাদের দেশের কোনো সরকারই দুর্নীতি নির্মূলে আন্তরিক সদিচ্ছা প্রদর্শন করে নি । উপরন্তু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নিজেরাই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন । ফলে দুর্নীতি দিনে দিনে তীব্র আকার ধারণ করেছে ।

দুর্নীতি প্রতিরোধে করণীয় :

দুর্নীতি বাংলাদেশের জন্য একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি । দুর্নীতি দূর করতে না পারলে আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে পারব না । দুর্নীতি রোধের কতিপয় উপায় নিচে চিহ্নিত করা হলো :

১. সামাজিক আন্দোলন :

দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য তীব্র সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে । সর্বস্তরের জনগণকে এ আন্দোলনে যুক্ত করতে হবে । দুর্নীতিবাজদের করতে হবে সামাজিকভাবে বয়কট । তাহলে দুর্নীতি করে কেউ আর বুক উঁচিয়ে চলতে পারবে না । প্রতিটি পাড়ায় - মহল্লায় দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে ।

২. কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি :

সরকারি - বেসরকারি কর্মকর্তা - কর্মচারীদের বেতন - ভাতা যৌক্তিক পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে । কেউ যেন স্বল্প বেতন - ভাতার অজুহাতে দুর্নীতিকে জায়েজ করতে চেষ্টা করতে না পারে সেদিকটি নিশ্চিত করতে হবে । শিক্ষিত মানুষের জন্য কর্মসুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে দুর্নীতি হ্রাস পাবে ।

৩ . দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি :

সাম্প্রতিককালে দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠিত ও কার্যকর করা হলেও তার লোকবল ও অন্যান্য সুযোগ - সুবিধা পর্যাপ্ত নয় । সেজন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য লোকবল বাড়ানো , উন্নত প্রশিক্ষণ , প্রযুক্তিগত উপকরণ সংগ্রহ প্রভৃতি বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে ।

৪ . প্রতিষ্ঠান কার্যকর করা :

সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে কার্যকর ও দক্ষ করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে । এক্ষেত্রে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । তাছাড়া বিভিন্ন দপ্তরে ও সেবা প্রতিষ্ঠানে কাজের পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে হবে যাতে দুর্নীতি করার সুযোগ না থাকে । এছাড়া জাতীয় সংসদ ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোকেও কার্যকর করার ব্যবস্থা নিতে হবে ।

৫. স্বচ্ছতা , জবাবদিহিতা ও তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণ :

দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য সরকারি কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব দুর্নীতির প্রধান কারণ । গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের তথ্য অধিকার পূরণ হলে দুর্নীতি অনেকাংশে হ্রাস পাবে ।

৫ . দেশাত্মবোধ ও নৈতিকতার উন্নয়ন :

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশাত্মবোধ ও নৈতিক মূল্যবোধের উন্নয়ন ঘটাতে হবে , যাতে কর্মজীবনে প্রবেশ করে কেউ দুর্নীতির মাঝে সম্পৃক্ত না হয় । দুর্নীতি রোধে প্রধান অস্ত্র হওয়া উচিত নীতির প্রয়োগ । দেশকে ভালোবেসে ব্যক্তিস্বার্থ জলাঞ্জলি দেবার চেতনা এক্ষেত্রে বেশি জরুরি ।

৭. অন্যান্য ব্যবস্থা :

দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ করতে হবে । আইনের চোখে সবাই সমান এটা নিশ্চিত করা গেলে দুর্নীতি করতে অনেকেই সাহস পাবে না । এক্ষেত্রে বিচার বিভাগের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে । দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্স আরও জোরদার করতে হবে ।

উপসংহার :

দুর্নীতি আমাদের দেশের জন্য এক ভয়ংকর অভিশাপ । সাম্প্রতিককালে দুর্নীতি প্রতিরোধে কিছু বিপ্লবী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে । বড় বড় দুর্নীতিবাজকে আনা হয়েছে বিচারের আওতায় । ভবিষ্যতে এ উদ্যোগ যাতে অব্যাহত থাকে সে বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে । দুর্নীতি প্রতিরোধ করা গেলে দেশ অবশ্যই উন্নয়নের দিকে সগর্বে এগিয়ে যাবে ।

বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার | প্রবন্ধ রচনা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

© Abc Ideal School. All rights reserved. Developed by Jago Desain