সমাস এবং এর সাহায্যে শব্দ গঠন (বাংলা ব্যাকরণ)
সমাস এবং সমাসের সাহায্যে শব্দ গঠন
সমাস ' শব্দটির অর্থ সংক্ষেপণ । পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুই বা তাতোধিক পদ একসঙ্গে মিলে সমাস হয় । অর্থাৎ অর্থ সম্বন্ধ আছে এমন একাধিক পদ একসঙ্গে যুক্ত হয়ে একপদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে । যেমন : গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে না বলে আমরা গায়েহলুদ বলে থাকি । এতে ভাষা সহজ , সরল , সাবলীল ও শ্রুতিমধুর হয় এবং এর সাহায্যে আমরা নতুন অনেক শব্দও পাই । সমাসের রীতি সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে । তবে খাঁটি বাংলা সমাসের দৃষ্টান্তও প্রচুর পাওয়া যায় ।
সমাস - সংক্রান্ত পরিভাষা
সমস্যমান পদ : যেসব পদ মিলে সমাস হয় তার প্রত্যেকটিকে সমস্যমান পদ বলে । যেমন : জেল থেকে খালাস = জেলখালাস । এখানে জেল ’ , ‘ থেকে ’ ও ‘ খালাস'- এ তিনটি সমস্যমান পদ ।
সমস্তপদ : সমস্যমান পদগুলাে দ্বারা যে একটি পদ গঠিত হয় , তাকে সমস্তপদ বলে । একে সমাসবদ্ধ পদও বলা হয় । যেমন : জেলখালাস ' একটি সমস্তপদ ।
ব্যাসবাক্য :সমস্যমান পদগুলাে মিলে যে বাক্য বা বাক্যাংশ গঠিত হয় তাকে ব্যাসবাক্য বলে । অন্যকথায় , সমস্তপদকে বিশ্লেষণ করলে যে বাক্য বা বাক্যাংশ পাওয়া যায় তাকে ব্যাসবাক্য বলে । যেমন : জেলখালাস ' সমস্তপদটির ব্যাসবাক্য হচ্ছে জেল থেকে খালাস ' । ব্যাসবাক্যের অন্য দুটো নাম “ বিগ্রহবাক্য ' ও ' সমাসবাক্য ' । তবে ব্যাসবাক্য পরিভাষাটি বেশি প্রচলিত ।
পূর্বপদ : সমস্তপদে সাধারণত দুটো পদ থাকে । প্রথম পদটিকে পূর্বপদ বলে । যেমন : ‘ জেলখালাস ' সমস্তপদে পূর্বপদ হচ্ছে ‘ জেল ’ ।
পরপদ : সমস্তপদের দ্বিতীয় বা শেষ পদটিকে বলা হয় পরপদ বা উত্তরপদ । যেমন : জেলখালাস ’ শব্দে ‘ খালাস ’ পরপদ।
সমাসের প্রয়ােজনীয়তা
দীর্ঘ বাক্য অনেক সময় শ্রুতিমধুর হয় না । সমাস দীর্ঘ বাক্যাংশকে সংক্ষিপ্ত করে তাকে সহজ , সরল ও শ্রুতিমধুর করে তােলে । যেমন : গায়ে হলুদ দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে , না বলে গায়েহলুদ ' বললে শব্দটি সংক্ষিপ্ত , সাবলীল ও শুতিমধুর হয় । তেমনি , ‘ চৌরাস্তার সমাহার ‘ যিনি গণ্য তিনি মান্য ' এর স্থলে ' চৌরাস্তা ’ ও ‘ গণ্যমান্য ' শব্দগুলাে অধিক শ্রুতিমধুর । সুতরাং বােঝাই যাচ্ছে , বাংলা ভাষাকে সংক্ষিপ্ত , সুন্দর ও শ্রুতিমধুর করার জন্য সমাসের প্রয়ােজনীয়তা সমধিক । তাছাড়া সমাসের সাহায্যে অনেক নতুন শব্দ গঠিত হয় । এটি শব্দ তৈরি ও প্রয়ােগের একটি বিশেষ রীতি ।
সমাস ও সন্ধির মধ্যে পার্থক্য ও মিল
কাছাকাছি অবস্থিত দুটো ধ্বনির মিলনের নাম সন্ধি । কিন্তু সমাস হচ্ছে অর্থ - সম্পর্কযুক্ত দুই বা তার বেশি পদের এক পদে পরিণত হওয়া । সন্ধিতে যেহেতু ধ্বনির মিলন ঘটে , কাজেই এটি একটি উচ্চারণগত ব্যাপার । আর সমাসে মিলন ঘটে দুই বা তার বেশি পদের , সুতরাং অর্থগত দিকটি এতে প্রধান । সমাস এবং সন্ধি উভয়ের ফলেই ভাষা সহজ , সরল , সংক্ষিপ্ত ও শ্রুতিমধুর হয় এবং নতুন নতুন শব্দের সৃষ্টি হয় । কখনও কখনও একই ক্ষেত্রে সমাস এবং সন্ধি দুটো প্রক্রিয়াই সংঘটিত হয় । যেমন :
সন্ধি :- বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়
সমাস : বিদ্যার জন্যে আলয় = বিদ্যালয়
সন্ধি :- তপঃ + বন = তপােবন
সমাস :- তপের জন্য বন = তপােবন
সন্ধি :- বিপদ + জাল = বিপজ্জাল
সমাস :- বিপদের দ্বারা নির্মিত জাল = বিপজ্জনক
সমাসের শ্রেণি
সমাস ছয় প্রকার । যেমন :
১. দ্বন্দ্ব, ২. দ্বিগু, ৩. অব্যয়ীভাব, ৪. তৎপুরুষ, ৫. কর্মধারয়, ৬. বহুব্রীহি।
দ্বন্দ্ব সমাস
সংযােজক অব্যয়( ও, এবং, আর ) লােপ পেয়ে সকল পদের অর্থের প্রাধান্য বজায় রেখে যে সমাস হয় , তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন:-
পশু ও পাখি = পশুপাখি
ছেলে ও মেয়ে = ছেলেমেয়ে
ভাই ও বােন = ভাইবােন
দেখে ও শুনে = দেখেশুনে
লাল ও নীল = লাল - নীল
পড়া ও লেখা = পড়ালেখা
মাতা ও পিতা = মাতাপিতা
দ্বন্দ্ব সমাসের প্রকারভেদ -
সমাস নানারকম হতে পারে । যেমন :
মিলনার্থক দ্বন্দ্ব : কজাকাছি অর্থ - সম্পর্কযুক্ত একাধিক পদের মিলনে যে দ্বন্দ্ব সমাস গঠিত হয় , তাকে মিলনার্থক দ্বন্দ্ব বলে । যেমন :
মাসি ও পিসি = মাসি - পিসি
সােনা ও রুপা = সােনারূপা
চন্দ্র ও সূর্য = চন্দ্রসূর্য
চোখ ও কান = চোখকান
কাগজ ও কলম = কাগজ - কলম
সমার্থক দ্বন্দ্ব : যে দ্বন্দ্ব সমাস এই অর্থবিশিষ্ট পদ বা সমার্থক পদ দ্বারা গঠিত হয় , তাকে সমার্থক দ্বন্দ্ব সমাস বলে । যেমন :
টাযকা ও পয়সা = টাকাপয়সা
মান ও সম্মান = মানসম্মান
ধন ও দৌলত = ধনদৌলত
ঘর ও বাড়ি = ঘরবাড়ি
জন ও মানব = জনমানব
হাট ও বাজার = হাটবাজার
বিরােধার্থক দ্বন্দ্ব : যে দ্বন্দ্ব সমাস বিপরীত অর্থবােধক পদ দ্বারা গঠিত হয় , তাকে বিরােধার্থক দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন:
স্বর্গ ও নরক = স্বর্গরক
ভালাে ও মন্দ = ভালােমন্দ
দেনা ও পাওনা = দেনাপাওনা
জন্ম ও মৃত্যু = জন্মমৃত্যু
সুখ ও দুঃখ = সুখদুঃখ
অহি ও নকুল = অহি - নকুল
অলুক দ্বন্দ্ব : যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদের বিভক্তি লুপ্ত না হয়ে সমস্ত পদেও যুক্ত থাকে , তাকে অলুক বা অলোপ দ্বন্দ্ব সমাস বলে । যেমন :
সাপে ও নেউলে = সাপেনেউলে
জলে ও স্থলে = জলে - স্থলে
পথে ও প্রান্তরে = পথে - প্রান্তরে
বনে ও বাদাড়ে = বনেবাদাড়ে
দুধে ও ভাতে = দুধে - ভাতে
হেসে ও খেলে = হেসেখেলে
ইত্যাদি অর্থে দ্বন্দ্ব : পরপদে পূর্বপদের আংশিক পরিবর্তন দ্বারা যে দ্বন্দ্ব সমাস হয় , তাকে ইত্যাদি অর্থে দ্বন্দ্ব সমাস বলে । যেমন:
ঠিক ও ঠাক = ঠিকঠাক
পােশাক ও আশাক = পােশাক - আশাক
আলাপ ও সালাপ = আলাপ - সালাপ
বকা ও বঝা = বকাঝকা
বাসন ও কোসন = বাসনকোসন
কাপড় ও চোপড় = কাপড় - চোপড়
বহুপদী দ্বন্দ্ব : তিন বা বহু পদে দ্বন্দ্ব সমাস হলে তাকে বহুপদী স্বন্দ্ব সমাস বলে । যেমন :
টক , আল ও মিষ্টি = টক - ঝাল - মিষ্টি
পদ্মা , মেঘনা ও যমুনা = পদ্মা - মেঘনা - যমুনা
সাহেব বিবি ও গােলাম = সাহেব - বিবি - গােলাম
হাত , পা , নাক , মুখ ও চোখ = হাত - পা - নাক - মুখ - চোখ
চন্দ্র , সূর্য , গ্রহ ও তারা = চন্দ্র - সূর্য - গ্রহ - তারা
সকাল , দুপুর ও সন্ধ্যা = সকাল - দুপুর - সন্ধ্যা
দ্বিগু সমাস
সমাহার বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয় তাকে দ্বিগু সমাস বলে । দ্বিগু সমাসে সমাস নিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্য পদ হয় । যেমন:-
অষ্টধাতুর সমাহার = অষ্টধাতু।
শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী
চার রাস্তার সমাহার = চৌরাস্তা
ত্রি ফলের সমাহার = ত্রিফলা
সপ্ত অহের সমাহার = সপ্তাহ
পঞ্চ ভূতের সমাহার = পঞ্চভূত
নব রত্নের সমাহার = নবরত্ন
সতর্কতা : পূর্বপদের সংখ্যাবাচক বিশেষণ পদটি সমাহার বা সমষ্টি না বােঝালে দ্বিগু সমাস হয় না । এরকম ক্ষেত্রে ছন্দ , কর্মধারয় বা বহুব্রীহি সমাস হয় । যেমন :
দ্বন্দ্ব : সাত ও পাচ = সাত - পাঁচ ( উভয় পদের অর্থ প্রধান )
কর্মধারয় : চতুঃ বাহিত দোলা = চতুর্দোলা ( পরপদের অর্থ প্রধান )
বহুব্রীহি : সে [তিন] তার আছে এমন = সেতার ( তৃতীয় অর্থ প্রধান )
অব্যয়ীভাব সমাস
যে সমাসে পূর্বপদে অব্যয় থাকে এবং অব্যয়ের অর্থই প্রাধান্য পায় তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে । যেমন :
জেলার ক্ষুদ্র = উপজেলা
কন্ঠের সমীপে = উপকণ্ঠ
মিলের অভাব = গরমিল ।
নানা অর্থে ব্যয়ীভাব সমাস হয়ে থাকে । যেমন :
ক) সামীপ্য অর্থে : কণ্ঠের সমীপে = উপকণ্ঠ , কূলের সমীপে = উপকূল ।
খ) সাদৃশ্য অর্থে : গ্রহের তুল্য = উপগ্রহ , বনের সদৃশ = উপবন।
গ) অভাব অর্থে : উৎসাহের অভাব = নিরুৎসাহ , আমিষের অভাব = নিরামিষ।
ঘ) যােগ্যতা অর্থে : প্রেরণার যােগ্য = অনুপ্রেরণা , রূপের যোগ্য = অনুরূপ ।
ঙ) বীপ্সা অর্থে : দিন দিন = প্রতিদিন , ক্ষণ ক্ষণ = অনুক্ষণ ।
চ) অতিক্রান্ত অর্থে : শৃঙ্খলাকে অতিক্রান্ত = উচ্ছৃঙ্খল, বেলাকে অতিক্রান্ত = উদ্বেল ।
ছ) বিরোধ অর্থে : বিরুদ্ধ বাদ = প্রতিবাদ , বিরুদ্ধ কূল = প্রতিকূল।
জ) ঈষৎ অর্থে : ঈষৎ নত = আনত , ঈষৎ রক্তিম = আরক্তিম।
ঝ) পশ্চাৎ অর্থে : পশ্চাৎ গমন = অনুগমন , পশ্চাৎ ধাবন = অনুধাবন ।
ঞ) পর্যন্ত অর্থে : সমুদ্র থেকে হিমাচল পর্যন্ত = আসমুদ্রহিমাচল , পা থেকে মাথা পর্যন্ত = আপাদমস্তক।
ট) অনতিক্রম্যতা অর্থে : বিধিকে অতিক্রম না করে = যথাবিধি , সাধ্যকে অতিক্রম না করে = যথাসাধ্য ।
তৎপুরুষ সমাস
যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধান বলে বিবেচিত হয় এবং পূর্বপদের দ্বিতীয়াদি ( দ্বিতীয় - সপ্তমী ) বিভক্তি লােপ পায় , তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন : বইকে পড়া = বই পড়া । এখানে ‘ কে ’ বিভক্তি লােপ পেয়েছে এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে ।
তৎপুরুষ সমাসের শ্রেণি : তৎপুরুষ সমাস ৯ প্রকার হয়ে থাকে । যেমন :
১ . দ্বিতীয়া তৎপুরুষ : পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি ( কে , রে ) লােপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় , তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন :
বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্
ফুলকে তােলা = ফুলতােলা
গুণকে টানা = গুনটানা
কাপড়কে কাচা = কাপড়কাচা
মাথাকে গোঁজা = মাথাগোঁজা
দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত
লক্ষণীয় : ব্যাপ্তি অর্থেও দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয় । যেমন :
চিরকাল ব্যাপীয়া সুখী = চিরসুখী
দীর্ঘকাল ব্যাপী স্থায়ী = দীর্ঘস্থায়ী
ক্ষণকাল ব্যাপী স্থায়ী = ক্ষণস্থায়ী
চিরকাল ব্যাপী কৃতজ্ঞ = - চিরকৃতজ্ঞ
চিরকাল ব্যাপী স্মরণীয় = চিরস্মরণীয়
জীবন ব্যাপী আনন্দ = জীবনানন্দ
২ . তৃতীয়া তৎপুরষ : পূর্বপদের তৃতীয়া বিভক্তি ( দ্বারা , দিয়া , কর্তৃক ) লােপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় , তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলা হয় । যেমন :
কুসুম দ্বারা আস্তীর্ণ = কুসুমাস্তীর্ণ
মধু দিয়ে মাখা = মধুমাখা
মন দিয়ে গড়া = মনগড়া
শ্রম দ্বারা সৰ্ধ = শ্রম
শােক দ্বারা আকুল = শােকাকুল
মেঘ দ্বারা আচ্ছন্ন = মেঘাচ্ছন্ন
লক্ষণীয় : পরপদে হীন , পূর্ণ , শূন্য ইত্যাদি থাকলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয় । যেমন :
জ্ঞান দ্বারা হীন = অজ্ঞানহীন
জ্ঞান দ্বারা শূন্য = জ্ঞানশূন্য
জন দ্বারা শূন্য = জনশূন্য
বিদ্যা দ্বারা হীন = বিদ্যাহীন
এক দ্বারা উন = একোন
জন দ্বারা হীন = জনহীন
পাঁচ দ্বারা কম = পাঁচ কম
বায়ু দ্বারা পূর্ণ = বায়ুপূর্ণ
৩ . চতুর্থী তৎপুরুষ : পূর্বপদের চতুর্থী বিভক্তি ( কে , রে ) লােপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় , তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে ।যেমন:
হজের নিমিত্তে যাত্রা = হজযাত্রা
বিয়ের জন্য পাগলা = বিয়েপাগলা
তপের নিমিত্ত বন = তপােবন
দেবকে দত্ত = দেবদত্ত
পাঠের জন্য কক্ষ= পাঠকক্ষ
এতিমের জন্য খানা = এতিমখানা
৪. পঞ্চমী তৎপুরুষ : পূর্বপদের পঞ্চমী বিভক্তি ( হতে , থেকে, চেয়ে ) লােপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন:
রােগ থেকে মুক্তি = রােগমুক্তি
জেল থেকে মুক্ত = জেলমুক্ত
খাঁচা থেকে ছাড়া = খাঁচাছাড়া
বিলাত থেকে ফেরত = বিলাতফেরত
মেঘ থেকে মুক্ত = মেঘমুক্ত
গ্রাম হতে ছাড় = গ্রামছাড়া
৫. ষষ্ঠী তৎপুরুষ : পূর্বপদের ষষ্ঠী বিভক্তি ( র , এর ) লােপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় , তাকে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন:
চায়ের বাগান = চাবাগান
রাজার প্রাসাদ = রাজপ্রাসাদ
ভােটের অধিকার = ভােটাধিকার
রাষ্ট্রের পতি = রাষ্ট্রপতি
কর্মের ফল = কর্মফল
রাজার পুত্র = রাজপুত্র
লক্ষণীয় : এ সমাসে সম্বন্ধপদটি পরপদ হিসেবেও বসতে পারে । যেমন :
বিড়ালের ছানা = বিড়ালছানা
দেশের সেবা = দেশসেবা
অহ্নের পূর্ব = পূর্বাহ্ণ
হংসের রাজা = রাজহংস
৬ . সপ্তমী তৎপুরুষ : পূর্বপদের সপ্তমী বিভক্তি ( এ , য় , তে ) লােপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় , তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলা হয় । যেমন :
দিবায় নিদ্রা = দিবানিদ্রা
গৃহে বন্দি = গৃহবন্দি
মাথায় ব্যথা = মাথাব্যথা
রাতে কানা = রাতকানা
বনে ভােজন = বনভােজন
ধর্মে বিশ্বাস = ধর্মবিশ্বাস
৭. উপপদ তৎপুরুষ : কোনাে শব্দকে বিশ্লেষণ করলে যদি আলাদা একটি পদ , একটি ধাতু ও একটি কৃৎ প্রত্যয় পাওয়া যায় , তবে ওই পদকে উপপদ বলা হয় । যেমন : বাস্তুহারা । শব্দকে বিশ্লেষণ করলে পাই- বাস্তু + √হার + আ । এখানে বাস্তু ' উপপদ । উপপদের সঙ্গে কৃদন্ত পদের সমাসকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলা হয় । কোনাে কোনাে কৃদন্ত পদ ( কৃৎ প্রত্যয় - সাধিত পদ ) স্বাধীনভাবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে না , অন্য শব্দ বা উপসর্গের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হয় । উপসর্গ ছাড়া অন্য যে শব্দের সঙ্গে এগুলাে যুক্ত হয় , তাকে বলে উপপদ । এ উপপদের সঙ্গে কৃদন্ত পদের সমাসকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন :
পকে জন্মে এমন = পঙ্কজ
সত্য বলে যে = সত্যবাদী
জল দেয় যে = জলদ
জাদু করে এমন = জাদুকর
গৃহে থাকে এমন = গৃহস্থ
৮ . অলুক তৎপুরুষ : যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি লােপ পায় না , তাকে অলুক বা অলােপ তৎপুরুষ সমাস বলে । তৎপুরুষ সমাসের যতগুলাে শ্রেণি রয়েছে , অলুক তৎপুরুষ তার প্রায় সব রকমই হতে পারে । যেমন :
অলুক তৃতীয়া তৎপুরুষ-
ঘি দিয়ে ভাজা = ঘিয়ে ভাজা
ভােরের পাখি = ভােরের পাখি
কল দ্বারা ছাঁটা = কলে - ছাঁটা
মাটির মানুষ = মাটির মানুষ
অলুক চতুর্থী তৎপুরুষ-
চায়ের জন্য কাপ = চায়ের কাপ
পড়ার জন্য টেবিল = পড়ার টেবিল
অলুক পঞ্চমী তৎপুরুষ-
চোখ থেকে জল = চোখের জল
কল থেকে পানি = কলের পানি
অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ -
খবরের কাগজ = খবরের কাগজ
অলুক সপ্তমী তৎপুরুষ-
কলেজে পড়া = কলেজে পড়া
দিনে ডাকাতি = দিনে ডাকাতি
অলুক উপপদ-
খ - তে চরে এমন = খেচর
পথে নেমেছে এমন = পাথে - নামা
বানে ভেসেছে এমন = বানে - ভাসা
৯. নঞ তৎপুরুষ : যে তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদে একটি না - বােধক অব্যয় অথবা উপসর্গ এবং পরপদে বিশেষ্য বা বিশেষণ থাকে , তাকে নঞ তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন :
ন আচার = অনাচার
নয় অতি বৃহৎ = নাতিবৃহৎ
ন কাতর = অকাতর
নয় অতি দীর্ঘ = নাতিদীর্ঘ
ন কাল = আকাল
নয় অতি শীত ও উষ্ণ = নাতিশীতােষ্ণ
নয় আবাদী = অনাবাদী
নয় চেনা = অচেনা
নয় উর্বর = অনুর্ব
নয় রাজি = নারাজি
নয় আদর = অনাদর
নয় আশা = নিরাশা
নয় বৃষ্টি = অনাবৃষ্টি
নয় আমিষ = নিরামিষ
নয় সৃষ্টি = অনাসৃষ্টি
নয় উৎসাহিত = নিরুৎসাহিত
নয় ধােয়া = আধােয়া
নয় দেশ = বিদেশ
ন বিশ্বাস = অবিশ্বাস
নয় সদৃশ = বিসদৃশ
নয় কাল = আকাল
নয় ভুঁই = বিভুঁই
নয় মিল = গরমিল
নয় আইনি = বেআইনি
নয় হাজির = গরহাজির
নয় হিসাব = বেহিসাব
নয় রাজি = গররাজি
ন লৌকিক = অলৌকিক
কর্মধারয় সমাস
পরপদের অর্থ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষ্যভাবাপন্ন পদের মিলনে যে সমাস হয় , তাকে কর্মধারয় সমাস বলে । যেমন : নীল এমন আকাশ = নীলাকাশ । এখানে নীল ’ শব্দটি আকাশকে বিশেষিত করেছে এবং আকাশের অর্থই প্রধান ।
→এ সমাসের পূর্বপদ প্রায়ই বিশেষণ হয়ে থাকে । তবে কখনাে বিশেষ্যও হতে পারে । যেমন : সিদ্ধ এমন আলু = আলুসিদ্ধ । এক্ষেত্রে পরপদটি বিশেষণ স্থানীয় এবং তা পূর্বপদকে বিশেষিত করে ।
→কখোন এ সমাসে উভয় পদ বিশেষ্য কিংবা বিশেষণও হতে পারে । যেমন : বিশেষ্য - বিশেষ্য : ফুলের মতাে কপি = ফুলকপি
→এখানে পূর্বপদ বিশেষ্য হলেও তা পরপদের বিশেষণের মতােই কাজ করেছে । বিশেষণ - বিশেষণ : ঘন এমন সবুজ = ঘনসবুজ
→এখানে পূর্ববর্তী বিশেষণটি পরবর্তী বিশেষণের বৈশিষ্ট্য - দ্যোতক হয়ে উঠেছে ।
কর্মধারয় সমাসের শ্রেণি
কর্মধারয় সমাসের কয়েকটি শ্রেণি রয়েছে । যেমন : সাধারণ কর্মধারয় , মধ্যপদলােপী কর্মধারয় , উপমান কর্মধারয় , উপমিত কর্মধারা , রূপক কর্মধারয় ।
ক . সাধারণ কর্মধারয় : মধ্যপদলােপী , উপমান , উপমিত ও রূপক কর্মধারয় সমাস ছাড়া অন্যান্য কর্মধারয় সমাসকে সাধারণ হিসেবে গণ্য করা হয় । সমাসবদ্ধ শব্দে বিশেষ্য ও বিশেষণের অবস্থান অনুসারে সাধারণ কর্মধারয় সমাসের কয়েকটি ভিন্নতা লক্ষ করা যায় । যেমন :
বিশেষণ - বিশেষ্য
মহান যে নবি = মহানবি
গুণী এমন জন = গুণীজন
ছিন্ন এমন পত্র = ছিন্নপত্র
বিশেষ্য - বিশেষণ
ভাজা এমন চাল = চালভাজা
পড়া এমন তেল = তেলপড়া
ভাজা এমন মাছ = মাছভাজা
বিশেষণ - বিশেষণ
যেমন গণ্য তেমন মান্য = গণ্যমান্য
কাচা তবু মিঠে = কাঁচামিঠে
যে চালাক সেই চতুর = চালাকচতুর
বিশেষ্য - বিশেষ্য
যিনি গুরু তিনি দেব = গুরুদেব
যিনি গিন্নি তিনি মা = গিন্নি - মা
যিনি জজ তিনি সাহেব = জজসাহেব
খ . মধ্যপদলােপী কর্মধারয় : যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদ লােপ পায় , তাকে মধ্যপদলােপী কর্মধারয় সমাস বলে । যেমন :
সাহিত্য বিষয়ক সভা = সাহিত্যসভা
স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ = স্মৃতিসৌধ
সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন
গীতি সংবলিত কবিতা = গীতিকবিতা
সন্ধ্যায় জ্বালানাে প্রদীপ = সন্ধ্যাপ্রদীপ
আয়ের ওপর ধার্য কর = আয়কর
গ . উপমান কর্মধারয় : উপমান অর্থ তুলনীয় বস্তু । প্রত্যক্ষ কোনাে বস্তুর সাথে পরােক্ষ কোনাে বস্তুর তুলনা করলে প্রত্যক্ষ বস্তুটিকে বলা হয় উপমেয় , আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে তাকে বলা হয় উপমান । উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে সবসময় একটি সাধারণ ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য থাকবে । যেমন : কাজলের মতাে কালাে = কাজলকালাে ।
এখানে উপমেয় - বিশেষ্যের উল্লেখ নেই । তা হতে পারে চুল কিংবা মেঘ । কাজলের সঙ্গে তুলনা দেওয়া হচ্ছে বলে ' কাজল ’ এখানে উপমান - বিশেষ্য , এবং কালাে সাধারণ ধর্মবােধক বিশেষণ পদ । সাধারণ ধর্ম কালােত্বসূচক বৈশিষ্ট্যটি কাজল ও চুল উভয় বস্তুতেই বিদ্যমান । এরকম :
তুষারের ন্যায় শুভ্র = তুষারশুভ্র
কুসুমের মতাে কোমল = কুসুমকোমল
অরুণের মতাে রাঙা = অরুণরাঙা
ভ্রমরের ন্যায় কৃষ্ণ কেশ = ভ্রমরকৃষ্ণ কেশ
তুষারের ন্যায় ধবল = তুষারধবল
বরফের মতাে শীতল = বরফশীতল
ঘ. উপমিত কর্মধারয় : যে কর্মধারয় সমাসে একটি উপমান - বিশেষ্য ও একটি উপমেয় - বিশেষ্য থাকে , তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে । এতে সাধারণ ধর্মনির্দেশক বিশেষণ পদের উল্লেখ থাকে না । যেমন : মুখ চন্দ্রের ন্যায় = মুখচন্দ্র। এখানে ‘ চাঁদ ’ উপমান বিশেষ্য , ‘ মুখ ’ উপমেয় বিশেষ্য , এবং উভয়ের সুষমা সাধারণ ধর্ম , কিন্তু সমস্তপদে তার উল্লেখ নেই । এরকম :
পুরুষ সিংহের ন্যায় = সিংহপুরুষ
মুখ চন্দ্রের ন্যায় = চন্দ্রমুখ
কথা অমৃতের তুল্য = কথামৃত
সোনার মতাে মুখ = সােনামুখ
ফুলের মতাে কুমারী = ফুলকুমারী
চরণ পদ্মের ন্যায় = ' চরণপদ্ম
ঙ. রূপক কর্মধারয় : যে কর্মধারয় সমাসে পূর্বপদ উপমেয় - বিশেষ্য ও পরপদ উপমান - বিশেষ্যের মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হয় , অর্থাৎ কোনাে পার্থক্য করা হয় না , তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে । এ সমাসে উপমেয় পদ পূর্বে বসে এবং উপমান পদ পরে বসে এবং সমস্যমান পদে ‘ রূপ ' অথবা ' ই ' যােগ করে ব্যাসবাক্য গঠন করা হয় । যেমন : জ্ঞান রূপ আলােক = জ্ঞানালােক । এখানে ' জ্ঞান ' উপমেয় - বিশেষ্য , ‘ আলােক উপমান - বিশেষ্য , কিন্তু দুয়ের মধ্যে পার্থক্য এত কম যে , দুটোকে অভিন্ন মনে হয় । যেন জ্ঞানই আলাে হয়ে মনের আঁধার দূর করে । এরকম :
ক্রোধ রূপ অনল = ক্রোধানল
পরান রূপ পাখি = পরানপাখি
বিষাদরূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধু
মন রূপ মাঝি = মনমাঝি
প্রাণ রূপ বায়ু = প্রাণবায়ু
যৌবন রূপ সূর্য = যৌবনসূর্য
সংসার রূপ সাগর = সংসারসাগর
দেহ রূপ পিঞ্জার = দেহপিঞ্জর
বহুব্রীহি সমাস
বহুব্রীহি ' নামটিই এর স্বরূপের আভাস দেয় । ব্রীহি ' শব্দের অর্থ ‘ ধান । কিন্তু বহুব্রীহি শব্দটি বহু ধান ’ নয় বরং বহু ধান আছে এমন অর্থাৎ ধনী ব্যক্তিকে বােঝায় । যে সমাসে সমস্তপদ দ্বারা সমস্যমান পদগুলাের কোনােটির অর্থ বুঝিয়ে অন্য কোনাে অর্থ বােঝায় , তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে । যেমন : বীণা পাণিতে যার = বীণাপাণি । এখানে বীণা অথবা পাণি ( হাত ) । কোনােটার অর্থ না বুঝিয়ে দেবী সরস্বতীকে বােঝানাে হয়েছে । তেমনি দশ আনন যার = দশানন । এখানে দশ বা আনন ( মুখ ) না বুঝিয়ে লঙ্কার রাজা রাবণকে বােঝানাে হয়েছে । বহুব্রীহি সমাসে সাধারণত যার , যাতে ইত্যাদি শব্দ ব্যাসবাক্য রূপে ব্যবহৃত হয় ।
বহুব্রীহি সমাসের শ্রেণি
বহুব্রীহি সমাসের কয়েকটি শ্রেণি রয়েছে । যেমন :
ক . সাধারণ বহুব্রীহি : যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য , তাকে সাধারণ বহুব্রীহি সমাস বলে । এর অন্য নাম সমানাধিকরণ বহুব্রীহি । কিন্তু অধিকরণের সঙ্গে সরাসরি কোনাে সম্পর্ক নেই বলে একে সমানাধিকরণ না বলাই ভালাে । যেমন:
স্বল্প আয়ু যার = স্বল্পায়ু
মন্দ ভাগ্য যার = মন্দভাগ্য
মহৎ আশয় যার = মহাশয়
অল্প বয়স যার = অল্পবয়স্ক
বিশাল অক্ষি যার = বিশালাক্ষ
নীল বসন যার = নীলবসনা
লক্ষণীয় -১ : বহুব্রীহি সমাসে কখনাে কখনাে ‘ ক ’ প্রত্যয় যুক্ত হয় । যেমন : অল্পবয়স্ক , সদর্থক ।
লক্ষণীয় -২ : আ - কারান্ত ও ই - কারান্ত স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ বহুব্রীহি সমাসের পরপদ হলে তা অ - কারান্ত হয় । যেমন : হতাশ , ভগ্নশাখ , বিশালাক্ষ । কিন্তু কর্মধারয় সমাস হলে আ - কার ও ই - কার বজায় থাকে । যেমন : হত এমন আশা = হতাশা ; ভগ্ন এমন শাখা = ভগ্নশাখা ।
• সাধারণ বহুব্রীহি সমাসে কখনাে কখনাে পূর্বপদ বিশেষ্য এবং পরপদ বিশেষণ হয়ে থাকে । যেমন : মাথা খারাপ যার = মাথাখারাপ
ঠোট কাটা যার = ঠোটকাটা
ঘর পােড়া যার = ঘরপােড়া
লেজ কাটা যার = লেজকাটা
• কোনাে কোনাে সাধারণ বহুব্রীহিতে দুটো পদই বিশেষ্য হয় । যেমন : দিক অম্বর যার = দিগম্বর
নদী মাতা যার = নদীমাতৃক
কঙ্কাল সার যার = কঙ্কালসার
পেট সর্বস্ব যার = পেটসর্বস্ব
খ . ব্যধিকরণ বহুব্রীহি : বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ এবং পরপদ কোনােটিই যদি বিশেষণ না হয় , তবে তাকে বলে ব্যধিকরণ বহুব্রীহি । বহুব্রীহি সমাসে একটি পদ অন্যটির অধিকরণ কারক স্থানীয় হয় । যেমন : আশীতে বিষ যার = আশীবিষ । এখানে ‘ আশী ' ও বিষ ’ দুটো পদই বিশেষ্য এবং আশী বিষের অধিকরণ কারক - স্থানীয় অর্থাৎ আশীতে বিষের অবস্থান । এরকম :
বীণা পাণিতে যার = বীণাপাণি
দুই কান কাটা যার = দু কানকাটা
কথা সর্বস্ব যার = কথা সর্বস্ব
পদ্ম নাভিতে যার = পদ্মনাভ
রত্ন গর্ভে যার = রত্নগর্ভা
কর্ণে ফুল যার = কর্ণফুলি
গ . ব্যতিহার বহুব্রীহি : যে বহুব্রীহি সমাসের পরপদে পূর্বপদের পুনরুক্তির মাধ্যমে ক্রিয়ার পারস্পরিক অর্থাৎ পাল্টাপাল্টি ক্রিয়া বােঝানাে হয় , তাকে ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস বলে । পূর্বপদ আ বা ও - কারান্ত এবং পরপদ ই - কারান্ত হয় । যেমন :
লাঠিতে লাঠিতে যে যুদ্ধ = লাঠালাঠ
রক্তে রক্তে যে লড়াই = রক্তারক্তি
কোলে কোলে যে মিলন = কোলাকুলি
হাতে হাতে যে যুক্ত = হাতাহাতি
চুলে চুলে যে লড়াই = চুলােচুলি
খুনে খুনে যে লড়াই = খুনােখুনি ।
ঘ . মধ্যপদলােপী বহুব্রীহি : যে বহুব্রীহি সমাসে মাঝখানের বা শেষের এক বা একাধিক পদ লােপ পায় , তাকে মধ্যপদলােপী বহুব্রীহি সমাস বলে । একে অন্ত্যপদলােপী বহুব্রীহি সমাসও বলা হয় । যেমন :
হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = হাতেখড়ি
বউয়ের সম্মানে ভাত খাওয়ানাে হয় যে অনুষ্ঠানে = বউভাত
রাখী বেঁধে ভাই সম্পর্ক পাতানাে হয় যার সঙ্গে = রাখীভাই
ঙ. নঞ বহুব্রীহি : যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদে একটি না - বাচক অব্যয় ও পরপদে বিশেষ্য থাকে , তাকে ন বহুব্রীহি সমাস বলে । যেমন :
অ / অন :
অ [হয় না ] মূল্য যার = অমূল্য
অ [ নেই ] চেতনা যার = অচেতন
অ [ নেই ] জ্ঞান যার = অজ্ঞান
নিঃ :
নিঃ [ নেই ] বােধ যার = নির্বোধ
নিঃ [ নেই ] অর্থ যার = নিরর্থক
নিঃ ( নেই ] জন যেখানে = নির্জন
না :
না [ নেই ] চারা যার = নাচার
না [নয়] রাজি যে = নারাজ
না [ নেই ] হক যাতে = না - হক
বি :
বি [ নেই ] শ্রী যার = বিশ্রী
বি [ গত ] পত্নী যার = বিপত্নীক
বে :
বে [ নেই ] হায়া যার = বেহায়়া
বে [ নেই ] তার যার = বেতার
বে [ নেই ] সুর যাতে = বেসুরাে
নি :
নি [ নেই ] লাজ যার = নিলাজ
নি [ নেই ] খুঁত যাতে = নিখুঁত
নি [ নেই ] খোজ যার = নিখোঁজ
চ . সহাৰ্থক বহুব্রীহি : যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদে 'সহ ’ শব্দ বা সহ অর্থে স - উপসর্গ এবং পরপদে বিশেষ্য থাকে , তাকে সহাৰ্থক বহুব্রীহি সমাস বলে । যেমন :
পত্নীসহ বর্তমান = সপত্নীক
পরিবারসহ বর্তমান = সপরিবার
প্রসঙ্গাসহ বর্তমান = সপ্রসঙ্গ
হৃদয়সহ বর্তমান = সহৃদয়
সহ [ সমান ] তীর্থ যার = সতীর্থ
অপেক্ষাসহ বর্তমান = সাপেক্ষ
ছ. সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি : যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদে একটি সংখ্যাশব্দ ও পরপদে একটি বিশেষ্য থাকে , তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস বলে । যেমন :
চৌ চাল যে ঘরের = চৌচালা
দশ মণ ওজন যার = দশমণি
বিশ গজ দৈর্ঘ্য যার = বিশগজি
চতুর্দশ পদ যার = চতুর্দশপদী
পঞ্চ আনন যার = পঞ্চানন
সে [ তিন ]তার যার = সেতার
জ . উপমাপ্রধান বহুব্রীহি : যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদে উপমান ও পরপদে উপমেয় ভাবাপন্ন বিশেষ্য থাকে , তাকে উপমাপ্রধান বহুব্রীহি সমাস বলে । যেমন :
চাদের মতাে মুখ যার = চাদমুখ
ঘরের দিকে মুখ যার = ঘরমুখাে
কোকিলের কণ্ঠের মতাে কণ্ঠ যার = কোকিলকণ্ঠী
কপােতের অক্ষির মতাে অক্ষি যার = কপােতাক্ষ
সােনার মতাে মুখ যার = সােনামুখী
গজের আননের মতাে আনন যার = গজানন
ঝ . অলুক বহুব্রীহি : যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্ব বা পরপদের বিভক্তি লােপ পায় না , তাকে অলুক বা অলােপ বহুব্রীহি সমাস বলে । যেমন :
মাথায় পাগড়ি যার = মাথায়পাগড়ি
হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = হাতেখড়ি
গলায় গামছা যার = গলায়গামছা
পায়ে বেড়ি যার = পায়েবেড়ি
গায়ে পড়া স্বভাব যার = গায়েপড়া
খড়ম পায়ে যার = খড়মপেয়ে
অন্যান্য সমাস
উল্লেখিত শ্রেণির বাইরে আরও দুয়েকটি সমাস রয়েছে । তার মধ্যে নিত্য সমাস ও প্রাদি সমাস উল্লেখযােগ্য ।
নিত্য সমাস : যে সমাসে সমস্যমান পদগুলাে নিত্য সমাসবদ্ধ থাকে , ব্যাসবাক্য হয় না , কিংবা ব্যাসবাক্য করতে গেলে অন্য এক বা একাধিক পদের সাহায্য নিতে হয় , তাকে নিত্য সমাস বলে । যেমন : কাঁচকলা’র ব্যাসবাক্য যদি কাচা এমন কলা করা হয় তবে তাতে কাঁচা যে কোনাে কলাকেই বােঝাবে । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কাঁচকলা তা নয় । এটি বিশেষ এক ধরনের কলা , যা কাঁচা অবস্থায়ই খাওয়া হয় । সে রকম ‘ কালান্তর ' এর ব্যাসবাক্য কালের অন্তর ’ নয় , অন্য কাল ’ । এগুলাে নিত্য সমাস । আরও কিছু উদাহরণ :
অন্য মত = মতান্তর
অন্য স্থান = স্থানান্তর
অন্য দেশ = দেশান্তর
অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর
অন্য ভাষা = ভাষান্তর
অন্য যুগ = যুগান্তর
প্রাদি সমাস : যে সমাসের পূর্বপদে প্রতি , অণু ইত্যাদি উপসর্গ এবং পরপদে কৃদন্ত অথবা নামপদ থাকে , তাকে প্রাদি সমাস বলা হয় । যেমন :
প্র ( প্রকৃষ্ট ) ভাত = প্রভাত
প্র ( প্রকৃষ্ট ) গতি = প্রগতি
প্র ( প্রকৃষ্ট ) বাদ = প্রবাদ
প্র ( প্রগত ) পিতামহ = প্রপিতামহ
প্র ( প্রকৃষ্ট ) ভাব = প্রভাব
প্র ( প্রকৃষ্ট ) কাশ = প্রকাশ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন