মাদকের অপর নাম মৃত্যু
এছাড়াও আরো যে বিষয় সম্পর্কে লিখতে পারবে:
👉মাদকদ্রব্যের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে যুব সমাজের উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ রচনা করাে ।
👉‘ মাদকাসক্তির কুফল ’ শীর্ষক একটি ভাষণ তৈরি করো ।
👉মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি মঞ্চভাষণ রচনা করাে ।
👉মাদকের অপর নাম মৃত্যু ” শীর্ষক আলােচনা অনুষ্ঠানের উপযােগী একটি ভাষণ তৈরি করে ।
👉মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে যুবসমাজের উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ তৈরি করুন।
👉"মাদকের অপর নাম মৃত্যু" শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের উপযোগী একটি ভাষণ তৈরি করুন।
উপরোক্ত বিষয় সংক্রান্ত ২টি ভাষণ নিম্নে দেওয়া হলো-
ভাষণ নম্বার →১
সমবেত সুধীমন্ডলী ,
আসসলামু আলাইকুম ।
মাদক শব্দটি শুনলেই আমাদের অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে । কারণ , আজকের বিশ্ব মাদকের নীল ছােবলে এক ভয়াবহ পরিস্ফিতির দিকে ধাবমান । মাদকের ভয়াবহ অপব্যবহার প্রতিরােধে দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া হলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ধ্বংসের জন্যে আমাদের সকলকেই দায়ী থাকতে হবে ।
আমরা জানি , মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার সুপ্রাচীনকাল থেকেই শুরু হয়েছে । তবে অতি - সাম্প্রতিককালে মাদকদ্রব্যের বিস্তর ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে । আমাদের জন্য আরও আতঙ্কে কথা এই যে , বাংলাদেশ আজ ড্রাগ ট্রাফিকিং - এর আন্তর্জাতিক রুটে পরিণত হয়েছে । গােল্ডেন ট্রায়াংগেল , গােল্ডেন ক্রিসেন্ট ও গােল্ডেন ওয়েজ - এর নেটওয়ার্ক মাদক কারবারিয়া বাংলাদেশের মাধ্যমে মাদক যে শুধু সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছে তা নয় , আমাদের বাংলাদেশেও প্রচুর পরিমাণ মাদক আসছে । বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে যে , বাংলাদেশে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ আজ ড্রাগ এ্যাভিক্টেড । এই সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে । অথচ আমাদের দেশে মাদকের অপব্যবহার রােধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার কোনাে লক্ষণ নেই । প্রাণঘাতী রােগের মতােই মাদকাসক্তি আমাদের শ্রমশক্তির প্রাণ যুবসমাজকে ধ্বংসের অতলে নিয়ে যাচ্ছে । মাদক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে কী ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা আমরা ব্রাজিল , বলিভিয়া , কলম্বিয়া , পেরু প্রভৃতি দেশের দিকে তাকালেই স্পষ্ট বুঝতে পারি । সেসব দেশে মাদকাসক্তি শুধু নয় মাদক চোরাচালান এক ভয়ঙ্কর সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে । মাদকচক্র বা মাফিয়ারা এমনই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে , সেনাবাহিনী দিয়েও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না ।
সমবেত যুব ভাইবােন ও সুধীবৃন্দ,
এক সময় মনে করা হতো শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত লােকদের মধ্যেই মাদকাসক্তি দেখা যায় । বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই ধারণা সম্পূর্ণরূপে ভুল । মাদক আজ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তকেও গ্রাস করতে বসেছে । এক সময় পুরুষরাই শুধু মাদক সেবন করত । বর্তমানে নারীদের মাঝেও মাদক সেবন প্রবণতার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে । অর্থাৎ মাদক আজ আমাদের সার্বিকভাবে গ্রাস করে ফেলেছে । সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তের উঠতি বয়সী মেয়েদের মধ্যে মাদকাসক্তি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে । আমাদের ভবিষ্যৎ মায়েদের এই অধঃপতন জাতীয় দুর্যোগেরই পূর্বাভাস দিচ্ছে ।
প্রিয় ভাই ও বােনেরা ,
মাদকের এই অশুভ প্রসার সরকারের একক প্রচেষ্টায় রােধ করা সম্ভব নয় । তবে মাদক ব্যবহারের অন্যতম কারণ বেকারত্বকে হ্রাস , সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং আইনের কঠোর প্রয়ােগে সরকারই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে । আমাদের ব্যক্তিগত , পারিবারিক ও সামাজিক সকল ক্ষেত্রে মাদক প্রতিরােধের চেতনা জাগাতে হবে । বিশেষ করে সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে আজ জেহাদ ঘােষণার সময় এসেছে । আমাদের সকলকে ভাবতে হবে মাদক আমাদের জাতীয় শত্রু । এ শত্রুর মূলােৎপাটন করতেই হবে । আজকাল মাদকাসক্তদের চিকিৎসার জন্য অনেক হাসপাতাল গড়ে উঠেছে । এর প্রয়ােজনীয়তা অস্বীকার না করেও বলতে চাই মাদকাসক্তদের চিকিৎসার চেয়ে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে আর কোনাে তরুণ - তরুণী যাতে মাদকের শিকার না হয় ।
আমি আশা করি সকল সচেতন নাগরিক নিজেদের স্বার্থে , জাতির স্বার্থে মাদকবিরােধী আন্দোলনে নিজেকে জড়িত করবেন এবং মাদকহীন এক সুস্থ - সুন্দর জাতি গড়ে তুলতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন ।
পরিশেষে সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য শেষ করছি ।
ধন্যবাদ ।
ভাষণ নম্বার →২
সম্মানিত সভাপতি , মাননীয় প্রধান অতিথি , বিজ্ঞ আলােচকবৃন্দ ও উপস্থিত সুধীমণ্ডলী , আমার সশ্রদ্ধ সালাম ও আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন ।
মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে যুবসমাজের উদ্দেশে আমার নিজস্ব জ্ঞানের আলােকে কিছু বলতে চাই । মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে কিছু বলার সুযােগ করে দেওয়ায় আমি অনুষ্ঠানের আয়ােজকদের ধন্যবাদ জানাই ।
সুধীবৃন্দ ,
নেশা করার প্রবণতা সেই প্রাচীনকাল থেকে চলে এলেও সম্প্রতি এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে । নেশার এ মাদকতায় যে একবার আসক্ত হয়েছে পরবর্তীতে তার বেরিয়ে আসা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ে । মাদকাসক্ত ব্যক্তি কীভাবে ঘাের অমানিশার মাঝে তলিয়ে যায় তা সে নিজেও বুঝতে পারে না । মাদকে অভ্যস্ত ব্যক্তি শুধু নিজের ধ্বংসই টেনে আনে না , জাতীয় জীবনকেও এক ভয়াবহ পরিণামের দিকে ঠেলে দেয় । মাদকদ্রব্য আমাদের যুবসমাজের প্রাণশক্তিকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে । তাদের তারুণ্যদীপ্ত গতিকে স্তব্ধ করে দিচ্ছে । অথচ যুবসমাজই দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার , দেশ পরিচালনার যােগ্য নিয়ন্তা । এরাই দেশ ও জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যতের একমাত্র চালিকাশক্তি । কিন্তু মাদকদ্রব্যের বল্গাহীন দৌড়ের প্রকোপে জড়তাগ্রস্ত হয়ে নিস্তেজপ্রায় আজকের যুবসমাজ ।
প্রিয় সুধী ,
মাদকদ্রব্য শুধু যুবসমাজকেই ধ্বংস করছে না , যুবসমাজের দ্বারা অন্যের সুখ - শান্তিও নষ্ট হচ্ছে । একটি পরিবারের পারিবারিক জীবনব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মাদকসেবনকারীর কারণে । শুধু তা - ই নয় , এদের কারণে সমাজের স্থিতিশীলতাও নষ্ট হচ্ছে । আসলে সর্বগ্রাসী এ নেশা মানুষকে ক্ষণিকের জন্য যাবতীয় দুঃখ - যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয় , ব্যক্তির বাস্তব চৈতন্যকে অবলুপ্ত করে স্বতন্ত্র জগতে নিয়ে বিশেষ আনন্দলােকে মনকে আবদ্ধ রাখে । আর এসব বিশ্বাস থেকেই মাদকাসক্তির প্রসার ঘটছে । কিন্তু আর চলতে দেওয়া যায় না । ক্ষিপ্রহস্তে এর গতি রােধ করতে হবে । কেননা মাদকাসক্তির কুফলের কারণে যুবসমাজ ক্রমেই নিস্তেজ হয়ে পড়ছে , কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে । শারীরিক প্রতিবন্ধীও হয়ে পড়ছে কেউ কেউ , যৌনক্ষমতা বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে , জীবনের প্রতি ঘৃণা ও উদাসীন মানসিকতা তৈরি হচ্ছে , সর্বোপরি মাদকাসক্তির ফলে যুবকরা ক্রমেই মৃত্যুমুখে নিপতিত হচ্ছে । সুতরাং দেশের যুবসমাজকে এই মরণ নেশার ছােবল থেকে বাঁচানাের জন্য আমি কিছু প্রতিকারমূলক প্রস্তাব পেশ করছি ।
প্রথমত , মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে । দ্বিতীয়ত , মাদকদ্রব্যের উৎসসমূহ চিহ্নিত করে তা ধ্বংসের ব্যবস্থা করতে হবে । তৃতীয়ত , যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে । চতুর্থত , বিজাতীয় অপসংস্কৃতির অবাধ প্রবাহ রােধে সর্বত্র সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে । সর্বোপরি , মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে সুস্থ - স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে । এ ব্যাপারে পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে আন্তরিকতার সাথে ।
পরিশেষে মাদকমুক্ত এক সমাজের আশাবাদ ব্যক্ত করে এবং সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি ।