খাদ্যে ভেজাল : কারণ ও প্রতিকার (ভাষণ লিখন)
খাদ্যে ভেজাল : কারণ ও প্রতিকার
👉খাদ্যে ভেজাল : কারণ ও প্রতিকার ' শীর্ষক আলােচনাসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে একটি ভাষণ তৈরি করাে।
উপরোক্ত বিষয় সংক্রান্ত ২টি রচনা নিম্নে দেওয়া হলো-
ভাষণ নম্বার →১
শ্রদ্ধেয় সভাপতি ও সচেতন সুধীমণ্ডলী ,
আস্সালামু আলাইকুম ।
আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য শুরু করছি । প্রথমেই আমি আজকের আলােচনা অনুষ্ঠানের আয়ােজকদের জানাচ্ছি আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা । কারণ , তারা এমন একটি গুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আলােকপাত করার জন্য এই মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন । “ খাদ্যে ভেজাল : কারণ ও তার প্রতিকার ” শীর্ষক আলােচনা অনুষ্ঠানটি সময়ের প্রেক্ষিতে বিশেষভাবে গুরুত্ব এবং প্রশংসার দাবি রাখে । একই সাথে আমাকে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় সম্পর্কে কিছু কথা বলতে সুযােগদানের জন্য আয়ােজকদের কৃতজ্ঞতা জানাই ।
উপস্থিত সুধীবৃন্দ ,
খাদ্য ছাড়া আমরা বেঁচে থাকতে পারি না । খাদ্য আমাদের কেবল ক্ষুধার যন্ত্রণা নিবারণ করে এমন নয় । আমাদের কর্মশক্তির যােগান শারীরিক পরিপুষ্টি এবং স্বাস্থ্যগত সুস্থতা খাদ্যই নিশ্চিত করে থাকে। সেজন্য খাদ্য মানুষের মৌলিক চাহিদা । খাদ্য নিরাপত্তা মানুষের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা । কিন্তু গৃহীত খাদ্যই যদি মানুষের স্বাক্ষ্যগত সমস্যার কারণ হয়ে দাড়ায় তাহলে আশঙ্কিত হবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে । বলাবাহুল্য , বাংলাদেশে খাদ্যে অবাধ ভেজাল স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে । যদিও এ ব্যাপারে সরকারি কার্যকরী পদক্ষেপ ও জনসচেতনতা কোনােটাই দৃশ্যমান নয় ।
খাদ্যে ভেজালের বিষয়টি যুগ যুগ ধরেই চলে এসেছে । তবে সাম্প্রতিককালে সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিবেদন প্রচার এবং ভেজালবিরােধী অভিযানের কার্যক্রমের ফলে বিষয়টি জনমনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে । খাদ্যে ভেজাল সাধারণত দু'ধরনের । এর একটি ব্যবসায়ীদের মুনাফার সাথে সম্পর্কিত । অপরটি মােটা চালের সাথে চিকন চালের মিশ্রণ , ঘিয়ের সাথে বাটার অয়েলের মিশ্রণ , অর্থাৎ বেশি দামের পণ্যের সাথে কম দামের পণ্য মিশ্রিত করা । অসাধু ব্যবসায়ীদের মুনাফা লাভই এ ধরনের ভেজালের মূলকথা । কিন্তু মানুষ এ ধরনের ভেজালের কারণে স্বাস্থ্যগত ক্ষতির সম্মুখীনই বেশি হচ্ছে ।
সুধী,
ভেজাল আজ কোথায় নেই । কাঁচা ফলমূল থেকে শুরু করে হােটেল - রেস্টুরেন্টের রান্না করা খাবার , সর্বক্ষেত্রে ভেজাল বিদ্যমান । এক্ষেত্রে বিচিত্র সব ভেজালের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের কোনাে ধারণাই নেই । ফলে মানুষ অবলীলায় এসব ভেজাল খাদ্য খেয়ে যাচ্ছে এবং নানাপ্রকার দুরারােগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে ।
সচেতন শ্রোতৃমন্ডলী ,
আমাদের প্রিয় ফল আম , কলা প্রভৃতি পাকানাে ও বর্ণময় করে তােলার জন্য ব্যবহার করা হয় রাসায়নিক পদার্থ । গবেষকরা দেখিয়েছেন যে , এ ধরনের ফল খেলে ক্যান্সারসহ জটিল রােগের সৃষ্টি হতে পারে । সাম্প্রতিককালে ভারত ও মিয়ানমার থেকে যেসব হিমায়িত মাছ আমদানি করা হয় সেগুলােকে দীর্ঘদিন টাটকা রাখার জন্য মারাত্মক বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার হচ্ছে । বিষাক্ত জলাধারে মৎস্য চাষ এবং রাসায়নিক সার কীটনাশকের ব্যবহারে কৃষিপণ্যে উৎপাদন পর্যায়েই স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় সৃষ্টিকারী উপাদান মিশ্রণের প্রমাণ । হােটেল রেস্টুরেন্ট ও ফাস্ট ফুডের দোকানে খাবারগুলাে ভেজালে ভরা । চিনির বদলে স্যাকারিন ব্যবহার , মিষ্টান্নসহ সকল প্রকার তৈরি খাবারে ক্ষতিকারক রঙের ব্যবহার চলছে অবাধে । বাজারে ঘি নামে যা বিক্রি হচ্ছে তার অধিকাংশই রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ মাত্র । এভাবেই আমরা প্রতিমুহূর্তে ভেজাল খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করছি এবং নানাপ্রকার রােগে আক্রান্ত হচ্ছি ।
খাদ্যে ভেজালের মতাে সমস্যা সম্পর্কে বিহিত করার কোনাে সরকারি উদ্যোগ নেই । নেই কোনাে সুনির্দিষ্ট আইন , যার মাধ্যমে এক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়ায় বিহিত করা যায় । প্রচলিত আইনের আওতায় সাম্প্রতিককালে ভেজালবিরােধী অভিযান পরিচালিত হলেও তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট কার্যকর বলে বিবেচিত হতে পারে না । আমরা নিশ্চিত , ভেজালের পেছনে অর্থলিপ্সাই মুখ্য বিষয় । কাজেই আজকের এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে তাদের দায়িত্বশীলতার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই । সামান্য অর্থের লােভে জাতীয় ক্ষেত্রে আপনারা সর্বনাশ ডেকে আনবেন না । একই সাথে সাধারণ জনগণকেও সচেতন হতে হবে । সরকারের কাছে যুগােপযােগী আইন প্রণয়ন ও প্রয়ােগে আন্তরিক উদ্যোগ কামনা করছি । আশা করছি , সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ে খাদ্যে ভেজালের এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে রক্ষা পাব । পরিশেষে আমি সকলকে খাদ্য গ্রহণে সচেতন হবার আহ্বান জানাচ্ছি ।
খােদা হাফেজ ।
ভালো কিছু ভালো ফলাফল প্রাপ্তির সহায়ক তাই গুণ ও মানের প্রশ্নে আমরা সর্বদা সচেতন
ভাষণ নম্বার →২
‘ খাদ্যে ভেজাল : কারণ ও প্রতিকার ' শীর্ষক আলােচনাসভার মাননীয় সভাপতি , উপস্থিত সুধীবৃন্দ ও সম্মানিত শ্রোতামণ্ডলী , আমার শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন ।
আজ আমরা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে একত্র হয়েছি । আমার পূর্ববর্তী বক্তাদের আলােচনা থেকে বিষয়টির বিভিন্ন দিক ইতােমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে । অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমরা জেনেছি । প্রকৃত অর্থে খাদ্যে ভেজালের বিষয়টি অত্যন্ত ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে । আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার স্বার্থেই বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে ।
খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার প্রবণতা নতুন না হলেও ইদানীং এ অপরাধ অত্যন্ত ভয়ংকর ও বহুমাত্রিক রূপ লাভ করেছে । মানুষের বেঁচে থাকার প্রাথমিক মৌলিক শর্ত খাদ্য । এ খাদ্যে এত বহুমুখী ও বিপজ্জনক ভেজাল মেশানাে হয় যে , আমাদের কারাে পক্ষেই এর ভয়াবহতার কবল থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব নয় । চাল - ডাল ইত্যাদি শস্যজাতীয় খাদ্যে নিম্নমানের শস্য মিশ্রিত করা অনেক পুরনাে একটি সমস্যা । সম্প্রতি আমিষজাতীয় খাদ্য মাছ - মাংসেও বিপজ্জনক হারে ভেজাল মেশানাে হচ্ছে ।
সুপ্রিয় শ্রোতাবৃন্দ
বর্তমানে মাছ সংরক্ষণের জন্য বরফের পরিবর্তে বিষাক্ত ফরমালিন মেশানাে হয়ে থাকে । এ কৌশল জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ । মাছের ফুলকা লাল দেখানাের জন্য ফেব্রিক কালার বা কাপড়ে দেওয়ার রং মেশানাে হয়ে থাকে , যা অত্যন্ত বিষাক্ত ।
গরুর মাংসের সঙ্গে মেশানাে হচ্ছে মহিষের মাংস এবং খাসির মাংসের সঙ্গে মেশানাে হচ্ছে ভেড়ার মাংস । শুধু তা - ই নয় , মাংস টাটকা দেখানাের জন্য মেশানাে হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক রং । ফলে সাধারণ ক্রেতাকে ভেজালমুক্ত খাবার কেনা নিয়ে ঝামেলা পােহাতে হয় ।
উপস্থিত সুধীবৃন্দ
শাকসবজি , ফলমূল ইত্যাদি কোনাে কিছুই আজ বিপজ্জনক ভেজাল দ্রব্যের আওতামুক্ত নয় । আলু - পটলসহ অনেক ধরনের সবজি সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয় ক্ষতিকর কীটনাশক । বিশেষ করে শাকসবজি সবুজ দেখানাের জন্য রাসায়নিক রং স্প্রে করার বিষয়টি আপনারা সকলেই জানেন । অপরিপক্ক ফল যেমন— আম , পেঁপে , কলা ইত্যাদি নিমেষেই পাকিয়ে ফেলার জন্য কৃত্রিম হরমােন স্প্রে করা হয়ে থাকে । ফলে বাজারে গেলে আমরা যে বাহারি ফলমূল দেখি তার অনেকগুলােই আমাদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক ।
হােটেল - রেস্টুরেন্টে ভেজাল খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য আরেক মারাত্মক হুমকি । মরা মুরগির মাংস , বাসি - পচা খাবার , নিম্নমানের তেল - মসলা প্রভৃতি আজ রেস্টুরেন্টের ভােক্তাদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন করেছে ।
দ্রুত মুনাফা লাভের সহজ কৌশল অবলম্বনের জন্য এক শ্রেণির ব্যবসায়ী নির্বিবাদে খাদ্যে ভেজাল মেশানাের মাধ্যমে গােটা দেশের জনস্বাস্থ্যকেই ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে । মূলত সামাজিক ও নৈতিক বিপর্যয়ই এর প্রধান কারণ । যদিও ভােক্তা অধিকার সংক্ষরণ আইন ২০০৯ সালে পাস হয়েছে কিন্তু এটির কার্যকারিতা নেই । যদিও ইদানীং ভ্রাম্যমান আদালত কিছুটা সক্রিয় হয়েছে এবং মাঝে মাঝে কিছু মেয়াদ উত্তীর্ণ খাদ্য উদ্ধার , ধ্বংস ও জড়িত প্রতিষ্ঠানকে জরিমানায় আওতায় আনছে । সর্বাত্মক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমাদের একটা প্রতিকারের সিদ্ধান্তে পৌছাতেই হবে । আইনের কঠোর প্রয়ােগের পাশাপাশি পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে ভেজালমুক্ত খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অব্যাহত সামাজিক আন্দোলনই কেবল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে । আপনাদের সকলের সুস্থ - সুন্দর জীবন ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ কামনা করে আমার বক্তব্য শেষ করছি ।
সকলকে ধন্যবাদ ।
إرسال تعليق