গুগল নিউজ এ আমাদের অনুসরণ করুন। Google News!

ব্যঞ্জনধ্বনির কাকে বলে | ব্যঞ্জনধ্বনির পরিচয় ও শ্রেণীবিভাগ | বাংলা ব্যাকরণ

স্বরধ্বনির আশ্রয়ে উচ্চারিত ধ্বনিই হচ্ছে ব্যঞ্জনধ্বনি । এ ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে মুখ দিয়ে বাতাস বের হয়।

ব্যঞ্জনধ্বনির পরিচয়


স্বরধ্বনির আশ্রয়ে উচ্চারিত ধ্বনিই হচ্ছে ব্যঞ্জনধ্বনি । এ ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে মুখ দিয়ে বাতাস বেরোনাের সময় বাকপ্রত্যঙ্গের কোনাে না কোনাে স্থানে বাধাপ্রাপ্ত হয় বা নানান স্থানে স্পর্শ লাগে । যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাসের চাপের স্বল্পতা থাকে সেগুলাে অল্পপ্রাণ এবং যেগুলাের উচ্চারণে বাতাসের চাপের আধিক্য থাকে সেগুলাে মহাপ্রাণ ধ্বনি হিসেবে পরিচিত । তাছাড়া উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রে অনুরণন সৃষ্টিকারী ধ্বনিগুলাে হলাে ঘােষ আর অনুরণনহীন ধ্বনিগুলাে অঘােষ ধ্বনি হিসেবে পরিচিত । তাই ব্যঞ্জনধ্বনি শ্রেণিকরণের ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্যগুলাে হলাে উচ্চারণের স্থান , উচ্চারণ প্রকৃতি , ঘােষতা ও মহাপ্রাণতা । এখানে ব্যঞ্জনধ্বনির পরিচয় তুলে ধরা হলাে-


ব্যঞ্জনধ্বনিমূল :

ব্যবহারিক ক্ষেত্রে যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি অন্য কোনাে ব্যঞ্জনধ্বনির ওপর নির্ভরশীল নয় সেগুলােকে ব্যঞ্জনধ্বনিমূল বলে । বাংলা ধ্বনিবিজ্ঞানে ব্যঞ্জনধ্বনিমূলের সংখ্যা নিরূপণ নিয়ে ধ্বনিতাত্ত্বিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে । এই মতভিন্নতা প্রধানত স , ড় , ঢ় - এ তিনটি ব্যঞ্জন আর অর্ধস্বর এ , ই , ও , উ - কে ঘিরে । ড . সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ৩১ টি ব্যঞ্জনধ্বনিমূল নিরূপণ করেছেন । সুহাস চট্টোপাধ্যায়ের অনুসরণে কৃষ্ণ ভট্টাচার্য দেখিয়েছেন ২৭ টি ব্যঞ্জনধ্বনিমূল । এ তালিকায় স , ড় , ঢ় - এ তিনটি ব্যঞ্জন এবং ই , উ , এ , ও- এই চারটি অর্ধস্বরই সহধ্বনি হিসেবে স্বীকৃত । পুণ্যশ্লোক রায় ঢ় ছাড়া স , ড , ও অর্ধস্বরগুলােকে ধ্বনিমূল হিসেবে গ্রহণ করেছেন । বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ড . রফিকুল ইসলাম ও ড . পবিত্র সরকার সম্পাদিত ‘ প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ' গ্রন্থে ব্যঞ্জনধ্বনিমূলের সংখ্যা নিরূপণ করা হয়েছে ৩০ টি । তা ছাড়া ৪ টি অর্ধস্বরকে ব্যঞ্জনের অন্তর্ভুক্ত করে মােট ৩৪ টি ব্যঞ্জনধ্বনিমূলের উল্লেখ করা হয়েছে । এগুলাে হলাে : ক , খ , গ , ঘ , ঙ , চ , ছ , জু , ঝ , ট , ঠ , ড , ঢ , ত , থ , দ , ধ , ন , প , ফ , ব , ভ , ম , র , ল , শ , স , হ , ড় , ঢ় , ই , উ , এ , ও ।


স্পৃষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি :

ফুসফুসতাড়িত বাতাস বাকপ্রত্যঙ্গের কোথাও না কোথাও স্পষ্ট হয়ে অর্থাৎ বাধা পেয়ে যে ধ্বনি উচ্চারিত হয় তাকে স্পষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি বলে । মােটকথা জিহ্বা ও ঠোটের স্পর্শে শ্বাসবায়ু স্পষ্ট হয়ে যে ধ্বনি উচ্চারিত হয় তাকেই স্পষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি বলে । বাংলা ভাষায় স্পষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি হলাে : ক , খ , গ , ঘ , চ , ছ , জ , ঝ , ট , ঠ , ড , ঢ , ত , থ , দ , ধ , প , ফ , ব , ভ ।

বাংলা বর্ণমালায় ক থেকে প পর্যন্ত পাঁচটি বর্গে সাজানাে বর্ণের ২০ টি ধ্বনিকে স্পষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় । তবে বর্তমানে অনেকেই চ , ছ , জ , ঝ - কে স্পষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি না বলে ঘৃষ্ট বা ঘর্ষণজাত ব্যঞ্জনধ্বনি হিসেবে আখ্যায়িত করেন । এ বিচারে স্পষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা ১৬ ।


নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি :

যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুসতাড়িত বাতাস মুখ দিয়ে না বেরিয়ে নাক দিয়ে বেরােয় সেগুলােকে বলা হয় নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি । ব্যঞ্জনবর্ণের পাঁচটি বর্গের শেষ ধ্বনিগুলােকে অর্থাৎ , ঙ , ঞ , ণ , ন , ম - কে নাসিক্য ধ্বনি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় । কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করলে ম , ন , ঙ - এই তিনটি নাসিক্য ধ্বনি পাওয়া যায় । বাংলাদেশের মানুষের উচ্চারণে ঞ , ন ও ণ - এর মধ্যে কোনাে পার্থক্য নেই । তিনটি নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনির মধ্যে ‘ ম ' হলাে ওষ্ঠ্য নাসিক্য ধ্বনি , ' ন ’ - কে ধরা হয় দন্তমূলীয় নাসিক্য ধ্বনি আর কণ্ঠ্য নাসিক্য ধ্বনি হলাে ‘ ঙ ' ।


কম্পিত ব্যঞ্জনধ্বনি :

যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভের ডগা দাঁতের গােড়া সংলগ্ন মাড়ি বা দন্তমূলে বারবার আঘাত করে শ্বাসবায়ুতে অনুরণন সৃষ্টি করে তাকে কম্পিত ব্যঞ্জনধ্বনি বলে । বাংলায় একমাত্র কম্পিত ব্যঞ্জনধ্বনি হলাে ‘ র ’ । যেমন : রাত , গরম , রাহাত , শুরু ।


তাড়িত ব্যঞ্জনধ্বনি :

জিহ্বার অগ্রভাগের তলদেশ দ্বারা ওপরের দন্তমূলে দ্রুত আঘাত বা তাড়না করে তাড়িত ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হয় । অর্থাৎ জিভের ডগা একটু উল্টিয়ে ওপরের পাটির দাঁতের গােড়া - সংলগ্ন মাড়ি বা দন্তমূলের শেষাংশে দ্রুত তাড়না বা আঘাতের মাধ্যমে যে ধ্বনি উচ্চারণ করা হয় তাকে তাড়িত ব্যঞ্জনধ্বনি বলে । যেমন : ভেড়া , গুড় , বড় , আষাঢ় , রাঢ় । বাংলায় দুটি তাড়িত ব্যঞ্জনধ্বনি রয়েছে — ড় ও ঢ় ।


পার্শ্বিক ব্যঞ্জনধ্বনি :

জিভের দু'পাশ দিয়ে শ্বাসবায়ু বেরিয়ে গিয়ে যে ধ্বনি উচ্চারিত হয় তাকে পার্শ্বিক ব্যঞ্জনধ্বনি বলে । পার্শ্বিক ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বার অগ্রভাগ দন্তমূলে ঠেকে এবং দু’পাশ দিয়ে বাতাস বেরােয় । যেমন : লাল , লতা , কুলাে , পালক । বাংলা ভাষায় একমাত্র পার্শ্বিক ব্যঞ্জনধ্বনি হলাে ' ল ' ।


উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি :

উষ্ম মানে নিঃশ্বাস । যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ু মুখবিবরের কোথাও সরাসরি বাধা না পেয়ে আংশিক ঘর্ষণপ্রাপ্ত হয়ে শিশ জাতীয় ধ্বনি সৃষ্টি হয় , তাকে উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি বলে । যেমন , শেষ , বিষ , শিশু , শিশি , আশিস । যতক্ষণ শ্বাস থাকে , এ ধ্বনি ততক্ষণ প্রলম্বিত করে উচ্চারণ করা যায় । বাংলায় উষ্ণু ব্যঞ্জনধ্বনি তিনটি- স , শ , হ ।


যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি :

যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি হলাে দুটি ভিন্ন বর্গের ব্যঞ্জনের যােগ বা সমন্বয় । পাশাপাশি দুই বা ততােধিক ভিন্ন বর্গীয় ব্যঞ্জনধ্বনির মাঝখানে কোনাে স্বরধ্বনি না থাকলে ধ্বনিগুলাে মিলিতভাবে উচ্চারিত হয় । এদের বলে যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি । যেমন- ক্ + ত = ক্ত , ঙ + গ = ঙ্গ , গ + ল = গ্লোবাল , ঞ + জ = ঞ্জ , স্ + ট্ + র = স্ট্র ।

উল্লেখ্য যে , যুক্ত ব্যঞ্জনের ক্ষেত্রে সংযুক্ত দুটি ব্যঞ্জনের মধ্যে উচ্চারণের মুক্তি ঘটতে পারে ।


যুগ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি :

যুগ্ম ব্যঞ্জন হলাে সমবর্গীয় দুটি ব্যঞ্জনের যােগ বা সমন্বয় । সমবর্গীয় অল্পপ্রাণ - মহাপ্রাণ যােগেও যুগ্ম ব্যঞ্জন হয়ে থাকে । পাশাপাশি দুটি সমবর্গীয় ধ্বনির মাঝখানে কোনাে স্বরধ্বনি না থাকলে ধ্বনিযুগলের সমন্বিত উচ্চারণকে যুগ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি বলে । যেমন : ক্ + ক = ক্ক , ল + ল = ল্ল , চ + ছ = চ্ছ ।

যুগ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি দু'রকমের হয়ে থাকে । সমব্যঞ্জনযুগ্মকঅল্পপ্রাণ - মহাপ্রাণযুগ্মক

সমব্যঞ্জনযুগ্নক : ব + ব = ব্ব , ক্ + ক = ক্ক , জ + জ = জ্জ , ন্ + ন = ন্ন , ট + ট = ট্ট।

অল্পপ্রাণ - মহাপ্রাণযুগ্মক : ক্ + ষ্ = ক্ষ , চ + ছ = চ্ছ , দৃ + ধ = দ্ধ ।

উল্লেখ্য যে , যুগ্ম ব্যঞ্জন কখনােই শব্দের প্রথমে বসে না ।


স্বরতন্ত্রীর অবস্থা অনুসারে ব্যঞ্জনধ্বনির প্রকারভেদ

ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রীতে কাঁপন লাগে কি না সে বিচারে বাংলা ব্যঞ্জনধ্বনি দু'প্রকার । যেমন :

১.অঘােষ : ফুসফুসতাড়িত বাতাস স্বরযন্ত্রের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্বরতন্ত্রীকে না কাপিয়ে যে ধ্বনি উচ্চারিত হয় , তাকে অঘােষ ব্যঞ্জন বলে । বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় ধ্বনি এবং শ অঘােষ । যেমন : ক , খ , চ , ছ , ট , ঠ , ত , থ , প , ফ , শ ।

২. ঘােষ : ফুসফুসতাড়িত বাতাস স্বরযন্ত্রের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্বরতন্ত্রীকে কাপিয়ে যে ধ্বনি উচ্চারিত হয় , তাকে ঘােষ ব্যঞ্জন বলে । বর্গের তৃতীয় , চতুর্থ ও পঞম ধ্বনি এবং র , ল , হ ও ড় ঘােষ । যেমন : গ , ঘ , ঙ , জ , ঝ , ড , ঢ , দ , ধ , ন , ব , ভ , ম , র , ল , হ , ড় ।


শ্বাসবায়ুর প্রাবল্য অনুসারে ব্যঞ্জনধ্বনির প্রকারভেদ

শ্বাসবায়ুর চাপ স্বাভাবিক না প্রবল সে বিচারে বাংলা ব্যঞ্জনধ্বনি দু’প্রকার । যেমন :

১ . অল্পপ্রাণ : যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ুর চাপ কম বা স্বাভাবিক থাকে , তাকে অল্পপ্রাণ ধ্বনি বলে । বর্গের প্রথম , তৃতীয় ও পঞম ধ্বনি এবং র , ল , শ , ও ড় অল্পপ্রাণ । যেমন : ক , গ , ঙ , চ , জ , ট , ড , ত , দ , ন , প , ব , ম , র , ল , শ , ড়।

২. মহাপ্রাণ : যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ুর চাপ প্রবল থাকে , তাকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে । বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ ধ্বনি এবং ঢ় , হ মহাপ্রাণ । যেমন : খ , ঘ , ছ , ঝ , ঠ , ড , থ , ধ , ফ , ভ , হ ।


আরো পড়ুন:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কুকি সম্মতি
আমরা ট্রাফিক বিশ্লেষণ করতে, আপনার পছন্দগুলি মনে রাখতে এবং আপনার অভিজ্ঞতাকে অপ্টিমাইজ করতে এই সাইটে কুকিজ পরিবেশন করি৷
ওহফ্!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে ইন্টারনেটের সাথে সংযোগ করুন এবং আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
বিজ্ঞাপন ব্লক সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা সনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷
বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হয়, আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইনে আমাদের ওয়েবসাইটকে সাদা তালিকাভুক্ত করার অনুরোধ করছি।