আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য
এছাড়াও আরো যে বিষয় সম্পর্কে লিখতে পারবে:
উপরোক্ত বিষয় সংক্রান্ত ২টি ভাষণ নিম্নে দেওয়া হলো-
ভাষণ নম্বার →১
উপস্থিত সুধীমন্ডলী ও অতিথিবৃন্দ ,
আমার সাদর সম্ভাষণ গ্রহণ করুন । আজ আমরা সত্যিই আনন্দিত ও গর্বিত । আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে আজ গর্ব করবার মতাে একটি উপলক্ষ্য পেয়েছি , একটি দিবস পেয়েছি , যার সাথে একাত্ম হয়েছে গােটা বিশ্ব সমাজ । 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ' আমাদের এই আনন্দের , এই গর্বের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছে ।
উপস্থিত ভদ্রমহােদয় ও মহােদয়গণ ,
বাঙালির ভাষাপ্রেম ও ভাষার জন্য আত্মত্যাগের প্রেরণা আজ বিশ্ব সমাজে স্বীকৃত হয়েছে । জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘােষণা করা হয়েছে । গােটা দুনিয়ায় এ দিবস পালনের মধ্যদিয়ে বাঙালির ভাষাপ্রেমকেই সর্বজনীন মহিমা দান করা হচ্ছে । একথা আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি যে , ভাষার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার বাঙালির মতাে আর কোনাে জাতির ইতিহাসে নেই । দ্বি - জাতিতত্ত্বের বিষবৃক্ষ হিসেবে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার সাথে সাথেই পূর্ব বাংলার মানুষের ওপর যে সীমাহীন বৈষম্য চাপিয়ে দেওয়া হয় তারই ফলশ্রুতিতে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা । কাজেই ভাষা নিয়ে শাসকচক্রের এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র কোনাে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় । এটি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্রের সামগ্রিক শােষণ ও বৈষম্যেরই ফলশ্রুতি ছিল । বীর বাঙালি শাসকগােষ্ঠী এ বৈষম্য মেনে নিতে পারে নি । তারা মাতৃভাষা রক্ষার জন্য বুকের রক্তে রাজপথ রাঙিয়েছে । অবশেষে শাসকগােষ্ঠী বাংলার মানুষের প্রাণের দাবিকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে । তাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পেছনে যে রক্তাক্ত ইতিহাস রয়েছে তা বাঙালির সংগ্রামশীল ইতিহাসের গর্বোন্নত অধ্যায় ।
সুধীবৃন্দ ,
আজ আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি সালাম , বরকত , জব্বার , রফিকসহ নাম না জানা অন্যান্য ভাষাশহিদদের । শ্রদ্ধা জানাই ভাষা সৈনিকদের । আরাে স্মরণ করি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘােষণার জন্য যারা জাতিসংঘকে রাজি করতে ভূমিকা রেখেছেন । তাছাড়া ভারত , ভুটান , ইটালিসহ বন্ধুপ্রতীম সেইসব দেশের জনগণকে কৃতজ্ঞতা জানাই যারা মাতৃভাষা দিবস ঘােষণা প্রস্তাবটি জাতিসংঘে জোরালােভাবে সমর্থন জানিয়েছেন ।
উপস্থিত সুধীবৃন্দ ,
আজ এই মহতী দিবসে আমাদের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনে শপথ নিতে হবে । বাংলা ভাষার মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষাবিস্তারের লক্ষ্যে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কার্যকর ভূমিকা রাখার অনুরােধ জানাচ্ছি । সেই সাথে বাংলা ভাষাকে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ।
খােদা হাফেজ ।
ভাষণ নম্বার →২
সম্মানিত প্রধান অতিথি , বিশেষ অতিথিবৃন্দ এবং উপস্থিত সুধী ,
আমার সশ্রদ্ধ সালাম ও শুভেচ্ছা নিন । আজকের এই মহতি আয়ােজনে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযােগ পাওয়ায় নিজেকে ধন্য মনে করছি ।
ফেব্রুয়ারি আমাদের গর্ব আর অহংকারের মাস । আজ ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ— আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । ক্ষুদ্র পরিসরে আয়ােজিত এ আলােচনা সভায় এই দিবসের তাৎপর্য সম্পূর্ণরূপে তুলে ধরা সম্ভব নয় । তবুও আমি সংক্ষেপে সাধ্যমতাে চেষ্টা করব । প্রতিবছরই আমাদের জাতীয় জীবনে কিছু দিন আসে বাঙালির চেতনাবােধকে শানিত করতে । তেমনি একটি গৌরবােজ্জ্বল দিন ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত মহান একুশে ফেব্রুয়ারি । ভাষার জন্য এতখানি ত্যাগ স্বীকারের ইতিহাস পৃথিবীর দ্বিতীয় কোনাে দেশের নেই । ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালির আপন সত্তা আবিস্কারের মহিমা , অসাম্প্রদায়িক গণচেতনার বলিষ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে । ভাষাশহিদদের পবিত্র স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত জাতীয় মর্যাদার প্রতীক শহিদ মিনারের প্রতিটি ইট আরাে রক্তাক্ত হয়ে প্রতিনিয়ত ঘােষণা দিচ্ছে বাংলা ও বাঙালির শৌর্য - বীর্যের কাহিনি । পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই দিবসের স্বীকৃতি দিবসটিকে করে তুলেছে অধিকতর মহিমান্বিত ।
সুধী শ্রোতাবৃন্দ,
আজকের আলােচনাসভার সম্মানিত বক্তাগণের বক্তব্যে উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষাপট এবং গুরুত্ব । শুরুতেই একাদশ শ্রেণির ছাত্র তানজিল তৌহিদ তুলে ধরেছেন মহান একুশের রক্তাক্ত ইতিহাসের কথা । উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টার বিপরীতে বাঙালির মাতৃভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার মরণপণ সংগ্রামের কথা । সেই সংগ্রামেই প্রাণ হারান সালাম , বরকত , জব্বার , রফিক , শফিকসহ আরাে অনেকে । প্রতিষ্ঠিত হয় মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার । জাতি চিরকাল গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে সেই বীর শহিদদের , যাঁরা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য অকাতরে বিলিয়ে গেছেন নিজেদের জীবন ।
এরপর একাদশ শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী অনুপমা চৌধুরী আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন মহান একুশের এই দিনটি কেমন করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পেল । আজ সারা বিশ্ব জেনেছে বাঙালির বীরত্বপূর্ণ ভাষা আন্দোলনের বিজয়গাথা । এটি আমাদের জন্য বড় আনন্দের , বড় গর্বের ।
সব শেষে বাংলা বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক তপন কুমার স্যার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব আমাদের সামনে তুলে ধরেন । মায়ের ভাষার অধিকার , মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছিল ঔপনিবেশিক ও শাসন - শােষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম ঐক্যবদ্ধ প্রতিরােধ , জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রথম উন্মেষ । জাতি হিসেবে এটি আমাদের আত্মপ্রতিষ্ঠার , আত্মবিকাশের দিন । আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ায় এ দিনটি অধিক তাৎপর্যের সাথে পরিচিত হচ্ছে দুনিয়াব্যাপী । বিশ্ববাসী বাঙালির এই সংগ্রামী ইতিহাসের সঞ্জীবনী সুধা পান করে দেশাত্মবােধের নতুন স্বর্ণদ্বারে উপনীত হবে । ভাষার প্রতি ভালােবাসা বাড়াবে এই দিনটি ।
সম্মানিত উপস্থিতি,
পরিশেষে বলতে চাই , একুশ মানেই অসুন্দর ও অকল্যাণের বিরুদ্ধে সুন্দর ও কল্যাণের স্মারক । একুশ মানে মাথা নত না করা । প্রতিবছর এ বিশেষ লগ্নটি আমাদের ঘুম ভাঙিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠার দৃপ্তমন্ত্রে উজ্জীবিত হতে শেখায় । আমাদের সবার প্রাণে মহান একুশ তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এই চেতনাকে ধারণ করতে হবে । অনৈক্য , সংঘাত ও অশান্তির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ হাতিয়ার হােক একুশের চেতনা । দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দৃপ্তপদে সামনে এগিয়ে চলার প্রেরণা হােক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে এবং উপস্থিত সম্মানিত বক্তা ও শ্রোতাবৃন্দকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে আজকের এই আয়ােজনের সমাপ্তি ঘােষণা করছি ।
ধন্যবাদ সবাইকে ।