-->

এইডস কী- বাঁচতে হলে জানতে হবে (ভাষণ লিখন)


এইডস কী- বাঁচতে হলে জানতে হবে


এছাড়াও আরো যে বিষয় সম্পর্কে লিখতে পারবে:

👉“ এইডস কী- বাঁচতে হলে জানতে হবে ” শীর্ষক আলােচনাসভায় একজন বক্তা হিসেবে একটি ভাষণ তৈরি করো ।

👉“ঘাতক ব্যাধি এইডস” - এর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে যুবসমাজের উদ্দেশ্যে একটি ভষণ তৈরি করাে ।

👉“এইডস – মৃত্যুর অপর নাম : বাঁচতে হলে জানতে হবে ” শীর্ষক আলােচনা অনুষ্ঠানের উপযােগী ভাষণ প্রস্তুত করাে ।

উপরোক্ত বিষয় সংক্রান্ত ২টি ভাষণ নিম্নে দেওয়া হলো-

ভাষণ নম্বার →১


“ এইডস্ কী - বাঁচতে হলে জানতে হবে ” -শীর্ষক আলােচনাসভার সম্মানিত সভাপতি , বিশেষ অতিথি এবং শ্রোতাবৃন্দ সবাইকে মােবারকবাদ জানাচ্ছি ।


প্রিয় সুধী ,

বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত মনে করা হলেও এইডস্ নামক দুরারােগ্য ব্যাধির প্রাদুর্ভাবে মানুষের সাফল্য কীর্তি নিতান্তই অসার প্রমাণিত হয়েছে । কারণ , বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে এইডস্ ছড়িয়ে পড়লেও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা তার যথার্থ চিকিৎসা ও প্রতিশােধক আবিষ্কারে ব্যর্থ হয়েছে । অনেকে এইডসকে বিশ্ববাসীর জন্য প্রকৃতির অভিশাপরূপে গণ্য করছে । বিষয়টি অনেকাংশে সত্যও বটে । কারণ , মানুষের অনিয়ন্ত্রিত ও বিকৃত জীবনাচরণেরই ফসল এই মারণব্যাধি এইডস্ ।


সুধীমণ্ডলী ,

এইডস কোনাে বিশেষ ধরনের রােগ নয় । বরং শরীরের একটি বিশেষ অবস্থার নাম , যাতে মানব - শরীর অনেকগুলাে রােগ ও উপসর্গের ক্ষেত্রে পরিণত হয় । এইডস ( AIDS ) ইংরেজি ' Acquired Immune Deficiency Syndrome- এর সংক্ষিপ্ত রূপ । ইংরেজি একথাগুলাের অর্থ করলে দাঁড়ায় মানব - শরীরের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতার অকার্যকারিতার লক্ষণসমূহের সমষ্টি- যা মানুষের দ্বারা অর্জিত । জন্মগতভাবে মানুষ জৈবিক প্রক্রিয়ায় রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতার অধিকারী । এ ক্ষমতা মানুষকে প্রতিকূল পরিবেশ ও রােগের আক্রমণ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শরীরকে রক্ষা করে । Human Immune Deficiency Virus ( HIV ) নামক এক ধরনের মারাত্মক ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার ফলে মানুষের শরীরের এই প্রাকৃতিক রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা ভেঙে পড়ে । দেখা দেয় নানাপ্রকার মারাত্মক উপসর্গ । এ অবস্থাকেই এইডস নামে চিহ্নিত করা হয় ।


সুধী শ্রোতাবৃন্দ,

মানুষের অনিয়ন্ত্রিত ও বিকৃত যৌনাচারের ফসল এইডস রোগ। প্রথম দিকে গবেষকরা ধারণা করেছিলেন যে , আফ্রিকার এক ধরনের নীল বানরের সাথে মানুষ যৌন সংগমে লিপ্ত হবার ফলে এইডস তথা HIV ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে । পরবর্তীতে অবশ্য এ ধারণার মৌলিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় নি । তবে মানুষের বহুগামিতা , সমকামিতা , পশু মৈথুনসহ নানা প্রকার বিকৃত যৌনাচারের ফলেই যে এ রােগটির সৃষ্টি হয়েছে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহল একমত ।


সুপ্রিয় বন্ধু ,

এইডস রােগে আক্রান্ত হবার সবচেয়ে বড় কারণ সুস্থ মানুষের HIV সংক্রামিত মানুষের সাথে যৌন সংগমে লিপ্ত হওয়া । সেজন্য যেসব সমাজে অবাধ যৌনাচার রয়েছে সেসব সমাজে এইডস্ - এর ঝুকি তথা সংক্ৰমণ বেশি । তাছাড়া এইডস রােগীর শরীরের রক্ত গ্রহণ কিংবা এইডস রােগীর ব্যবহৃত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ সুস্থ দেহে ব্যবহারের ফলেও এইডস সংক্রমণ ঘটে থাকে । HIV আক্রান্ত মায়ের গর্ভে জন্মগ্রহণকারী শিশু জন্মগতভাবেই এ রােগজীবাণু নিজ দেহে বহন করে এবং নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায় । আমাদের দেশে এইডস রোগীর বাতব পরিসংখ্যান পাওয়া সত্যি দুরূহ । কারণ এ রােগ নির্ণয়ের সুলভ ব্যবস্থা নেই । সামাজিক কারণে এ রােগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা তা প্রকাশ করেন না , এমনকি চিকিৎসা নিতেও কেউ যান না । অপরদিকে কর্মসংস্থান , ব্যবসায় - বাণিজ্য প্রভৃতি কারণে আমাদের দেশের মানুষ এখন ব্যাপকভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করছে । এর ফলে এইডস্ অনুপ্রবেশের ঝুঁকি বাড়ছে ।


উপস্থিত সুধীবৃন্দ ,

এখন পর্যন্ত এইডস - এর কার্যকর কোনাে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেন নি । প্রতিষেধক হিসেবে টিকা আবিষ্কারের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গবেষণা পরিচালিত হলেও তাতে এখনাে সাফল্য আসে নি । তাই এইডস রোগ সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকাই প্রতিকারের একমাত্র উপায় । এইডস সংক্রমণ প্রতিরােধকল্পে করণীয় বিষয়গুলাে হলাে-

১. যৌনাচারের ক্ষেত্রে সংযম প্রদর্শন ও বিকৃতি এড়িয়ে চলা ।

২. পারিবারিক মূল্যবােধ রক্ষা ও দাম্পত্য জীবনে বিশ্বস্ত থাকা ।

৩. অবাধ যৌন মিলনে অবশ্যই কনডম ব্যবহার করা ।

৪. অসুস্থতার জন্য রক্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা । রক্ত যথাযথভাবে পরীক্ষার পরই তা গ্রহণ করা ।

৫. ইনজেকশনের সিরিঞ্জ একাধিকবার ব্যবহার না করা এবং ডিসপােজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করা ।

৬. অন্যের ব্যবহৃত ব্লেট , রেজার এবং অপারেশনের যন্ত্রপাতির অপরিচ্ছন্ন ভাবে ব্যবহারেও এইডস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।

৭. এইডস আক্রান্ত মায়েদের সন্তান গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা । কারণ নবজাতক শিশুর দুধপানেও শিশুর এইডস্ হতে পারে ।

৮. জীবনের সর্বক্ষেত্রে ধর্মীয় মূল্যবােধ ও নৈতিকতার চর্চা করা ।

৯. এইডস রােগ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য রেডিও , টেলিভিশন , সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারণা জোরদার করা ।

১০. রােগ নির্ণয় ব্যবস্থা সুলভ ও সহজতর করা । তাছাড়া এইডস রােগীদের সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিবর্তন করা ।


সুধী ,

এইডস রােগ মানবসভ্যতার জন্য এক মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে । মানুষের অবিমৃষ্যকারিতার জন্যই এ মারণব্যাধিটির সৃষ্টি হয়েছে । তাই মানুষকেই তার পরিণতি ভােগ করতে হবে । সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশের অধিবাসীদেরও এ রােগের ব্যাপারে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে । তাই ব্যাপক আকারে রােগটি ছড়িয়ে পড়ার আগেই আমাদের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।

ধন্যবাদ সবাইকে ।


ভালো কিছু ভালো ফলাফল প্রাপ্তির সহায়ক তাই গুণ ও মানের প্রশ্নে আমরা সর্বদা সচেতন


ভাষণ নম্বার →২


মাননীয় সভাপতি , মান্যবর প্রধান অতিথি , সম্মানিত অতিথিবৃন্দ ও সমাগত সুধীমণ্ডলী সবাইকে আমার সশ্রদ্ধ সালাম ও শুভেচ্ছা ।

আজকের বিষয় এইডস কী , বাঁচতে হলে জানতে হবে । এ বিষয়ে আমাকে বক্তব্যদানের সুযােগ দেওয়ার জন্য আয়ােজকদেরকে ধন্যবাদ ।


সুধী শ্রোতাবৃন্দ,

একুশ শতকে জ্ঞান - বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের মাঝেও বিশ্বব্যাপী এইডস জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি ভয়াবহ হুমকি । পৃথিবীর কোনাে কোনাে অঞ্চলে বর্তমানে এটি এখন এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি । বিশেষ করে আফ্রিকা , এশিয়া , পূর্ব ইউরােপ ও ক্যারিবীয় অঞলে এ রােগের প্রকোপ দেখে বিশ্ব সম্প্রদায় আজ আতঙ্কগ্রস্ত । বাংলাদেশও বিপদসীমার বাইরে নয় । তাই আমাদের সকলকে এইডস সম্পর্কে জানতে হবে এবং সবাইকে জানাতে হবে । কারণ সচেতনতাই পারে যেকোনাে বিপদ থেকে আমাদের রক্ষা করতে । এইডস একপ্রকার ভাইরাসঘটিত ব্যাধি । এ রােগ HIV নামক ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে । HIV ভাইরাস খুব দ্রুত পরিবর্তন ও পরিবর্ধনশীল বলে এর প্রতিষেধক তৈরি করা চিকিৎসাবিজ্ঞানের পক্ষে এখনাে সম্ভব হয়নি ।

মরণব্যাধি এইডসের প্রধান লক্ষণগুলাে হলাে—

১. এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির দেহের ওজন হ্রাস পেতে থাকে ;

২. মাঝে মাঝে অল্প জ্বর , মাথা ব্যথা ও দৃষ্টিশক্তি হ্রাস ;

৩. গলা , বগল ও কুঁচকির ব্যথাহীন গ্রন্থি ফুলে যাওয়া ;

৪. শুকনাে কাশি , নিঃশ্বাসে কষ্ট , গলা ব্যথা বিশেষ করে খাবার সময়ে ;

৫. সীমাহীন দুর্বলতা , স্মৃতিশক্তিহীনতা ;

৬. হজমশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি।

উল্লিখিত উপসর্গসমূহ দেখা দিলে HIV পরীক্ষার মাধ্যমে এইডস আক্রান্ত বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।


সুপ্রিয় উপস্থিতি,

বিভিন্নভাবে এইডস রােগের সংক্রমণ ঘটতে পারে । এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত , বীর্য বা জরায়ু রসের সঙ্গে যদি সুস্থ কোনাে ব্যক্তির রক্ত , শরীর - রস বা মিউকাস আবরণের সংস্পর্শ ঘটে , তবে এইচআইভি তথা এইডস রােগের বিস্তার ঘটে । উল্লিখিত সংস্পর্শ বিভিন্নভাবে ঘটতে পারে । যেমন : অবাধ যৌন মিলন , এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত শরীরে ধারণ বা গ্রহণ , আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ব্যবহার , এমনকি সংক্রমিত মায়ের বুকের দুধ পানের মাধ্যমে শিশুর দেহে পর্যন্ত এ রােগ ছড়াতে পারে । জাতীয় এইডস নিবারণ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যায় , বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জন মাদকদ্রব্য গ্রহণকারীর মধ্যে অন্তত দুজন এইচআইভি নামক ভাইরাসের বাহক । এছাড়া প্রতি ১০০ জন যৌনকর্মীর মধ্যে অন্তত একজনের এইচআইভি রয়েছে ।


উপস্থিতি স্রোতাবৃন্দ

ঘাতক এইডস রােধকল্পে উন্নত দেশসহ তৃতীয় বিশ্বের বিজ্ঞানীগণ গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন । এইডসের প্রতিষেধকও একদিন হয়তাে আবিষ্কৃত হবে । তবে তার আগে এ বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নিলে ঘাতক এইডসের ছােবল থেকে মানুষ তার অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকতে পারবে , এতে সন্দেহ নেই । যেমন :

১. অবাধ যৌনাচারের অপসংস্কৃতি বর্জন ;

২. ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি অধিক গুরুত্ব আরােপ ;

৩. মাদকদ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকা ;

৪. রক্ত সংগ্রহের পূর্বে রক্তদাতার রক্ত পরীক্ষা করা ;

৫. গর্ভাবস্থায় মায়ের এইডস আছে কি না , তা পরীক্ষা করা ;

৬. ডিসপােজেবল সুচ , সিরিঞ্জ ব্যবহার করা ;

৭. প্রচারমাধ্যমগুলােকে এইডস প্রতিরােধসংক্রান্ত তথ্য প্রচারে সক্রিয় করা ।

এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে মরণব্যাধি এইডসের ছােবল থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যাবে । সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।


See Also :