Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Test link

যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি (ভাষণ লিখন)

যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি-এই শিরােনামে ভাষণ রচনা করাে।সুপ্রিয় শ্রোতৃমণ্ডলী আপনাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যৌতুক বিষয়ে আমি দুচারটি কথা বলতে চাই।

যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি


এছাড়াও আরো যে বিষয় সম্পর্কে লিখতে পারবে:

👉যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি– এই শিরােনামে একটি ভাষণ রচনা করাে ।
👉যৌতুকের অভিশাপ ' বিষয়ে একটি ভাষণ রচনা করাে।

উপরোক্ত বিষয় সংক্রান্ত ২টি ভাষণ নিম্নে দেওয়া হলো-



ভাষণ নম্বার →১


আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত সম্মানিত সভাপতি , মাননীয় প্রধান অতিথি , বিজ্ঞ আলােচকবৃন্দ এবং সম্মানিত সুধী— আপনাদের সবাইকে প্রীতিময় শুভেচ্ছা জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য শুরু করছি ।

সম্মানিত সুধী

আজকের অনুষ্ঠানে আমাকে এমন একটি বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানাে হয়েছে , যা বাংলাদেশের আর্থ - সামাজিক প্রেক্ষাপটে ভয়াবহ একটি প্রচলিত প্রথা । যৌতুক প্রথার কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর অনেক নারীকে নিপীড়ন ও নির্যাতন ভােগ করতে হয় । নারীদের জয়গান গাইতে গিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন-

“ বিশ্বে যা - কিছু মহান সৃষ্টি চির - কল্যাণকর ,

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী , অর্ধেক তার নর । ”

মানবসভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে আজকের এ উত্থানের পেছনে নারীর যে অবদান রয়েছে তা বর্তমানে যৌতুক নামের কালপ্রথায় অবমূল্যায়িত হচ্ছে ।

বর্তমানে যৌতুক ভয়াবহ ব্যাধির মতাে বাংলাদেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে । বিশেষ করে যৌতুকের শিকার হচ্ছে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো । কোনাে পরিবারে কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়া মানে যেন সেই পরিবারে অভিশাপ নেমে আসা । কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়া অর্থ হলাে , সারা জীবন তার ভরণ - পােষণ বহনের পরও বিয়ে দেওয়ার সময় যৌতুকের করালগ্রাসে পিতামাতার সঞ্চিত ধনের সবটুকু বিসর্জন দেওয়া।

শ্রদ্ধেয় শ্রোতাবৃন্দ

নারীর শিক্ষাগত যােগ্যতা , সৌন্দর্য ও গুণাবলি যতই থাকুক না কেন , যৌতুক দিতে না পারলে স্বামীর পরিবারে তার যেন কোনাে মূল্যই থাকে না । কারণ বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় নারীদের অর্থের মূল্যে বিচার করা হয় । ধনী পরিবারগুলাে এ অভিশপ্ত প্রথাটিকে বাংলাদেশের মর্মমূলে গেঁথে দিচ্ছে । তারা তাদের কন্যাদের বিয়ে দেওয়ার সময় পাত্রপক্ষ না চাইলেও অনেক সময় কন্যার সঙ্গে নানারকম উপঢৌকন দিচ্ছে । যার ফলে সমাজের সর্বস্তরে এ প্রথাটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে এবং দরিদ্রদেরও যৌতুক দিতে বাধ্য করা হচ্ছে । এখনাে পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় , প্রতিদিনই কোনাে না কোনাে নারী যৌতুকের বলি হচ্ছে । পাষণ্ড স্বামী অথবা তার পরিবার হয়তাে কারাে গায়ে এসিড ছুড়ে মারছে আবার পিটিয়ে মেরে ফেলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার মতাে ঘৃণ্য কাজ করছে ।

সুপ্রিয় সুধীমন্ডলী

সমাজের এ ঘৃণ্য প্রথাকে প্রতিহত করতে আমাদের সবাইকে একতাবদ্ধ হতে হবে । এজন্য পুরুষদেরই এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে । তাদের বুঝতে হবে , তাদেরও বােন আছে , তাদের ঘরেও কন্যাসন্তান হবে । আজ সে যদি যৌতুক নিয়ে কোনাে পরিবারকে সর্বস্বান্ত করে , ভবিষ্যতে তাকেও এমনই করে নিঃস্ব হতে হবে । তাই যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে এবং আইনের স্বচ্ছ প্রয়ােগ থাকতে হবে । এছাড়া কোনাে নারী যৌতুকের শিকার হলে স্থানীয় প্রশাসন ও মানবতাবাদী সংগঠনকেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে ।

সুধীবৃন্দ

নারীকে সমাজের দৃষ্টিতে পণ্য না ভেবে মানুষের মর্যাদায় স্বীকৃতি দিতে হবে । সব শেষে সবাইকে যৌতুক পরিহার করে নারীকে যথাযােগ্য সম্মান জানানাের অভিপ্রায় ব্যক্ত করে আবারও শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি ।

ধন্যবাদ সবাইকে।


ভালো কিছু ভালো ফলাফল প্রাপ্তির সহায়ক তাই গুণ ও মানের প্রশ্নে আমরা সর্বদা সচেতন


ভাষণ নম্বার →২


সুপ্রিয় সুধী ও সচেতন শ্রোতৃমণ্ডলী আপনাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যৌতুক বিষয়ে আমি দুচারটি কথা বলতে চাই ।

বর্তমান আর্থ - সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে আলােচনার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে । কারণ যৌতুক নামক ঘৃণ্য সামাজিক ব্যাধির অভিশাপে গােটা দেশ আজ নানামুখী সংকট মােকাবিলা করছে । যৌতুকের বিরুদ্ধে কার্যকর ও সর্বব্যাপী ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের আর বসে থাকলে চলবে না ।

সুধী ,

অর্থনৈতিক অসমতা যৌতুক প্রথার একটি প্রধান কারণ । বাংলাদেশের বিপর্যস্ত অর্থনীতি যৌতুক প্রথার প্রসারে সাহায্য করছে । যৌতক কথাটার অর্থ হলাে বিবাহ উপলক্ষে বরকে উপহারাদি দান করা । যৌতুক প্রথা একটি প্রাচীন প্রথা । এ প্রথার ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায় , হিন্দু সমাজে ৯-১০ বছর বয়সের মধ্যে কন্যার বিয়ে দেওয়ার গৌরীদান প্রথা চালু ছিল । এ বয়সের মধ্যে কন্যার বিয়ে দিতে না পারাকে শাস্ত্রবিদ্ধ কাজ বলে মনে করা হতাে । ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে সমাজচ্যুত করার বিধান করা হয় । ফলে অর্থের বিনিময়ে দ্রুত কন্যা পাত্রস্থ করা হতাে । আজকের এই একবিংশ শতাব্দীর যুগেও রয়ে গেছে বিবাহে যৌতুকদান বা উপঢৌকন দেবার মতাে জঘন্য কু - প্রথা ।

একবিংশ শতাব্দীতে এসেও অনেক পিতা তার পুত্রকে বিয়ে করানাের ব্যাপারে প্রাপ্তিচিন্তাকে বিসর্জন দেওয়ার কথা কল্পনা করতে পারেন না । বধূ নির্যাতন এই দেশের নিত্য - নৈমিত্তিক ঘটনা । যৌতুককে কেন্দ্র করে দৈনিক পত্রিকার পাতায় প্রতিদিন যে বিভীষিকার খবর ছাপা হয় তা শুধু ভয়াবহই নয় , আমাদের সভ্যতার ললাটে অমার্জনীয় প্রহারের মতােই উৎকট । যৌতুক কোনোকালেই কৌতুকের বিষয় নয় । ইতােমধ্যে সরকার যৌতুক বন্ধের জন্য আইন পাসও করেছেন । তবুও যৌতুক প্রথা স্বাভাবিক গতিতেই চলে আসছে । আর এর বলি হচ্ছে অগণিত বধূ । বাংলাদেশে এ যাবৎ যেসব গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছে তার শতকরা ৯০ ভাগ যৌতুকের কারণে ।

শ্রদ্ধেয় শ্রোতৃমণ্ডলী ,

কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা হয়তাে কন্যার সুখ - স্বাচ্ছন্দ্যের কথা চিন্তা করে তার যথাসর্ব দান করে । কিন্তু কোনাে কারণে প্রতিশ্রুতিমতো পণের সামগ্রী যদি পাত্রপক্ষকে না দিতে পারে , তা হলেই কন্যার ওপর চলে নিষ্ঠুর অত্যাচার , নিপীড়ন , খুন ইত্যাদি । যৌতুক প্রথা আমাদের সমাজের বিষ ফোঁড়া । এর কারণে কত বালিকা বধূর হাতের মেহেদির রঙ যে অকালেই মুছে গেছে তার ইয়ত্তা নেই । অক্ষম কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা যৌতুকের বায়না মেটাতে পারেন না বলে বর চলে গেছে বিয়ের আসন থেকে । পিতার অবস্থার কথা চিন্তা করে অনেক কন্যাই আত্মহত্যা করে পিতাকে মুক্তি দিয়েছে ।

তাছাড়া যৌতুক পারিবারিক জীবনে স্বামী - স্ত্রীর শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ককে বিনষ্ট করে । যৌতুক না পেয়ে স্বামী যেমন স্ত্রীকে শারীরিক - মানসিক নির্যাতন করে তেমনি যৌতুক গ্রহীতা স্বামীর প্রতিও স্ত্রীর কোনাে শ্রদ্ধাবােধ থাকে না । অনেক ক্ষেত্রে স্বামীকে স্ত্রী মনে করে বাবার টাকায় কেনা গােলাম হিসেবে ।

ভাই ও বােনেরা ,

পণপ্রথার বিলােপ সাধনে নারী - পুরুষ উভয়কেই সজাগ হতে হবে । এ প্রথা যে সমাজের জন্য কতখানি ক্ষতিকারক সবাইকে তা বােঝাতে হবে । এ ভয়াবহ ব্যাধি নির্মূল করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে । যৌতুকের লেনদেন বন্ধে শুধু আইনই এ সামাজিক অভিশাপ মােচন করতে পারবে না । আইনের সাথে যৌতুকের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রচণ্ড সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে । যৌতুক দান ও গ্রহণ । উভয়কেই অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে । আমরা একমাত্র আত্ম - বিশ্লেষণের মাধ্যমেই এ প্রথার অভিশাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি । কারণ নিজের মন ঠিক না হলে অন্যের উপদেশে কোনাে ফল হয় না ।

যৌতুক বা পণপ্রথা অতি জঘন্য । এটা মানবতার ঘৃণ্য অভিশাপ , দৈন্যদশাগ্রত সমাজের কলঙ্কময় প্রবণতা- যা নারীর স্বাভাবিক আবেদনকে মিথ্যা করে দিয়েছে অর্থলালসার কাছে । বাংলাদেশের নারীসমাজ একেবারে নীরব নেই । তারাও সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে পথে বেরিয়ে পড়েছে । তারাও আজ যৌতুক বিরােধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছে । এ উদ্যোগ সফল হােক - এটাই আমাদের প্রত্যাশা ।

খোদা হাফেজ


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

© Abc Ideal School. All rights reserved. Developed by Jago Desain