সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার
এছাড়াও আরো যে বিষয় সম্পর্কে লিখতে পারবে:
উপরোক্ত বিষয় সংক্রান্ত ২টি ভাষণ নিম্নে দেওয়া হলো-
ভাষণ নম্বার →১
সম্মানিত সুধীবৃন্দ ও সচেতন ব্যক্তিবর্গ
আস্সালামু আলাইকুম ।
আজকের এই মহতি আলােচনাসভায় আমাকে প্রধান অতিথি করার জন্যে আয়ােজকবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি । সেই সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুচারটি কথা বলার সুযােগ পাওয়ায় নিজেকে ধন্য মনে করছি ।
উপস্থিত শ্রোতৃমন্ডলী ,
সড়ক দুর্ঘটনার ক্রমবর্ধমান হার মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টিকে আজ প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে । প্রতিদিন দেশের নানা স্থানে অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটে । অকালে ও অপ্রত্যাশিতভাবে কত মানুষের প্রাণ যে ঝরে যাচ্ছে তার কোনাে ইয়ত্তা নেই । সড়ক দুর্ঘটনায় যারা আহত হয় । তাদের অধিকাংশই চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করে কিংবা অঙ্গহানির শিকার হয় । দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা পরিবার ও সমাজের জন্য বিরাট বােঝা হয়ে দাঁড়ায় । জীবনের প্রয়ােজনে মানুষকে নানা কাজে গৃহের বাইরে যেতে হয় কিন্তু পথে তার কোনাে নিরাপত্তা নেই । কারণে অকারণে মানুষকে আজ হতে হচ্ছে পথের বলি । জীবনের টানে পথে বের হয়ে পথেই জীবন খােয়ানােটা সত্যি এক নির্মম পরিহাস ।
সুধীবৃন্দ ,
আমি সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরতে চাই । আশা করি , এতে সকলেই দুর্ঘটনার আর্থ - সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারবেন । সারাদেশে প্রতিদিন গড়ে ২০ টি ছােটবড় দুর্ঘটনা ঘটে । বছরে গড়ে দুর্ঘটনায় মারা যায় চার হাজার মানুষ । সবচেয়ে বড় কথা দুর্ঘটনায় দশ থেকে বারাে হাজার মানুষ মারাত্মকভাবে আহত হয় । যাদের অধিকাংশই অঙ্গ হারায় কিংবা পঙ্গুত্ব বরণ করে । দুর্ঘটনায় যে সম্পদের ক্ষতি হয় এবং হতাহতদের চিকিৎসায় যে অর্থ ব্যয়া হয় তা মােট জাতীয় আয়ের দুই শতাংশ । চিকিৎসা খাতে সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থের প্রায় ত্রিশ শতাংশই ব্যয় হয় দুর্ঘটনায় হতাহতদের পেছনে ।
সচেতন ভাইবােনেরা ,
দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই । পৃথিবীর সব দেশেই দুর্ঘটনা ঘটে । জীবন চলার পথে দুর্ঘটনাকে এড়ানাের সাধ্য মানুষের নেই । কিন্তু দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মাত্রাগত বিষয়টি অবশ্যই উপেক্ষণীয় নয় । আমাদের দেশে যে হারে এবং যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটে তা আমাদের অবশ্যই ভাবিত করে । দুর্ঘটনা থেকে আমরা সম্পূর্ণরূপে মুক্তি পাব না সত্য , কিন্তু এর পেছনে কারণগুলাে যদি শনাক্ত করতে পারি এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করি তাহলে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতি দুটোই হ্রাস করা যাবে ।
আমাদের দেশের রাস্তাগুলাে আঁকাবাকা , অসমতল ও ভারি যানবাহন চলাচলের জন্য মানসম্পন্ন নয় । অধিকাংশ রাস্তাই সংকীর্ণ । ফলে দুর্ঘটনা এড়ানাে অনেক সময় সম্ভব হয় না । আমাদের দেশের রাস্তাঘাটে মেয়াদোত্তীর্ণ ও জরাজীর্ণ যানবাহন চলাচল করে । বাস - ট্রাকে তােলা হয় ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য ও যাত্রী । বাদুরঝােলা হয়ে বাসে চড়তেও আমাদের যেন বাধে না । বিআরটিএ নামক যে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে , তা আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত । গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান , ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু সর্বক্ষেত্রে অনিয়মই এখানে নিয়ম । সেই সাথে যােগ হয়েছে ট্রাফিক বিভাগের দুর্নীতি । ফলে লাইসেন্সবিহীন আনাড়ি লােকজন অবলীলায় গাড়ি চালাতে পারে । দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চালকেরা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে পারে , হয় না কোনাে বিচারও । চালকদের মধ্যে অকারণে ওভারটেকিং ও পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানাের কারণেই বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে । চালকদের সামাজিক ও মানসিক দায়িত্ববােধের বিষয়টি এক্ষেত্রে মােটেই পরিলক্ষিত হয় না ।
এ অবস্থায় দুর্ঘটনার প্রতিকার নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নানামুখী কথা বলা হচ্ছে । তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরােধকল্পে সাধারণ কিছু বিষয়কে প্রাধান্য দিলেই সুফল পাওয়া যাবে । সর্বপ্রথম ত্রুটিপূর্ণ রাস্তা সংস্কার ও যান্ত্রিকভাবে তুটিপূর্ণ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন রাস্তা থেকে উঠিয়ে দিতে হবে । চালকদের প্রশিক্ষণ ও মােটিভেশনের বিষয়টিকে দিতে হবে প্রাধান্য । ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানের ক্ষেত্রে সকল অনিয়ম দূর করতে হবে । এক্ষেত্রে বিআরটিএ ও ট্রাফিক বিভাগকে সর্বাগ্রে করতে হবে দুর্নীতিমুক্ত । রাস্তা পারাপার ও যানবাহনে ভ্রমণের সময় জনগণের দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধিতে সচেতনতামূলক প্রচারণা জোরদার করতে হবে । এসব করলে সড়ক দুর্ঘটনা যৌক্তিক মাত্রায় নামিয়ে আনা যাবে বলে আমার বিশ্বাস । আপনাদের সবার জীবন নিরাপদ ও সুখময় হােক ।
আল্লাহ হাফেজ ।
ভাষণ নম্বার →২
শ্রদ্ধেয় সভাপতি , সম্মানিত বিশেষ অতিথি , উপস্থিত সুধীবৃন্দ সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য শুরু করছি ।
আজকের অনুষ্ঠানের বিষয় সড়ক দুর্ঘটনা : কারণ ও প্রতিকার ’ । আমি প্রথমেই এ অনুষ্ঠানের আয়ােজকদের ধন্যবাদ জানাই তারা আমাদের বর্তমান জাতীয় সমস্যাগুলাের অন্যতম এ বিষয়টিকে আলােচ্য বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করেছেন বলে ।
সুধীবৃন্দ,
নিরাপদ জীবনযাপনের একটা সার্বক্ষণিক হুমকি সড়ক দুর্ঘটনা । প্রায় প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ । খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়ে সড়ক দুর্ঘটনার নির্মম খবর । এ যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার । সড়ক দুর্ঘটনা মৃত্যুদূত হয়ে দাড়িয়ে আছে আমাদের দরজায় । সকালবেলা বাড়ি থেকে সুস্থ দেহে কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশে বের হলেও আমরা আবার সুস্থ দেহে বাড়িতে ফিরতে পারব কি না , তা জানি না । তাই এর মরণ ছােবল থেকে বাঁচার উপায় বের করা অত্যন্ত জরুরি । সড়ক দুর্ঘটনার ফলে সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটি হচ্ছে তা হলাে মানবসম্পদের অপচয় । এ ক্ষতি অপূরণীয় । তার পরই রয়েছে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি ।
উপস্থিত সুধী ,
আমি এখন সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলাে তুলে ধরতে চাই । সড়ক দুর্ঘটনার বহুবিধ কারণের অন্যতম হলাে-
১. দক্ষ ও প্রশিক্ষিত ড্রাইভারের অভাব ;
২. রাস্তার তুলনায় পথচারী ও গাড়ির আধিক্য ;
৩. গাড়ির বহন ক্ষমতার অধিক যাত্রী নেওয়া ;
৪. গাড়ির অনিয়ন্ত্রিত গতিবেগ ;
৫. নিরাপত্তা আইন ও ট্রাফিক আইনের প্রয়ােগ না করা ;
৬. অনিয়ন্ত্রিত ওভার টেকিং ইত্যাদি ।
সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানে আমাদের সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে । মানুষ হয়ে পড়েছে নিরাপত্তাহীন । প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান জীবন । তাই দেশ , জাতি , সর্বোপরি দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য এ সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করা প্রয়ােজন ।
সড়ক দুর্ঘটনা রােধে আমাদের যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে তা হলাে—
১. চালককে অবশ্যই প্রশিক্ষিত হতে হবে ;
২. ওভার টেকিং প্রতিযােগিতা থেকে চালকদের বিরত থাকতে হবে ;
৩. গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত কি না , তা পরীক্ষা করে তারপর গাড়ির অনুমতি দিতে হবে ;
৪. ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়ােগ করতে হবে ;
৫. গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়ােজনে সীমা লনকারীদের শাস্তির বিধান বাস্তবায়ন করতে হবে ;
৬. গাড়িচালক এবং পথচারী উভয়কে সচেতন হতে হবে ।
সুধীবৃন্দ ,
উল্লিখিত সুপারিশমালা যদি যথাযথভাবে মেনে চলতে পারি তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে আমরা অনেকাংশে রক্ষা পাব । আজকের আলােচনাসভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য আপনাদের সবাইকে আবারও ধন্যবাদ জানিয়ে এবং সুস্থতা কামনা করে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি ।