গুগল নিউজ এ আমাদের অনুসরণ করুন। Google News!

বাংলা ব্যাকরণ ও ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব

ব্যাকরণ ' শব্দটি সংস্কৃত । শব্দটির ব্যুৎপত্তি : বি + আ +‌/কৃ + অন ।যার অর্থ— বিশেষভাবে বিশ্লেষণ।ব্যাকরণে ভাষার অভ্যন্তরীণ নিয়ম বিশেষভাবে বিশ্লেষণ হয়

বাংলা ব্যাকরণ ও ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব


ব্যাকরণ ' শব্দটি সংস্কৃত । শব্দটির ব্যুৎপত্তি : বি + আ +‌√কৃ + অন । যার অর্থ— বিশেষভাবে বিশ্লেষণ। ব্যাকরণে ভাষার অভ্যন্তরীণ নিয়ম বা শৃঙ্খলা বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করা হয় । পৃথিবীতে কয়েক হাজার ভাষা রয়েছে । প্রত্যেক ভাষারই রয়েছে নিজস্ব ধ্বনি ( sound ) , শব্দ ( word ) , বাক্য ( sentence ) ও অর্থ ( Meaning ) । ভাষার এসব ধ্বনি কীভাবে উচ্চারিত হয় , শব্দ কীভাবে গঠিত ও রূপান্তরিত হয় এবং এই শব্দ কীভাবে বিন্যস্ত হয়ে বাক্যে পরিণত হয় তা নির্দেশ করাই ব্যাকরণের কাজ । ভাষাকে অবলম্বন করেই ব্যাকরণের সৃষ্টি । ভাষা সৃষ্টি হয়েছে আগে , ব্যাকরণ এসেছে ভাষার পথ ধরে । ভাষার গতি - প্রকৃতি , তার স্বরূপ , ধরন - ধারণ ইত্যাদি বিষয় ব্যাকরণে উল্লেখ থাকে । অর্থাৎ ভাষার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা করাই ব্যাকরণের কাজ । সেজন্যই ব্যাকরণকে বলা হয় ভাষার সংবিধান । পণ্ডিতেরা বিভিন্নভাবে ব্যাকরণের সংজ্ঞার্থ নির্ণয় করেছেন । এখানে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হলাে :

১ . যে বিদ্যার দ্বারা কোনও ভাষাকে বিশ্লেষণ করিয়া তাহার স্বরূপটি আলােচিত হয় এবং সেই ভাষার পঠনে ও লিখনে এবং তাহাতে কথােপকথনে শুদ্ধরূপে তাহার প্রয়ােগ করা যায় , সেই বিদ্যাকে সেই ভাষার ব্যাকরণ বলে । [ড . সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ]

২ . যে শাস্ত্রের দ্বারা ভাষাকে বিশ্লেষণ করিয়া ইহার বিবিধ অংশের পারস্পরিক সম্বন্ধ নির্ণয় করা যায় এবং ভাষা - রচনাকালে আবশ্যক মতাে সেই নির্ণীত তত্ত্ব ও তথ্য - প্রয়ােগ সম্ভবপর হইয়া উঠে , তাহার নাম ব্যাকরণ । [ড . মুহম্মদ এনামুল হক]

৩ . যে শাস্ত্রে কোনাে ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়ােগবিধি বিশদভাবে আলােচিত হয় , তাকে ব্যাকরণ বলে । [মুনীর চৌধুরী ও মােফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ]

৪ . এখন ব্যাকরণ বা গ্রামার বলতে বােঝায় এক শ্রেণির ভাষা বিশ্লেষণাত্মক পুস্তক যাতে সন্নিবিষ্ট হয় বিশেষ বিশেষ ভাষার শুদ্ধ প্রয়ােগের সূত্রাবলি । [ডি . হুমায়ুন আজাদ]


বাংলা ভাষার ব্যাকরণ

বিশিষ্ট ভাষাবিজ্ঞানী ড . মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ব্যাকরণের সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে : “ যে শাস্ত্র জানিলে বাঙ্গালা ভাষা শুদ্ধরূপে লিখিতে , পড়িতে ও বলিতে পারা যায় , তাহার নাম বাঙ্গালা ব্যাকরণ ।

ড . সুকুমার সেনের মতে , “ যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার স্বরূপ প্রকৃতির বিচার , বিশ্লেষণ এবং যে শাস্ত্রে জ্ঞান থাকলে বাংলা ভাষা শুদ্ধরূপে বলতে ও লিখতে পারা যায় তাকে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বলে ।

মুনীর চৌধুরী ও মােফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর মতে , যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠনপ্রকৃতি ও স্বরূপ বিশ্লেষিত হয় এবং এদের সম্পর্ক ও সুষ্ঠু প্রয়ােগবিধি আলােচিত হয় , তা - ই বাংলা ব্যাকরণ ।

উল্লিখিত ব্যাকরণ ও বাংলা ব্যাকরণের সংজ্ঞাগুলাে বিশ্লেষণ করলে আমরা বুঝতে পারি , বাংলা ব্যাকরণ হচ্ছে সেই শাস্ত্র , যাতে সন্নিবিষ্ট থাকে বাংলা ভাষা শুদ্ধভাবে প্রয়ােগের সূত্রাবলি ।


বাংলা ব্যাকরণের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ

বাংলা ভাষায় ব্যাকরণ চর্চার ইতিহাস সংস্কৃত ব্যাকরণের মতাে পুরনাে নয় । ইউরােপীয় বণিক সম্প্রদায় ও মিশনারিরা খ্রিষ্টধর্ম প্রচার ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা লাভের প্রয়ােজনে বাংলা ভাষা শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করেন । তারাই বাংলা ভাষার লিখিত ব্যাকরণের পথপ্রদর্শক । বাংলা ভাষার প্রথম নিদর্শন চর্যাপদ রচনাকালের প্রায় এক হাজার বছর পর বাংলা ব্যাকরণ চর্চার সূত্রপাত ঘটে বিদেশিদের মাধ্যমে । সর্বপ্রথম ১৭৩৪ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজ পাদ্রি মনােএল দা আসসুম্পসাঁও ( Monoel da Assummpsaw ) রচনা করেন দ্বিভাষিক ও খণ্ডিত ব্যাকরণ । ১৭৪৩ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে এ গ্রন্থটি রােমান ভাষায় প্রকাশিত হয় । ভােকাবুলারিও এম ইদিওমা বেনগল্লা , ই পর্তুগিজ : দিভিদিদো এম দুয়াস পার্তেজ ’ ( Vocabolario em idioma Bengalla , e portuguez : | dividido em duas partes ) নামের এ গ্রন্থটি ছিল দুটি অংশে বিভক্ত । প্রথম অংশে ব্যাকরণের একটি সংক্ষিপ্তসার এবং দ্বিতীয়াংশে ছিল বাংলা - পর্তুগিজ ও পর্তুগিজ - বাংলা শব্দাভিধান ।

আসসুম্পসাঁওর শব্দকোষ ও ব্যাকরণ প্রকাশের তিন দশক পর ১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে হুগলি থেকে প্রকাশিত হয় । ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেডের ( Nathaniel Brassey Halhed ) ব্যাকরণ A Grammar of the Bengal Language ' । হ্যালহেডের গ্রন্থটি সম্পূর্ণ ইংরেজিতে রচিত হলেও চার্লস উইলকিনসন ও পানন কর্মকারের যৌথ প্রচেষ্টায় এই বইটিতেই প্রথম বাংলা হরফ মুদ্রিত হয় ( কেবল উদাহরণগুলাে ) । আঠারাে শতকে রচিত বাংলা ব্যাকরণের এ দুটি গ্রন্থ ছাড়া আর কোনাে গ্রন্থের পরিচয় পাওয়া যায়নি । উনিশ শতকের গােড়া থেকে শুরু হয় বাংলা ও ইংরেজি ভাষার ব্যাকরণ প্রণয়নের অবিরাম ধারা ।

উইলিয়াম কেরির ইংরেজিতে লেখা বাংলা ভাষার ব্যাকরণ প্রকাশিত হয় ১৮০১ সালে । ১৮২০ সালে প্রকাশিত হয় কিথের ব্যাকরণ । ১৮২৬ সালে প্রথম বাঙালি হিসেবে রাজা রামমােহন রায় বাংলা ভাষার ব্যাকরণ লেখেন ইংরেজি ভাষায় । তাঁর মৃত্যুর পর ১৮৩৩ সালে বাংলায় অনূদিত ‘ গৌড়ীয় ব্যাকরণ ’ নামে কলকাতার স্কুল বুক সােসাইটি থেকে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় । এর পর থেকে বহু বাঙালি পণ্ডিত বাংলা ব্যাকরণের নানা দিক নিয়ে গবেষণা করেন । ড . মুহম্মদ শহীদুল্লাহ , ড . সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় , ড . সুকুমার সেন , ড . মুহম্মদ এনামুল হক , মুহম্মদ আবদুল হাই প্রমুখ পণ্ডিত বাংলা ব্যাকরণের বিভিন্ন বিষয়ে অবদান রেখেছেন

তবে এই দু'শাে বছরের ব্যাকরণ চর্চায় মূলত লাতিন , ইংরেজি ও সংস্কৃতের মিশ্রণ লক্ষণীয় । এ ব্যাকরণগুলােতে বাংলা ভাষার সূত্র অন্বেষণ করা হয়েছে ইংরেজি ও সংস্কৃত ব্যাকরণের কাঠামােতে । প্রায় শতাধিক বছর আগেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দাবি তুলেছিলেন বাংলা ভাষার নিজস্ব ব্যাকরণের । এই নিয়ে বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার বিদগ্ধ পণ্ডিতজনেরা নিরন্তর গবেষণা করেছেন । ২০১১ সালে বাংলাদেশের বাংলা একাডেমির সর্বাত্মক প্রয়াস ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলা আকাদেমির সহযােগিতায় ড . রফিকুল ইসলাম ও ড . পবিত্র সরকার সম্পাদিত ' প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ' প্রকাশিত হয় । বাংলা ভাষার নিজস্ব ব্যাকরণ প্রণয়নের ক্ষেত্রে গ্রন্থটি এক যুগান্তকারী প্রয়াস ।


বাংলা ভাষার ব্যাকরণের পরিধি

ব্যাকরণে যেসব বিষয় আলোচিত হয় , তার সার্বিক দিকগুলােই ব্যাকরণের পরিধি । ব্যাকরণের প্রধান কাজই হচ্ছে ভাষার শুদ্ধাশুদ্ধি নিরূপণ ও ভাষাকে সুশৃঙ্খল রাখা । প্রত্যেক ভাষারই চারটি মৌলিক উপাদান থাকে , যার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় ব্যাকরণের কাঠামাে । ভাষার প্রধান চারটি উপাদান হলে : ক . ধ্বনি ( Sound ) , খ . শব্দ ( Word ) , গ . বাক্য ( Sentence ) ও ঘ . অর্থ ( Meaning )

এখানে একটি ছকের মাধ্যমে তা স্পষ্ট করা হলাে:-

বাংলা ব্যাকরণ ও ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব

পৃথিবীর অন্যান্য সমৃদ্ধ ভাষার মতাে বাংলা ভাষাতেও এই চারটি উপাদান বিদ্যমান । আর এগুলাের ওপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হয়েছে বাংলা ব্যাকরণের পরিধি বা আলােচ্য বিষয় । বাংলা ব্যাকরণের প্রধান আলােচ্য বিষয় চারটি । এগুলাে হলাে : ক . ধ্বনিতত্ত্ব ( Phonology ) , খ . রূপতত্ত্ব ( Morphology ) , গ . বাক্যতত্ত্ব ( Syntax ) ও ঘ . অর্থতত্ত্ব ( Semantics )

এ চারটি প্রধান আলােচ্য বিষয় ছাড়াও কোনাে কোনাে পণ্ডিত অভিধানতত্ত্ব , ছন্দ ও অলংকারকে বাংলা ব্যাকরণের আলােচ্য বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন । বাংলা ব্যাকরণের পরিধিভুক্ত প্রধান চারটি আলােচ্য বিষয় সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে ।

ক . ধ্বনিতত্ত্ব : ধ্বনিতত্ত্ব বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলােচ্য বিষয় । এখানে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত ধ্বনি , ধ্বনির পরিচয় , উচ্চারণ ও উচ্চারণের স্থান , উচ্চারণরীতি , উচ্চারণের বৈশিষ্ট্য , ধ্বনির মিলন বা সন্ধি , ধ্বনির পরিবর্তন , বর্ণের পরিচয় , বর্ণের বিন্যাস , বানান ইত্যাদি বিষয় আলােচিত হয় ।

খ . রূপতত্ত্ব : বাক্যে ব্যবহৃত শব্দ বা পদের নানা বিষয় আলােচিত হয় রূপতত্ত্বে । শব্দের ব্যুৎপত্তি , শব্দের গঠন ও পরিবর্তন , সমাস , প্রত্যয় , উপসর্গ , লিঙ্গ , বচন , কারক , বিভক্তি , ক্রিয়ামূল বা ধাতুরূপ , ক্রিয়ার কাল ও পক্ষ , বিপরীতার্থক শব্দ , সমার্থক শব্দ , পারিভাষিক শব্দ ইত্যাদি বিষয়গুলাে রূপতত্ত্বের আলােচ্য বিষয় ।

গ . বাক্যতত্ত্ব : ধ্বনি থেকে শব্দ , শব্দ থেকে বাক্য । বাক্য হলাে মনের ভাব প্রকাশক ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টির ধারাবাহিক বিন্যাস । বাক্যতত্ত্বে সেই বাক্যের গঠন , শ্রেণিবিভাগ , পরিবর্তন , পদক্রম আলােচিত হয় । এ ছাড়াও উক্তি , বাচ্য , বাগধারা , বাক্য সংকোচন , বিরাম বা যতিচিহ্ন ইত্যাদি বিষয় এ অংশে আলােচিত হয়ে থাকে ।

ঘ . অর্থতত্ত্ব / বাগর্থতত্ত্ব : শব্দ ও বাক্যের অর্থ বিষয়ক নানা দিক আলােচিত হয়ে থাকে অর্থতত্ত্বে । শব্দ ও বাক্যের অর্থ বিচার , অর্থের প্রকারভেদ ( মুখ্যার্থ , গৌণার্থ , ব্যঞ্জনার্থ ) ইত্যাদি বিষয়গুলাে অর্থতত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত ।


ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব

যেকোনাে ভাষার শুদ্ধাশুদ্ধি নিরূপণের জন্য ব্যাকরণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে । অনেকে মনে করেন , ব্যাকরণ না জেনেও ভাষা শুদ্ধভাবে আয়ত্ত করা যায় । এ ধারণা পুরােপুরি ঠিক নয় । কারণ , ব্যাকরণ না জেনে ভাষাকে শুদ্ধরূপে প্রয়ােগ করতে হলে একটি আদর্শ ভাষা - পরিবেশ দরকার । কিন্তু বাস্তবে সেরকম একটা আদর্শ ভাষা - পরিবেশ পাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় । কেননা , ভাষা নিয়ত পরিবর্তনশীল । অঞ্চলভেদে একই ভাষার রয়েছে নানা রকম ভিন্নতা । তা ছাড়া সমাজে অহরহ ভাষার ভুল প্রয়ােগ বা অপপ্রয়ােগ হচ্ছে । শিশুরা বেড়ে উঠছে এই ত্রুটিপূর্ণ ভাষিক পরিবেশে । সুধীজন ও গণমাধ্যমে অনুসৃত কথ্য বাচনভঙ্গির নানা বৈচিত্রের একটি সমন্বিত রূপই প্রমিত বাংলা । একজন বাঙালি হিসেবে আমাদের প্রমিত বাংলা শেখার প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে । এই প্রমিত বাংলা বেশিরভাগ বাঙালির জন্মগত বা মায়ের ভাষা নয় । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে , অফিস আদালতে , গণমাধ্যমে এবং প্রয়ােগশিল্পে প্রমিত বাংলার মৌখিক ব্যবহার ব্যাপক লক্ষণীয় । কিন্তু সমাজজীবনের নানা ক্ষেত্রে আমরা উচ্চারণ , শব্দ চয়ন , বাক্য গঠন ছাড়াও নানাবিধ ভাষাগত শিষ্টাচার লঙ্ঘনের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়ােগ বা ভুল প্রয়ােগ ঘটাই । ভাষার প্রতি মমত্ববােধের পাশাপাশি ব্যাকরণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকলে এই অপপ্রয়ােগ বা ভুল প্রয়ােগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ।

একটি ভাষার স্বরূপ ও প্রকৃতি জানার ক্ষেত্রে ব্যাকরণ প্রধান সহায়ক ভূমিকা পালন করে । ভাষার আজিক , গঠনশৈলী , বিভিন্ন রীতিনীতি জানতে হলে ব্যাকরণের প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য । উচ্চারণ ও বানান হলাে ভাষার গুরুত্বপূর্ণ দুটি দিক । ভাষা লেখার জন্য যেমন বর্ণের প্রয়ােজন , তেমনি উচ্চারণের জন্য প্রয়ােজন ধ্বনির । এই বর্ণ ও ধ্বনিগুলাের সঠিক স্থাপন , উচ্চারণের নিয়ম ব্যাকরণের সহায়তা ছাড়া জানা সম্ভব নয় । তা ছাড়া ভাষার প্রমিত বানানরীতি জানতে হলে ব্যাকরণ পাঠ আবশ্যক ।

শব্দ গঠন , ব্যবহারবিধি ও শব্দের সঠিক অর্থ নিরূপণের জন্য ব্যাকরণের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা । আমরা জানি প্রত্যয় , উপসর্গ , সন্ধি , সমাস হলাে শব্দ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম । ব্যাকরণিক জ্ঞান ছাড়া এইসব মাধ্যমে নতুন শব্দ গঠন করা একেবারেই অসম্ভব । তা ছাড়া শব্দের সঠিক ব্যবহার , ব্যুৎপত্তি ও অর্থ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ব্যাকরণিক জ্ঞান প্রয়ােজন ।

কেবল শব্দই নয় ; বাক্য গঠন ও বাক্যের অর্থ প্রকাশের ক্ষেত্রেও ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব রয়েছে । সঠিক , সুন্দর ও শ্রুতিমধুর বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে ব্যাকরণিক জ্ঞান দরকার । একটি বাক্যে সাধারণত তিন ধরনের অর্থ নিহিত থাকে : সাধারণ অর্থ , ব্যঞ্জনার্থ ও লক্ষণার্থ । এসব অর্থ সৃষ্টি , অনুধাবন ও প্রয়ােগের ক্ষেত্রে ব্যাকরণের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ।

একটি ভাষার সমৃদ্ধ উপাদান হচ্ছে সাহিত্য । সাহিত্যের রয়েছে নানা শাখা— কবিতা , গল্প , উপন্যাস , নাটক , প্রবন্ধ , গান ইত্যাদি অনেক রকম সৃষ্টি । এইসব সাহিত্যকর্মের নিয়ম - নীতি , রচনা কৌশল , ছন্দ - অলংকার প্রয়ােগ এবং নানারকম বিচার - বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব অনস্বীকার্য । মােটকথা , ভাষাকে শুদ্ধরূপে বলতে , লিখতে ও অনুধাবন করতে হলে ব্যাকরণ পাঠ অপরিহার্য ।


আরো পড়ুন:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কুকি সম্মতি
আমরা ট্রাফিক বিশ্লেষণ করতে, আপনার পছন্দগুলি মনে রাখতে এবং আপনার অভিজ্ঞতাকে অপ্টিমাইজ করতে এই সাইটে কুকিজ পরিবেশন করি৷
ওহফ্!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে ইন্টারনেটের সাথে সংযোগ করুন এবং আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
বিজ্ঞাপন ব্লক সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা সনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷
বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হয়, আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইনে আমাদের ওয়েবসাইটকে সাদা তালিকাভুক্ত করার অনুরোধ করছি।