-->

সন্ধি কাকে বলে । সন্ধির শ্রেণীবিভাগ স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গ সন্ধির পার্থক্য | বাংলা ব্যাকরণ

সন্ধি


সন্ধি শব্দের অর্থ মিলনপাশাপাশি দু'টি ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে । যেমন- বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয় । এখানে ‘ বিদ্যা ’ শব্দের সাথে “ আলয় ’ শব্দের মিলন ঘটেছে । সুতরাং এ ধরনের ধ্বনির মিলনের নামই সন্ধি । 

সন্ধির উদ্দেশ্য -সন্ধির উদ্দেশ্য হল উচ্চারণ সহজতর করা । যেমন- বিদ্যা ও আলয় ' উচ্চারণে যে আয়াস বা শ্রমের প্রয়ােজন , বিদ্যালয় ' শব্দটি তার চেয়ে অনেক অল্প আয়াসে উচ্চারিত হয় । সন্ধি ভাষাকে সহজতর করে ও উচ্চারণে ধ্বনিমাধুর্য সৃষ্টি করে । সুতরাং উচ্চারণে আয়াস ও ধ্বনিমাধুর্য সৃষ্টিই সন্ধির মূল উদ্দেশ্য ।

 তবে দু'টি স্বরধ্বনি নিকটবর্তী হলেও যদি পৃথক পৃথক ভাবে উচ্চারিত হয় , তবে সে ক্ষেত্রে সন্ধি হয় না । যেমন- অনুমতি - অনুসারে । আবার শ্রুতিমধুরতাও সন্ধির বিচার্য  বিষয় । 

যে দু'টি ধ্বনির মধ্যে সন্ধি হবে , তাদের মধ্যে অবশ্যই পরস্পর সম্পর্ক থাকা বাঞ্ছনীয় । বিদ্যার সঙ্গে আলয়ের ( আলয় অর্থ আশ্রয় বা স্থান ) সম্পর্ক আছে । সুতরাং এ দু'টির মধ্যে সন্ধি হতে পারে , কিন্তু বিদ্যা + আলু = বিদ্যালু - এরূপ সম্পর্কহীন ধ্বনির সন্ধি হতে পারে না । 

সন্ধি প্রধানতঃ দু ' প্রকার । যথা- ( ১ ) স্বরসন্ধি ও ( ২ ) ব্যঞ্জন সন্ধি । 

স্বরসন্ধি - স্বরবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের যে সন্ধি বা মিলন হয় , তাকে স্বরসন্ধি   বলে।

ব্যঞ্জন সন্ধি - ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের বা ব্যঞ্জনবর্ণের যে সন্ধি হয় , তাঁকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে । 

নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি- সন্ধির নিয়ম না মেনে যে সন্ধি হয় , তাকে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে ।

বিসর্গ সন্ধি - বিসর্গের সাথে স্বরধ্বনি বা ব্যঞ্জন ধ্বনির যে সন্ধি হয় , তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে । বিসর্গ সন্ধি ব্যঞ্জন সন্ধির অন্তর্গত ।

 

স্বরসন্ধি

 ১। অ - কার কিংবা আকারের পর অ - কার কিংবা আ - কার থাকলে উভয়ে মিলে আ - কার হয় এবং আ - কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয় । যথা-

অ + অ = আ                  নব + অন্ন = নবান্ন

অ + আ = আ                 সিংহ + আসন = সিংহাসন

অ + অ = আ                  যথা + অর্থ = যথার্থ

আ + আ = আ                মহা- + আশয় = মহাশয়

এরূপ —নরাধম , হিতাহিত , হিমালয় , দেবালয় , মহা , কারাগার , বিদ্যালয় , রত্নাকর , আশাতীত ইত্যাদি । 

। অ - কার কিংবা আকারের পর ই - কার কিংবা ঈ - কার থাকলে উভয়ে মিলে এ - কার হয় , এবং এ - কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয় । যথা-

অ + ই = এ                   শুভ + ইচ্ছা = শুভেচ্ছা 

আ + ই = এ                   যথা + ইষ্ট = যথেষ্ট 

অ + ঈ = এ                    গণ + ঈশ = গণেশ 

আ + ই = এ                    রমা + ঈশ রমেশ 

এরূপ - স্বেচ্ছা , দেবেন্দ্র , নরেশ , মহেশ , যথেচ্ছা , নরেন্দ্র ইত্যাদি ।

 ৩। অ - কার কিংবা আ-কারের পর উ - কার কিংবা ঊ - কার থাকল উভয়ে মিলে ও - কার হয় , এবং ও - কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয় । যথা-

অ + উ = ও                   সূর্য + উদয় = সূর্যোদয় 

আ + উ = ও                  মহা + উৎসব = মহােৎসব 

অ + ঊ = ও                   গৃহ + উর্ধ্ব = গৃহোর্ধ্ব 

আ + ঊ = ও                  গঙ্গা + উর্মি = গঙ্গোমি  

 এরূপ — হিতােপদেশ , পরােপকার , প্রশ্নোত্তর , নবােঢ়া ফলােদয় , চলােমি , যথােচিত , যথােপযুক্ত ইত্যাদি ।

 ৪। অ - কার কিংবা আ-কারের পর ঋ - কার থাকলে উভয়ে মিলে অর হয় এবং অর ' বেফ রূপে পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয় । যথা-

অ + ঋ = অর                    দেব + ঋষি = দেবর্ষি 

আ + ঋ = অর                    মহা + ঋষি = মহর্ষি 

এরূপ - রাজর্ষি , সপ্তর্ষি , উত্তমর্ণ , অধমর্ণ ইত্যাদি । 

৫। অ - কার কিংবা আ-কারের পর ‘ ঋত ' শব্দ থাকলে উভয়ে মিলে আর হয় , এবং বানানে পূর্ববর্তী বর্ণে আ ও পরবর্তী বর্ণে রেফ হয় । যথা- 

অ + ঋ = আর                  শীত + ঋত = শীতার্ত 

আ + ঋ = আর                 ক্ষুধা + ঋত = ক্ষুধার্ত 

 এরূপ — ভয়ার্ত , তৃষ্ণার্ত , পিপাসার্ত ইত্যাদি ।

৬। অ - কার কিংবা আ - কারের পর এ – কার কিংবা ঐ - কার  উভয়ে মিলে ঐ - কার হয় , এবং ঐ– কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয় । যথা- 
অ + এ = ঐ                    জন + এক = জনৈক 
আ + এ = ঐ                   তথা + এব = তথৈব
অ + ঐ = ঐ                   মত + ঐক্য = মতৈক্য
আ + ঐ = ঐ                  মহা + ঐশ্বর্য = মহৈশ্বর্য 
৭। অ - কার কিংবা আ-কারের পর , ও - কার কিংবা ঔ - কার থাকলে উভয়ে মিলে ঔ - কার হয় , এবং ঔ - কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয় । যথা-
অ + এ = ঔ                     বন + ওষধি = বনৌষধি 
আ + এ = ঔ                    মহ + ওষধি = মহৌষধি 
অ + ঔ = ঔ                    পম + ঔষধ = পরমৌধি 
আ + ঔ = ঔ                   মহা + ঔষধ = মহৌষধ
 
৮। ই - কার কিংবা ঈ - কারের পর ই - কার কিংবা ঈ - কার থাকলে উভয়ে মিলে ঈ - কার হয় , এবং ঈ - কার পূর্ববর্তী বর্ণে যুক্ত হয় । যথা- 
ই + ই = ই                       অতি + ইত = অতীত 
ই + ঈ = ঈ                     পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষা 
ঈ + ই = ঈ                     রথী + ইন্দ্র = রথীন্দ্র 
ঈ- + ঈ = ঈ                   সতী + ঈশ = সতীশ 
এরূপ – অতীব , রবীন্দ্র গিরীশ , সতীন্দ্র , প্রতীক্ষা , ক্ষিতীশ ইত্যাদি ।
 ৯। ই - কার কিংবা ঈ - কারের পর ই ও ঈ ভিন্ন স্বরবর্ণ থাকলে ই বা ঈ - কারের স্থানে ‘ য ’ ফলা হয় , এবং য ফলা পূর্ববর্তী বর্ণে যুক্ত হয় । যেমন- 
ই + অ = য + অ ( )               অতি + অন্ত = অত্যন্ত
ই + আ = য + আ                ইতি + আদি=  ইত্যাদি 
ই + উ = য + উ                    প্রতি + উক্তি = প্রত্যুক্তি 
ই + ঊ = য + ঊ                   প্রতি + ঊষ = প্রত্যুষ 
ই + এ = য + এ                  প্রতি + এক = প্রত্যেক 
এরূপ — প্রত্যহ , অত্যধিক , প্রত্যাশা , অত্যাশ্চর্য , যদ্যপি ইত্যাদি ।।
১০। উ - কার কিংবা ঊ - কারের পর উ - কার কিংবা ঊ - কার থাকলে উভয়ে মিলে ঊ - কার হয় , এবং ঊ - কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয় । যেমন- 
উ + উ = ঊ                     মরু + উদ্যান = মরূদ্যান 
ঊ + উ = ঊ                    কটু + উক্তি = কটুক্তি 
ঊ + ঊ = ঊ                    ভূ- + উর্ধ্ব = ভূর্ধ্ব
 ১১। উ - কার কিংবা ঊ - কারের পর উ - কার কিংবা ঊ - কার ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণ থাকলে উ বা ঊ - কারের স্থানে "ব্" হয় , এবং ব - ফলা পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয় । যেমন-
উ + অ = ব + অ                    সু + অল্প = স্বল্প 
উ + আ = ব + আ                  সু + আগত = স্বাগত 
উ + ঈ = ব + ঈ                      তনু + ঈ = তন্বী 
উ + এ = ব + এ                     অনু + এষণ = অন্বেষণ 
১২। স্বরবর্ণ পরে থাকলে এ স্থানে ' অয় ' , ঐ স্থানে ' আয় ' , ও স্থানে অব "  এবং ঐ - স্থানে ‘ আব ' হয় , পরবর্তী স্বরবর্ণ অ ব্য আ - এর সাথে পূর্ববর্তী য় বা ব যুক্ত হয় । যেমন— 
এ + অ = অয় + অ                নে + অন = নয়ন 
ঐ + অ = আয় + অ               গৈ + অক = গায়ক 
ও + অ = অব + অ                পাে + অন = পবন 
ঔ + অ = আব + অ              পৌ + অক = পাবক 
এরূপ - লবণ ( লাে + অন ) , গবাদি ( গো + আদি ) , পবিত্র ( পেইত্র ) , গবেষণা ( গাে + এষণা ) , ভাবুক ( ভৌ + উক ) , শয়ন ( শে + অন ) , নায়ক ( নৈ + অক ) ইত্যাদি । 
১৩। ঋ ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণ পরে থাকিলে ঋ এর স্থানে ‘ র ’ হয় এবং র - ফলা পূর্ববর্তী বর্ণে যুক্ত হয় । যেমন- 
ঋ + অ = র                     পিতৃ + অরি = পিত্ররি 
 + আ = রা                   পিতৃ + আলয় = পিত্রালয়
১৪। কতকগুলাে সন্ধি কোন নিয়ম অনুসারে হয় না । এগুলােকে নিপাতনে সিন্ধ বলে । যেমন-
কুল + অটা = কুলটা            অন্য + অন্য = অন্যান্য
গো + অক্ষ = গবাক্ষ             গাে + ইন্দ্র = গবেন্দ্র
প্র + ঊঢ় = প্রৌঢ়                   মার্ত + অণ্ড =মার্তণ্ড 

ব্যঞ্জন সন্ধি

 ১। চ কিংবা ছ পরে থাকলে ত ও দ এর স্থানে চ হয় ।
ত + চ = চ্চ                  চলৎ + চিত্র = চলচ্চিত্র 
ত + ছ = চ্ছ                 উৎ + ছেদ = উচ্ছেদ 
দ + চ = চ্চ                  বিপদ + চিন্তা = বিপচ্চিন্তা 
দ + ছ = চ্ছ                 বিপদ +  ছায়া = বিপচ্ছয়া
এরূপ - শরচ্চন্দ্র , সচ্চরিত্র , উচ্চারণ , তচ্ছায়া , তচ্ছবি , সচ্চিন্তা , সচ্ছাত্র , সচ্চিদানন্দ ইত্যাদি । 
২। জ কিংবা ঝ পরে থাকলে ত ও দ এর স্থানে জ হয় । যথা- 
ত + জ = জ্জ              সৎ + জন = সজ্জন 
দ + জ = জ্জ              বিপদ + জনক = বিপজ্জনক
ত + ঝ = জ্ঝ               কুৎ + ঝটিকা = কুজ্ঝটিকা 
এরূপ - উজ্জ্বল , তজ্জন্য , যাবজ্জীবন , জগজ্জীবন , বিপজ্জাল ইত্যাদি । 
৩। ট কিংবা ঠ এর পরে থাকলে ত ও দ এর স্থানে ট হয় এবং ড কিংবা ঢ পরে থাকলে ত ও দ এর স্থানে ড হয় । যেমন- 
ত + ট = ট্ট                     বৃহৎ + টীকা = বৃহট্টীকা 
দ + ট =ট্ট                       তদ্ + টীকা = তট্টীকা
ত + উ = ড্ড                   উৎ + ডীন = উড্ডীন 
ত + ঢ = ড্ঢ                   তৎ + ঢক্কা = তড্ঢক্কা
৪। ন কিংবা ম পরে থালে পদের অন্তস্থিত বর্গের প্রথম বর্ণস্থানে সেই বর্গের পঞ্চম বর্ণ হয় । ( অর্থাৎ ক স্থানে ঙ , ত স্থানে ন হয় । )  যেমন- 
নিক + নির্ণয় = দিঙনির্ণয়         মৃৎ + ময় = মৃন্ময় 
বাক + ময় = বাঙময়                জগৎ + নাথ = জগন্নাথ 
তৎ + ময় = তন্ময়                    চিৎ + ময় = চিন্ময়
এরূপ— তন্মধ্যে , উন্নীত , তন্মাত্রা , অগ্নিমিত্ত , উন্নয়ন ইত্যাদি । 
৫। ত - কার কিংবা দ – কারের পর ল থাকলে ত ও দ স্থানে ল হয় । যথা-
উৎ + লাস = উল্লাস              তদ + লিখিত = তল্লিখিত 
উৎ + লেখ = উল্লেখ             বিপদ  + লাভ = বিপল্লাভ 
উৎ + লিখিত = উল্লিখিত 
৬। শ পরে থাকলে ত ও দ স্থানে চ এবং শ স্থানে ছ হয় । যেমন-
ত + শ = চ + ছ =চ্ছ              উৎ + শ্বাস = উচ্ছ্বাস
ত + শ = চ + ছ = চ্ছ            তদ + শ্ৰবণ = তচ্ছ্রবণ  
এরূপ - চলচ্ছক্তি , উচ্ছল , আচ্ছান্তি ইত্যাদি । 
। হ পরে থাকলে ত ও দ স্থানে দ এবং হ স্থানে ধ হয় । যেমন-
 ত + হ = দ + ধ = দ্ধ              উৎ + হার = উদ্ধার 
দ + হ = দ + ধ = দ্ধ               তদ + হিত = তদ্ধিত 
এরূপ – উদ্ধত , উদ্ধৃতি , জগদ্ধিত ইত্যাদি । 
৮। স্বরবর্ণের পরে ছ থাকলে ছ এর  স্থানে চ্ছ হয় । যেমন-
 পরি + ছন্ন = পরিচ্ছন্ন                 বি + ছেদ = বিচ্ছেদ 
পরি + ছেদ = পরিচ্ছেদ              তরু + -ছায়া = তরুচ্ছায় 
৯। স্বরবর্ণ , বর্গের তৃতীয় বা চতুর্থ বর্ণ কিংবা য , র , ল , ব , হ পরে থাকলে বর্গের প্রথম বর্ণ স্থানে সেই বর্গের তৃতীয় বর্ণ হয় । অর্থাৎ ক এর স্থানে গ , চ এর স্থানে জ , ট এর স্থানে ড , ত এর স্থানে দ এবং প এর স্থানে ব হয় । যেমন-
 দিক + অন্ত = দিগন্ত                জগৎ + বিখ্যাত = জগদ্বিখ্যাত
 বাক + ধারা = বাগধারা            উৎ + যােগ = উদ্যোগ 
ণিচ + অন্ত = ণিজন্ত                 অপ + জ = অব্জ 
ষট + যন্ত্র = ষড়যন্ত্র                   তৎ + রূপ = তজপ
১০। মূর্ধন্য ষ - এর পরে ত বা থ থাকলে ত এর স্থানে ট ও থ এর স্থানে ঠ হয় । যেমন-
তুষ + ত = তুষ্ট              ষষ্ + থ = যষ্ঠ
বৃষ + তি = বৃষ্টি             বলিষ + থ = বলিষ্ঠ
১১। য , র , ব কিংবা শ , স বা হ পরে থাকলে ম এর স্থানে অনুস্বর হয় । যেমন-
সম + বাদ = সংবাদ        সম্ + ম = সংযম
সম + সার = সংসার        কিম্বা = কিংবা
এরূপ — বারংবার , সংযােগ , সংশােধন , সংহার , অহংকার ইত্যাদি ।
ব্যতিক্রমঃ সম্রাট = ( সম্ + রাট )
১২। নাসিকা ধ্বনি ম - এর পর যে কোন বৰ্গীয় ধ্বনি থাকলে ম - ধ্বনিটি সেই বর্গের নাসিকা ধ্বনি হয় । যেমন-
সম + চয় = সঞ্চয়          সম + -গীত - সঙ্গীত
সম + তনি = সন্তান        সম + কল্প = সঙ্কল্প
এরূপ - সম্মান , সন্ধান , সন্ন্যাস ও সন্দর্শন ইত্যাদি । ব্যতিক্রম : - কিন্তু ত– এর পূর্বে ম থাকলে কেবল ন হয় । যেমন-
কিম্ + তু = কিন্তু            গম + তব্য = গন্তব
১৩। বর্গের প্রথম বা দ্বিতীয় কিংবা দন্ত্য - স পরে থাকলে দ অথবা ধ এর স্থানে ৎ হয় । যেমন-
দ + ত = ত + ত            তদ + কাল = তৎকাল
ধ + ত = ত + ত            ক্ষুধ + পিপাসা = ক্ষুৎপিপাসা
এরূপ - তৎপর , হৃৎকম্প , তৎসম , বিপৎপাত ইত্যাদি ।
১৪। চ - কার কিংবা জ – কারের পর ন থাকলে ন এর স্থানে ঞ হয় । যেমন-
চ + ন = চ + ঞ           যাচ + না = যচঞা
জ + ন = জ + ঞ        যজ + ন = যজ্ঞ
জ + ন = জ + ঞ        রাজ + নী = রাজ্ঞী
১৫। বিশেষ নিয়মে সাধিত কতকগুলাে সন্ধি । যেমন- 
পরি + কার = পরিষ্কার      সম + করি = সংস্কার
পরি + কত = পরিষ্কৃত       সম + কৃত = সংস্কৃত
উৎ + স্থাপন = উত্থাপন      উৎ + স্থান = উত্থান
১৬।নিম্নলিখিত সন্ধিগুলাে নিপাতনে সিদ্ধ অর্থাৎ নিয়ম বহির্ভূত ।যেমন-
আ + চর্য = আশ্চর্য          এক + দশ = একাদশ
গো + পদ = গোষ্পদ         তৎ + কর = তঙ্কর
বন + পতি = বনস্পতি      বৃহৎ + পতি = বৃহস্পতি
পর + পর = পরস্পর        মনস্ + ঈষা = মনীষা
ঘট + দশ = ষােড়শ          দিব্ + লােক = দ্যুলােক

বিসর্গ সন্ধি

১। চ কিংবা ছ পরে থাকলে বিসর্গ স্থানে শ হয় । যেমন-
নিঃ + চয় = নিশ্চয়        শিশ্নঃ + ছেদ = শিরচ্ছেদ
দুঃ + চিন্তা = দুশ্চিন্তা     দুঃ + ছেদ্য = দুচ্ছেদ্য 
২। ট কিংবা ঠ পরে থাকলে বিসর্গ স্থানে ষ হয় । যেমন –
ধনুঃ + টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার      নিঃ + ঠুর = নিষ্ঠুর
৩। ত কিংবা থ পরে থাকলে বিসর্গ স্থানে স হয় । যেমন-
নিঃ + তার = নিস্তার     মনঃ + তাপ = মনস্তাপ
দুঃ + তর = দুস্তর         ইতঃ + তত = ইতস্তত
বিঃ + তার =বিস্তার      দুঃ + থ = দুস্থ
৪। ক , খ , প , ফ পরে থাকলে অ - কার কিংবা আ-কারের পরস্থিত বিসর্গ স্থানে স হয় এবং অন্য স্বরের পরস্থিত বিসর্গ স্থানে ষ হয় । যেমন-
পুরঃ + কার = পুরস্কার      আবিঃ + কার = আবিষ্কার নমঃ + করি = নমস্কার       নিঃ + ফল — নিষ্ফল
ভাঃ + কর = ভাস্কর           নিঃ + পাপ — নিষ্পাপ
৫। বর্গের তৃতীয় , চতুর্থ , পঞ্চম বর্ণ কিংবা য , র , ল , ব , হ পরে থাকলে পূর্ববর্তী অ - কার ও তৎপরবর্তী বিসর্গ উভয়ে মিলে ও - কার হয় , এবং ও - কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয় । যেমন-
তিরঃ + ধান = তিরােধান    পুরঃ + হিত = পুরােহিত
মনঃ + রম = মনােরম         সরঃ + বর = সরোবর
মনঃ + যােগ = মনােযােগ    মনঃ + হর = মনােহর
৬। স্বরবর্ণ , বর্গের তৃতীয় , চতুর্থ , পঞ্চম বর্ণ কিংবা য , র , ল , ব , হ পরে থাকলে অ , আ ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণের পরস্থিত বিসর্গ স্থানে র হয় । যেমন-
নিঃ + ভয় = নির্ভক্স       অন্তঃ + গত = অন্তর্গত
দুঃ + নাম = দুর্নাম         দুঃ + গতি = দুর্গতি
৭। র - পরে থাকলে অ , আ ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণের পরবর্তী বিসর্গ স্থানে যে বর্ণ হয় , তা লােপ পায় এবং পূর্বের হ্রস্বস্বর দীর্ঘস্বর হয় । যেমন—
নিঃ + রােগ = নীরােগ       নিঃ + রস = নীরস
নিঃ + রব — নীরব           চক্ষুঃ + রােগ = চক্ষুরােগ
৮। অ - কার ভিন্ন অন্য স্বর পরে থাকলে কেবল বিসর্গের লােপ হয় এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী স্বরধ্বনি অবিকৃত বা অবিকল থাকে । যেমন-
অতঃ + এব = অতএব       যশঃ + ইচ্ছা = যশইচ্ছা
শিরঃ + উপরি = শিরউপরি
৯। কোন কোন ক্ষেত্রে সন্ধির বিধান নেই । যেমন-
প্রতঃ + কাল = প্রাতঃকাল   বাচঃ + পতি = বাচস্পতি ভাঃ + কর = ভাস্কর             অহঃ + অহ = অহরহ
অহঃ + নিশ = অহর্নিশ        মনঃ + কষ্ট = মনঃকষ্ট
শিরঃ + পীড়া = শিরঃপীড়া
১০। যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি স্ত , স্থ , স্প ইত্যাদি থাকলে বিসর্গ অবিকৃত থাকে বা লােপ হয় । যেমন —
নিঃ + স্তব্ধ = নিঃস্তব্ধ বা নিস্তব্ধ , নিঃ + স্পন্দ = নিঃস্পন্দ বা নিস্পন্দ ।
বিঃ দ্রঃ - আজকাল বাংলা বানানে অনেক ক্ষেত্রে বিসর্গ ব্যবহার না করার প্রবণতা দেখা যায় । যেমন — ইতস্তত , আপাতত , প্রধানত , বস্তুত , মূলত , সাধারণত , দুস্থ ইত্যাদি ।


আরো পড়ুন:
See Also :