Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Test link

বাংলা ভাষা ও এর রূপভেদ (বাংলা ব্যাকরণ )

পৃথিবীর সকল দেশের সকল মানুষ মনের ভাব প্রকাশের জন্য একই প্রকার ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি ব্যবহার করে না , বরং বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ভাষায় কথ

বাংলা ভাষা ও এর রূপভেদ

ভাষা- মনের ভাব প্রকাশের জন্য মানুষ যে সকল অর্থপূর্ণ সাঙ্কেতিক ধ্বনি উচ্চারণ করে , তাকে ভাষা বলে । পৃথিবীর সকল দেশের সকল মানুষ মনের ভাব প্রকাশের জন্য একই প্রকার ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি ব্যবহার করে না , বরং বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে । জাতির নাম অনুসারে ভাষার নামকরণ হয় । আরববাসীরা যে ভাষায় কথা বলে , তাকে আরবী ভাষা বলে । তেমনি ইংরেজরা যে ভাষায় কথা বলে , তাকে ইংরেজী ভাষা বলে । সুতরাং এক এক জাতির নাম অনুসারে পৃথিবীতে এক এক ভাষা প্রচলিত ।

বাংলা ভাষা- আমরা বাঙালী । আমরা যে ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করি , তাকে বাংলা ভাষা বলে। বাংলা অতি প্রাচীন ভাষা । তবে কোন ব্যক্তি বা জীবের মত ঠিক কোন সালে , কোন তারিখে এ ভাষার জন্ম হয়েছে , তা নির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয় । নদীর প্রবাহের মতই ভাষার প্রবাহ যুগ যুগ ধরে চলে আসে । প্রাচীন সাহিত্যের নিদর্শন হতে পণ্ডিতগণ অনুমান করেন যে , বাংলা ভাষার বয়স এক হাজার বছরেরও অধিক । কাজেই , বাংলা ভাষা যে অতি প্রাচীন , তাতে কোন সন্দেহ নেই । তবে বাংলা ভাষার প্রাচীন রূপ ও বর্তমান রূপ এক নয় । নানা পরিবর্তন ও বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা এর আধুনিক রূপ লাভ করেছে । বাংলা সাহিত্য আজ গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত । এ ভাষা আজ জগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষা হিসাবে সর্বজনস্বীকৃত ।

সাধু ও চলিত

ভাষা বাংলাভাষা বর্তমানে নিঃসন্দেহে একটি সমৃদ্ধভাষা । পৃথিবীর প্রত্যেকটি সমৃদ্ধ ভাষার মত বাংলাভাষারও দু'টি রূপ আছে-- একটি সাধু রূপ বা লেখ্য রূপ এবং অপরটি চলিত রূপ বা কথ্য রূপ ।

সাধুভাষাঃ বাংলা গদ্য সাহিত্যের সূচনা থেকে যে ভাষায় গ্রন্থাদি রচিত হয়ে আসছে , সেই রূপটি হলাে সাধু রূপ । এ ভাষায় সাহিত্য রচিত হত বলে একে সাহিত্যিক ভাষা বলে । মােটকথা , সাধারণ গদ্য সাহিত্যে ব্যবহৃত ভাষাই সাহিত্যিক ভাষা বা সাধু ভাষা ।

চলিত ভাষাঃ যে ভাষায় আমরা কথাবার্তা বলে থাকি , তাকে চলিত ভাষা বা কথ্য ভাষা বলে। অন্যদিকে কলকাতা ও ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের কথ্য ভাষা পরিমার্জিত হয়ে এখন সাহিত্যিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে । কলকাতা ও ভাগীরথী তীরবর্তী সেই আঞ্চলিক কথ্য ভাষা এখন সাহিত্যে আদর্শ চলিত ভাষা হিসে পরিচিত ।

সাধুভাষা ও চলিতভাষা সম্পর্কে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিম্নলিখিত উক্তিটি প্রণিধানযােগ্য – “ সাধুভাষা মাজাঘষা , সংস্কৃত ব্যাকরণ থেকে ধার করা অলঙ্কারে সাজিয়ে তোলা । চলিত ভাষার আটপৌরে সাজ নিজের চরকায় কাটা সুতাে দিয়ে বােনা । " সুতরাং কথ্য ভাষা অঞ্চল বিশেষে মানুষের মুখের ভাষা মাত্র । জেলাভেদে , এমন কি থানাভেদে , কথ্য ভাষার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে । চট্টগ্রামের বা সিলেটের কথ্য ভাষা অন্যান্য জেলাবাসীর নিকট দুর্বোধ্য , আবার বগুড়া বা দিনাজপুরের কথ্য ভাষা সিলেট বা চট্টগ্রামের অধিবাসীদের নিকট সহজবােধ্য নয় । অবশ্য চলিত ভাষা আজকাল গদ্য সাহিত্যে ও গল্প - উপন্যাসে ব্যবহৃত হচ্ছে সত্য , কিন্তু পঞ্চাশ বছর পূর্বেও বাংলা সাহিত্যের দরবারে চলিত ভাষার কোন স্থান ছিল না । সাধু ভাষা কোন নির্দিষ্ট স্থানের মুখের ভাষা নয়- এটা সমগ্র বাংলা ভাষা - ভাষীদের ভাব প্রকাশের সাধাৱণ রূপ ।

উল্লেখ্য যে , সাধু ও চলিত উভয় ভাষার মিশ্রণ মারাত্মক ক্ৰটি । পরীক্ষায় একই প্রশ্নের উত্তরে সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ দূষণীয় বলে গণ্য করা হয় । যেমন- আমি পড়া শেষ করে স্কুলে যাইব । বাক্যটি হবে - আমি পড়া শেষ করিয়া স্কুলে যাইব ( সাধুরূপ) , অথবা , আমি পড়া শেষ করে স্কুলে যাব ( চলিতরূপ ) । তবে সাধু ভাষার রচনায় একমাত্র প্রত্যক্ষ উক্তির প্রয়ােগে চলিত ভাষা ব্যবহার করা যায় । যেমন- বাবা আমাকে বলিলেন , “ শহরে গিয়ে তুমি কোথায় উঠবে ? " শুধু কবিতা রচনার ক্ষেত্রে সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ চলে ।

সাধু ভাষার বৈশিষ্ট্য

১।সাধু ভাষার গঠন বা রূপ অপরিবর্তিত ও সুনির্দিষ্ট , অঞ্চন বিশেষে এর রূপ পরিবর্তিত হয় না ।

২। সাধুরীতি সুনির্ধারিত ব্যাকরণের নিয়ম মেনে চলে ।

৩। সাধুভাষা গুরুগম্ভীর ও আভিজাত্যের অধিকারী ।

৪। সাধুরীতি নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতার অনুপযােগী ।

৫। সাধুরীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ এক পিশেষ গঠন পদ্ধতি মেনে চলে ।

৬। সাধু ভাষার চর্চা দেশের সর্বত্র প্রচলিত । তাই সকল অঞ্চলে সকল বাঙালীর পক্ষে এটা বুঝা ও লেখা সহজসাধ্য।

ভাষা প্রয়ােগের নিয়ম- কানুন বেঁধে দিয়ে ব্যাকরণ ভাষাকে নিয়ন্ত্রিত করলেও ব্যাকরণ আবার ভাষাকে অনুসরণ করে । ভাষার পরে ব্যাকরণের সৃষ্টি । তাই দেখা যায় , সতত ব্যবহারের ফলে ভাষা পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যাকরণেরও পরিবর্তন হয় ।

যে সকল বিষয় বাংলা ব্যাকরণের আলােচনার অন্তর্গত , তাদেরকে সাধারণতঃ তিন ভাগে ভাগ করা যায় । 

যথা-

( ১ ) ধ্বনিতত্ত্ব(Phonology)

( ২ ) রূপতত্ত্ব বা শব্দ প্রকরণ (Morphology)

( ৩ ) বাক্যতত্ত্ব বা বাক্য প্রকরণ (Syntax)

ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology)- মানুষের বাগযন্ত্র অর্থাৎ কণ্ঠনালী , জিহ্বা , তালু , দাঁত , মাড়ি , ঠোট ইত্যাদির সাহায্যে উচ্চারিত আওয়াজকে ধ্বনি ' বলে । যে সমস্ত চিহ্ন দ্বারা ধ্বনি নির্দেশ করা হয় , তাদেরকে বর্ণ বলেযেমন — অ , আ , ক , খ ইত্যাদি এক একটি বর্ণ ।

ধ্বনি (Sounds) - ধ্বনির উচ্চারণ - প্রণালী , উচ্চারণের স্থান , ধ্বনির প্রতীক বা বর্ণের বিন্যাস , ধ্বনির সংযােগ বা সন্ধি , ণ - ত্ব বিধান , ষ-ত্ব , বিধান ইত্যাদি বাংলা ব্যাকরণের ধ্বনিতত্ত্ব বিভাগের আলােচ্য বিষয় ।

রূপতত্ত্ব (Morphology)— এক বা একাধিক ধ্বনির সম্মেলনে বা মিলনে শব্দ তৈরি হয় । বাক্যে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দকে পদ বলে । বাক্যে ব্যবহৃত শব্দ বা পদের বিভিন্ন রূপের গঠন - প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা হয় বলে এ অংশকে রূপতত্ত্ব বলা হয় । সুতরাং শব্দ , শব্দের উৎপত্তি , শব্দের গঠন , বচন , লিঙ্গ , ক্রিয়ামূল , ক্রিয়ার কাল ও পুরুষ ইত্যাদি রূপতত্ত্ব বিভাগের আলােচ্য বিষয় ।

বাক্যতত্ত্ব(Syntax) – অর্থপূর্ণ শব্দসমষ্টিকে বাক্য বলে বাক্যের সঠিক গঠন - প্রণালী , বাক্যের মধ্যে শব্দ বা পদের স্থান বা ক্রম , পদের রূপ পরিবর্তন , বাক্যের বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয় ব্যাকরণের বাক্যতত্ত্ব বিভাগে আলােচিত হয় ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

© Abc Ideal School. All rights reserved. Developed by Jago Desain